

গল্প,বেলী ফুলের মালাআফছানা খানম অথৈমেহেদী হাসান বাসর রাতে বউকে দেখে মুগ্ধ হলেন।বউ অপরুপ সুন্দরী,যার বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবেনা।এমন বউ পাওয়ার জন্য আল্লাহপাকের কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করেন।যাক দুজনার মাঝে আলাপ পরিচয় কথোপকথন হলো।যত দিন বেঁচে থাকবে ততদিন বউকে ভালোবেসে যাবেন,সুখে রাখবেন এই ওয়াদা করেন।।দুজনের মাঝে খুব ভালোবাসা সৃষ্টি হলো।মধুর ভালোবাসার মধ্যদিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবন শুরু হলো।হাসান সাহেব বউয়ের খুব টেক কেয়ার করেন।ছুটিতে বিভিন্ন জাগায় বেড়াতে নিয়ে যান।পছন্দমত শাড়ী ছুড়ি কসমেটিকস কিনে দেন।কথায় কথায় জান প্রাণ সুইটহার্ট বলে সম্বোধন করেন।ভালোবাসা যেন উপছে পড়ছে।বছর ঘুরতে তাদের কোল জুড়ে আসল এক ফুটফুটে ছেলে সন্তান।হাসি আনন্দে ভরে উঠল তাদের ঘর।মাঝে সাত বছর পার হলো।হাসান সাহেবের অফিসে এক কলিগ এসেছে,নাম রুপা।বড় লজ্জার বিষয়,বর্তমানে আমরা নগ্নতাকে ফ্যাশন মনে করছি।রুপা ঠিক সেই নগ্ন পোশাক পরে অফিসে এসেছে।বডির সাথে ম্যাচ করে প্যান্ট আর গেঞ্জি পরে, বুকে ওড়না নেই।হাই হ্যালো বলে হাসান সাহেবের সঙ্গে কথা বলে।আস্তে আস্তে দুজনার মাঝে ভালোবাসার সম্পর্ক ঘটে উঠে।একে অপরের মনের একেবারে গভীরে। রুপাকে নিয়ে বিভিন্ন জাগায় ঘুরতে যান হাসান সাহেব।বউ এসবের কিছুই জানেনা।কিন্তু বউয়ের প্রতি আগের মতো ভালোবাসাবা আর নেই।অনেক রাত করে বাসায় ফিরেন।কথাবার্তা ছাড়া ঘুমিয়ে পড়েন।বউ রাত করে বাসায় ফিরার কারণ জিজ্ঞেস করতেই চটে উঠে বলেন,অফিসে কাজ ছিল,তাই আসতে দেরী হয়েছে।এত কৈফিয়ৎ ছাইছ কেনো?কি বলছেন, কৈফিয়ৎ ছাইব কেনো,দেরী হল তাই জিজ্ঞেস করলাম।কথা বলোনাতো।আমি ঘুমাব।স্বামীর কড়া ধমকে স্ত্রী চুপ হয়ে গেল।কিন্তু মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগল।স্বামীর কি হলো।সে এমন করছে কেনো?অনেক রাত করে বাড়ি ফিরছে।ঠিকমতো কথা বলছে না।এমন কি বাচ্চাটাকে ও আদর করছেনা।এসবের মানে কি।তার মানে সে কি পরনারী...।না না এসব আমি কি ভাবছি।আমার স্বামীতো আমাকে খুব ভালোবাসে।শুক্রবার ছুটিরদিন অফিস আদালত বন্ধ।কিন্তু হাসান সাহেব রেডি হচ্ছে কেনো?মোবাইল রিং বাঝতেই শেফা ফোন রিসিভ করে সালাম দিয়ে প্রশ্ন করল,আপনি কে?একটি মেয়েলী কণ্ঠ অপর প্রান্ত থেকে পাল্টা প্রশ্ন করলো,আপনি কে?আমি হাসান সাহেবের স্ত্রী।আপনি কে?আমি রুপা।আর কিছু না বলে সে ফোন কেটে দিলো। হাসান সাহেব রেডি হয়ে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হলো।তখনি শেফা প্রশ্ন করল,আজ অফিস বন্ধ।আপনি কোথায় যাচ্ছেন?