আমি তখন সবে স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ি। গ্রাম্য পরিবেশে বড় হওয়া আমি একটু গুরুগম্ভীর স্বভাবের ছিলাম। বন্ধুদের তুলনায় কেমন যেন চুপচাপ, সবসময় সবার থেকে তফাতে থাকতাম। প্রেম-ভালোবাসার ধারে-কাছে যাইনি কখনও। এই কারণে ভাবিরা আমার পেছনে লেগেই থাকত, “তুই একটা মেয়েও পটাতে পারবি না রে? এই বয়সেও প্রেম হয়নি, ধ্যাত!”আমি শুধু মুচকি হাসতাম। ভেতরে ভেতরে একটু লজ্জা, একটু বিরক্তি—দুটোই মিশে থাকত। কিন্তু ভাবি তো আর মেনে নেয় না! যেই পায়, ক্ষেপাতে থাকে।একদিন দুপুরে ভাত খেয়ে ঘুমুচ্ছি, হঠাৎ ভাবি এসে আমাকে দুলিয়ে তুলে বলল,— \"ওঠ ওঠ, তোর জন্য বিশাল সুযোগ!\"আমি আধো ঘুমে গড়গড় করে উঠে বসে বললাম,— \"কি হয়েছে ভাবি?\"— \"নাবিলার এক বান্ধবী এসেছে, একেবারে সিনেমার নায়িকা! যদি তাকে পটাতে পারিস, তোর হাতে ২০০০ টাকা ধরিয়ে দিব।\"আমার ঘুম একদম উড়ে গেল। আমি তখন পুরোদস্তুর বেকার, টাকার খুব দরকার। সোজা বললাম,— \"ওরা এখন কোথায়?\"ভাবি চোখ টিপে বলল,— \"নাবিলার ঘরে। তবে সাবধানে, মেয়ে কিন্তু রসিক!\"দাঁত মাজা, মুখ ধোয়া, চুল আঁচড়ানো—সব মিলে পাঁচ মিনিটেই প্রস্তুত আমি। নাবিলার ঘরে ঢুকে দেখি এক পরীর মতো মেয়ে বসে আছে। গায়ের রং যেন সরাসরি চাঁদের ভাঁজ থেকে নেওয়া, চোখে টানা টানা দৃষ্টি, হাসিতে ঝিকিমিকি আলো।নাবিলা আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো,— \"ভাইয়া, ওর নাম মিনা। আমার বান্ধবী।\"আমি যেন হঠাৎ করেই অন্য জগতে চলে গেলাম। মিনা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,— \"আপনি খুব শান্ত মানুষ মনে হচ্ছে।\"আমি আর কী করি! আমার শান্তি তো তখন ওড়িয়া গেছে। তবু চেষ্টা করলাম স্বাভাবিক থাকতে, শুরু করলাম \'লম্বা-হাম্বা-আবুল-তাবুল\' গল্প।সে এমনভাবে হাসছিল, আমি যেন নতুন করে নিজেকে খুঁজে পেলাম। হঠাৎ বলল,— \"আপনার সঙ্গে কথা বলে অনেক মজা লাগছে। যদি আরও আগে পরিচয় হতো, তাহলে হয়তো প্রেমেই পড়ে যেতাম!\"এই কথার পর আমি গলে গেলাম। আমরা হাঁটতে বের হলাম। ভাবিদের সামনে গিয়ে সে হঠাৎ বলে বসল,— \"ভাবি, সালাম নিন। আমি আপনার দেবরের বউ!\"ভাবির চোখ কপালে! আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম,— \"একদম ঠিক শুনছেন ভাবি! আজ থেকে আমার একদিনের বউ!\"ভাবিরা হেসে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। আমি আর মিনা মিলে পুরো বিকেলটা দুষ্টুমি আর হাসিতে কাটিয়ে দিলাম।সন্ধ্যার আগে সে বলল,— \"আমায় একটু এগিয়ে দিয়ে আসবেন?\"রাস্তার মোড়ে এসে বলল,— \"খুব ভালো লাগলো আপনাকে। কিছু মনে করবেন না ভাইয়া। হয়তো আর কোনোদিন দেখা হবে না। পরের সপ্তাহেই আমার বিয়ে, আর তারপরই আমি লন্ডন চলে যাবো।\"আমি নির্বাক। কিছুই বলার ছিল না। শুধু মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম।তারপর আর কোনোদিন মিনাকে দেখিনি।তবে কয়েক বছর পর আমারও একবার লন্ডন যাওয়ার সুযোগ এসেছিল।আমি যাইনি।শুনেছি, লন্ডন খুব সুন্দর।তবু ভাবলাম, না যাওয়াই ভালো।কারণ দুটি \'সুন্দর\' যদি একসাথে আসে তবে জীবন আর ঘুম দুটোই নষ্ট করে দেয়,
আমি তখন সবে স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ি। গ্রাম্য পরিবেশে বড় হওয়া আমি একটু গুরুগম্ভীর স্বভাবের ছিলাম। বন্ধুদের তুলনায় কেমন যেন চুপচাপ, সবসময় সবার থেকে তফাতে থাকতাম। প্রেম-ভালোবাসার ধারে-কাছে যাইনি কখনও। এই কারণে ভাবিরা আমার পেছনে লেগেই থাকত, “তুই একটা মেয়েও পটাতে পারবি না রে? এই বয়সেও প্রেম হয়নি, ধ্যাত!”আমি শুধু মুচকি হাসতাম। ভেতরে ভেতরে একটু লজ্জা, একটু বিরক্তি—দুটোই মিশে থাকত। কিন্তু ভাবি তো আর মেনে নেয় না! যেই পায়, ক্ষেপাতে থাকে।একদিন দুপুরে ভাত খেয়ে ঘুমুচ্ছি, হঠাৎ ভাবি এসে আমাকে দুলিয়ে তুলে বলল,— \"ওঠ ওঠ, তোর জন্য বিশাল সুযোগ!\"আমি আধো ঘুমে গড়গড় করে উঠে বসে বললাম,— \"কি হয়েছে ভাবি?\"
0 Comments