গল্পমেহজাবিনের ভালোবাসা আফছানা খানম অথৈমেহজাবিন বাবা মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে।সেই আদরের মেয়ে কি করেছে জানেন।ভালোবেসে বিয়ে করেছে রুবেলকে।রুবেল এখনো কিছু করেনা।ডিগ্রী শেষ করেছে সবেমাত্র।তার বাবা ট্যাক্সিচালক। বুঝতে পারছেন সে কেমন পরিবারের ছেলে।মেহজাবিনের বাবা ছাদেক আলী কিছুতেই এ বিয়ে মানছেননা।তিনি রেগে বোম।রুবেলের বিরুদ্ধে নারী অপহরনের মামলা দায়ের করলেন।পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে ধরে নিয়ে আসল।আসামির কাড়গড়ায় দুজনকে দাঁড় করানো হলো।মেহজাবিনের পক্ষের উকিল বললেন,মহামান্য আদালত আমার মক্কেল এখনো নাবালিকা আঠারো বছর পূর্ণ হয়নি।তাকে বদমায়েশ রুবেল ভুলিয়ে জোর করে বিয়ে করেছে।এই বিয়ে আইন সম্মত নহে।আমি আসামি রুবেলের শাস্তি ও মেহজাবিনের জামিন চাইছি।পক্ষান্তরে রুবেলের পক্ষের উকিল গর্জে উঠে বলেলেন,মহামান্য আদালত আমার প্রতিপক্ষ সম্পূর্ণ মিথ্যে বলেছে। মেহজাবিনকে জোর করা হয়নি।সে স্বইচ্ছায় রুবেলেকে বিয়ে করেছে।আমি মেহজাবিন ও রুবেলের জামিন চাইছি।মেহজাবিনের পক্ষের উকিল আবার গর্জে উঠে বললেন,মহামান্য আদালত আমার প্রতিপক্ষ বোধ হয় ভুলে গেছে।মেহজাবিনের বয়স এখনো আঠার বছর পূর্ণ হয়নি।নিজ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার বয়স এখনো হয়নি।সুতরাং এ বিয়ে বাতিল।আমি আদালতের কাছে অনুরোধ করছি,তাকে তার বাবার হাতে তুলে দেয়ার জন্য এবং রুবেলকে শাস্তি দেয়ার জন্য।বিপক্ষ দলের উকিল থেমে নেই।দুজন কথা কাটাকাটি করে চলেছে।আদালতে হৈহৈরৈরৈ..।এমন সময় ঘন্টা বাজিয়ে জজ সাহেব বললেন,অর্ডার অর্ডার।সবাই থেমে গেল।তখনি মেহজাবিন বলল,মহামান্য আদালত আমার কিছু বলার ছিল,আদালত মঞ্জুর করলো।মেহজাবিন বলল,মনামান্য আদালত আমাকে কেউ জোর করেনি।আমি রুবেলকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি।তার কোন দোষ নেই।তাকে ছেড়ে দিন।মেহজাবিনের কথামতো রুবেলকে ছেড়ে দেয়া হলো।আর মেহজাবিনকে কারাগার বন্দি করে রাখা হলো।কারণ তার বয়স এখনো আঠার বছর পূর্ণ হয়নি।যেদিন আঠার বছর পূর্ণ হবে সেদিন তাকে ছেড়ে দেয়া হবে।এবং সে যেই সিদ্ধান্ত নিবে সেই সিদ্ধান্ত আদালত সঠিক বলে গ্রহণ করবে।এই ভেবে আদালত আপাতত বিচার কার্য শেষ করলো।জানা গেল সে পাঁচ মাসের অন্তসত্বা।তাকে নিবিঢ় পরিচর্যায় রাখা হলো।এদিকে একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে মা সারমিন বেগম পাগল প্রায়।মেয়েকে এক পলক দেখার জন্য আকুলি বিকুলি...।একদিন স্বামীকে বললেন,ওগো মেহজাবিনের ভালোবাসা মেনে নিন।ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসুন।চুপ একদম চুপ।ওর মতো কুলাঙ্গার মেয়ের কথা আমার সামনে উচ্চারণ করবে না।আমি বেঁচে থাকতে ওকে মেয়ে বলে স্বীকার করবোনা।প্লিজ আপনার পায়ে পড়ি।এমন নির্দয় হয়েন না।মেয়েটা পোয়াতি হতে চলেছে।এখন তার ভালো খাওয়া দরকার। অথচ সে জেলে।এর চেয়ে নিষ্ঠুরতা আর কি হতে পারে।আমি মা হয়ে তা সহ্য করতে পারছিনা।আপনি তো বাবা এসবের কি বুঝবেন।চোখের জলে বুক ভেসে যাচ্ছে তবুও ছাদেক আলীর দিল নরম হচ্ছেনা।তার কড়া কথা তিনি এ ভালোবাসা কখনো মেনে নেবেন না।মেয়ে বাঁচুক মরুক তাতে কিছু যায় আসেনা।এদিকে জেলে থেকে কষ্ট করছে তবুও রুবেলকে ভুলতে পারছেনা মেহজাবিন।তার ভালোবাসা হৃদয়ে দোল খাচ্ছে বারবার।রুবেল ও তার সঙ্গে নিয়মিত দেখা সাক্ষাত করে চলেছে।দুজনের ভালোবাসা যেন উপছে পড়ছে।এর ফাঁকে কেটে গেল কমাস।মেহজাবিন জন্ম দিলো এক ছেলে সন্তানের।তার বয়স পাঁচ মাস পূর্ণ হলো।সেই সঙ্গে মেহজাবিনের ও আঠারো বছর পূর্ণ হলো।তাকে পূণরায় আদালতের কাড়গড়ায় দাঁড় করানো হলো।জজ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,মেহজাবিন তুমি কোথায় যাবে?আমি আমার স্বামীর কাছে যাব।মেহজাবিন ভুল করোনা,তোমার বাবা তোমাকে খুব ভালোবাসে।তুমি তার কাছে ফিরে যাও।মহামান্য আদালত আমার বাবা ভুল করতে যাচ্ছে।মা বাবা কারো সারা জীবন থাকেন।স্বামীর বাড়ি হলো নারীর আপন ঠিকানা।আমি আমার আপন ঠিকানায় যেতে চাই।আদালতে থমথমে ভাব।জজ সাহেব বাকরুদ্ধ,তার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হলো না।তিনি তাকে মুক্তি দিয়ে দিলেন।সে তার স্বামীর সঙ্গে চলে গেল।\"মেহজাবিনের ভালোবাসা\" সিনেমার কাছেও হার মানল।বি: দ্র: গল্পটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা।
0 Comments