বাইরে, ঘুরতে যাব।তাহলে আমি ও যাই।না তোমাকে যেতে হবেনা।কেনো?এত কৈফিয়ৎ আমি দিতে পারবনা।কেনো পারবেননা।ঐ রুপা মেয়েটা কে?না মানে সে আমার কলিগ।কলিগ না অন্যকিছু?না বউ তুমি ভুল বুঝছ।সে শুধু আমার কলিগ।তাই যেন হয়।এর বেশি কিছু হলে কিন্তু আমি বরদাস্ত করবনা।বউকে মিথ্যে বুঝ ভরসা দিয়ে ছুটে গেল রুপার কাছে।সেখানেও রক্ষা নেই।সে জামার কলার চেপে ধরে বলল,তুমি বিবাহিতা একথা আগে বলনি কেনো?বলতে চেয়েছিলাম। সময় পাইনি।ঠিক আছে তুমি তোমার বউ নিয়ে থাক। আমি গেলাম।প্লিজ লক্ষিটি যেওনা।শুন,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবনা।তাহলে বউকে কি করবে?ডিভোর্স দেব।সত্যি?হুম সত্যি।এই তোমার গা ছুয়ে বলছি।তাই যেন হয়।এর ব্যতিক্রম হলে কিন্তু আমি তোমার সঙ্গে নেই।কারণ সতীনের সংসার আমি করতে পারবনা।ওকে জান তাই হবে।এখন বল কি খাবে?দুজন হোটেলে ঢুকল।ইচ্ছেমত চা নাস্তা করে বেরিয়ে পড়ল।তারপর গেল মার্কেটে রুপার পছন্দমতো অনেক কেনাকাটা করল।গভীর রাত করে বাসায় ফিরল।বউ এত রাত করে বাড়ি ফেরার কারণ জানতে চাইলে,ছয়,নয় বলে উত্তর দিয়ে দিলো।শেফার মনে কোন শান্তি নেই।গভীর চিন্তায় মগ্ন।তার ধারণা সে রুপা নামের মেয়েটির প্রেমে পড়েছে।এজন্য আগের মতো তাকে ভালোবাসে না।নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে,আল্লাহ যেন তার স্বামীকে তার কাছে ফিরিয়ে দেন।এরমধ্যে অনেক সময় পার হলো।তার স্বামী পুরাপুরি রুপার দখলে চলে গেল।অফিসের বস ফোন করে তাকে সব জানিয়ে দিলো।নিজের স্বামী অন্যের দখলে চলে যাওয়া তা কোন নারী সহ্য করতে পারবেনা।সে সহ্য করতে পারলোনা।অজ্ঞান হয়ে পড়লো।দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল।ডাক্তার পরীক্ষা করে জানাল তার ব্লাড ক্যান্সার। আর মাত্র কটাদিন সে পৃথিবীর বুকে বেঁচে আছে।বিষয়টা জানার পর সে নিরব নিস্তব্ধ...।আগের মতো হাসিখুশি নেই।কিন্তু স্বামীর সেবা যত্নে কোন ত্রুটি নেই।সময়মতো সবকিছু করে দেন।একদিন খাবার টেবিলে হাসান সাহেব বললেন,শেফা একটা কথা বলব ভাবছি।বলেন কি বলবেন।কিভাবে যে কথাটা বলি।ঠিক আছে বলেন।আমি তোমাকে ডিভোর্স দিতে চাই।কথাটা শুনামাত্রই সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।অনেক কান্নাকাটির পর বলল,ডিভোর্স দেয়ার আগে আমার একটা শর্ত আপনাকে মানতে হবে।বল কি শর্ত?সামনে আমাদের বাচ্চা,নাঈমুল হাসানের বার্ষিক পরীক্ষা।এখন যদি ডিভোর্স হয়,আমরা আলাদা হয়ে যাব,তাহলে তার আর পরীক্ষা দেয়া হবেনা।সে মন খারাপ করবে, রাগ করবে। পরীক্ষার আর মাত্র এক মাস বাকী।তাই বলছি,ডিভোর্স\'র আগে আপনি এক মাস আমার কথামতো চলবেন।আমার সঙ্গে থাকবেন।শুধু বাচ্চাটার জন্য।হাসান সাহেব রাজী হলেন।শুরু হলো তাদের এক সঙ্গে থাকা।শেফা বলল,শুনেন শুধু একসঙ্গে থাকলে হবেনা।আপনাকে আরও কিছু কাজ করতে হবে।বল কি কাজ?প্রথম বাসর রাতে আমাকে কোলে নিয়ে যে রকম আদর করেছেন।ঠিক সেইভাবে রোজ রাতে কোলে নিয়ে আদর করতে হবে।হাসান সাহেব রাজী হলেন।প্রথম দিন বউকে কোলে নিতে একটু সংকোচবোধ করলেন।কিন্তু উপায় নেই ভালোবাসতে হবে।তানা হলে ডিভোর্স হবেনা।রুপাকেও পাবেননা।কি আর করা অনিশ্চা সত্বেও ভালোবাসতে হলো।তার পরদিন ও একই অবস্থা বউকে কোলে নিতে হল,আদর করতে হলো।সাত বছরের শিশু বাচ্চা মা বাবার আদর সোহাগ দেখে খিলখিল করে হাসে আর বলে,আব্বু আম্মুকে কোলে নিয়েছে বা:কি মজা,কি মজা।এভাবে পনেরো দিন পার হলো।হাসান সাহেবের বউয়ের প্রতি দায়িত্ব বেড়ে গেল।আগের মতো রুপাকে সময় দিচ্ছেনা।সেতো রেগে আগুন।কিন্তু করার কিছু নেই একমাস পার হতে হবে।তারপরইতো ডিভোর্স নাকি।যতই দিন যাচ্ছে বউয়ের প্রতি ভালোবাসা বাড়ছে,রুপার প্রতি কমছে।হাসান সাহেব পড়লেন মহাবিপদে, কাকে রাখবেন কাকে ত্যাগ করবেন।ভেবে পাচ্ছেন না।কিন্তু সিদ্ধান্ত তাকে নিতে হবে।শেফা তার বিবাহিতা স্ত্রী,আর রুপা পরনারী,তার সম্পর্কে কিছু ভাবা ঠিক হবেনা।নাজায়েজ হারাম।এক মাস শেষ হলো।সে ছুটে গেল রুপার কাছে।বিনয়ের সহিত বলল,রুপা আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবনা।আমাকে ক্ষমা কর।কেনো পারবেনা?আমি আমার বউকে ডিভোর্স দিতে পারবনা।পারবেনা মানে,পারতে হবেই।না আমি পারবোনা।কারণ আমার বউ আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।আমার চেয়েও।হ্যাঁ তোমার চেয়ে।অতএব তোমাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।কথাটা শুনামাত্রই সে হাসান সাহেবের গালে কষে চড় বসিয়ে দিয়ে বলল,বেঈমান যা তুই আমার সামনে থেকে।হাসান সাহেব কোন প্রতিবাদ না করে ছুটে গেলেন ফুলের দোকানে, একটা বেলী ফুলের মালা নিয়ে ছুটে আসলেন বাসায়।বউয়ের কাছে বসে বললেন,বউ আমি আর তোমাকে ডিভোর্স দেবনা।এতদিন তোমার ভালোবাসা বুঝতে পারেনি।আজ সব বুঝতে পেরেছি।তুমি আমাকে অনেক ভালোবাস।তুমি আমার আদর্শ বউ।আজ থেকে আমি শুধু তোমাকে ভালোবসব আর কাউকে না।এই নাও \"বেলী ফুলের মালা\"।দেখি আমার বউকে কেমন লাগে।মালা পরিয়ে দিলো বউয়ের গলায়।কিন্তু সেকি শেফা কথা বলছেনা।নাকে মুখে হাত দিয়ে দেখে শ্বাস প্রশ্বাস প্রবাহিত হচ্ছেনা।মানে সে মারা গেছে।টেবিলের উপর চোখ পড়তেই হাসান সাহেব দেখলেন কিছু রিপোর্টের কাগজ পত্র।পড়ে দেখলেন তার বউয়ের ক্যান্সার।মানে ক্যান্সারে মারা গেল শেফা। কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন হাসান সাহেব। ঃসমাপ্তঃ
0 Comments