গল্পপ্রেমের বাঁধনআফছানা খানম অথৈলন্ডনের কোটিপতি এন্ড্রোমিড়ার একমাত্র মেয়ে আদ্রিয়ানা ডাক্তারি পড়তে যাই আমেরিকায়।সেখানে পরিচয় হয়ে তার সহপাঠি জোসেফের সঙ্গে।দুজনের মাঝে ভালো বন্ধুত্ব। এক অপরকে ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা।তারপর এক সময় ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা।দুজনের মাঝে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠল।একে অপররের প্রেমে মগ্ন।জোসেফ অতি সাধারন পরিবারের ছেলে।তার বাবা মোটর মেকানিক।তাদের এ ভালোবাসা কি আদ্রিয়ানার বাবা মেনে নেবেন।না কখনো না।তার মানে তাকে হারাতে হবে!না না তা হতে পারেনা।আদ্রিয়ানাকে জোসেফ খুব ভালোবাসে। তাকে ছাড়া সে থাকতে পারবেনা।তাহলে উপায়।এসব ভাবনা তাকে অস্থির করে তুলল।এজন্য জোসেফ সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিলো।আদ্রিয়ানা রাজী হলো না।সে বলল,আগে পড়া লেখা শেষ হোক তারপর বিয়ে।আছিতো এক সঙ্গ।,না মানে যদি তোমার বাবা রাজী না হয়।পালিয়ে বিয়ে করব।সত্যি বলছ?হুম সত্যি।বিশ্বাস হচ্ছেনা?এই তোমার গা ছুঁয়ে বলছি।আমি তোমার আছি,তোমার থাকব।অন্য কারো না।এবার বিশ্বাস হলোতো?হুম।ভালোবাসা পাকা করে দুজনে গন্তব্যস্থলে ফিরে গেল।একে অপরকে নিয়ে খুব ব্যস্ত।রাত জেগে ফোনালাপন চ্যাটিং সবই হচ্ছে।হাসি আনন্দের মাঝে কেটে যাচ্ছে তাদের দিনগুলো।কিন্তু এখানে শেষ নয়, আরও কিছু আছে।তারা যখন ভালোবাসার মহাসাগরে...।ঠিক তখনি বাবা এন্ড্রোমিডা জরুরী ফরমান জারী করলেন।এমন একটা হাভাতে ঘরের ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে হতে পারেনা বলে জরুরী সংকেত দিলেন।আদ্রিয়ানাকে তার সঙ্গে মিশতে বারণ করে দিলেন।কিন্তু আদ্রিয়ানা মানলেতো?তার এক কথা সে জোসেফকে ভালোবাসে।তাকে ভুলতে পারবেনা।এন্ড্রোমিডা ক্ষেপে গেলেন।মেয়েকে বন্দি করে রাখলেন।আদ্রিয়ানা ও হারবার পাত্রী নয়।জোর গলায় বলল,বাবা ভালোবাসা অন্তর দিয়ে অনুভব করতে হয়।এর জন্য টাকার প্রয়োজন হয়না।তুমি মেনে নাও আমাদের ভালোবাসা।স্টপ অনেক হয়েছে আর নয়।এসব ফালতু ভালোবাসা বাদ দাও।জোসেফ রাস্তার ছেলে। সে কখনো রাজ পরিবারের জামাই হতে পারেনা।আমি তোমার বিয়ে আরও উঁচু ঘরে দেব।বাবা উঁচু ঘর বর চাইনা।আমি জোসেফকে ভালোবাসি।তাকে নিয়ে সুখী হতে চাই।না না তা কখনো হতে পারেনা।তুমি তাকে ভুলে যাও।এভাবে বাবা মেয়ে অনেক সময় ধরে কথা কাটাকাটি করল।কেউ কাউকে ছাড় দিলো না।পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আশান্ত।এদিকে জোসেফ ছুটে যায় আদ্রিয়ানার কাছে।কিন্তু সেতো বন্দি,লোকজন পাহারা দিচ্ছে।এমতাবস্থায় দেখা করবে কিভাবে।অনেক চেষ্টার পর একটা উপায় বের করল।দারোয়ানকে দিয়ে একটা চিরকুট লিখে পাঠাল।তাতে লেখা,আদ্রিয়ানাআমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবনা।চলে এসো। আমি গেটের বাইরে আছি।আমরা পালিয়ে যাব।অনেক দূর।জোসেফ।চিরকুট পাওয়ার পর আদ্রিয়ানা চুপিচুপি বেরিয়ে আসল।জোসেফের হাত চেপে ধরল।পালিয়ে যেতে প্রস্তুত হলো।ঠিক তখনি এন্ড্রোমিডা মেয়ের হাত চেপে ধরল।তাকে টেনে হেঁচড়ে এনে বন্দি করে রাখল।আর জোসেফকে বেঁধে সরাসরি গুলি করল।সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে ঢলে পড়ল।তারপর তাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসল।মুমূর্ষু অবস্থায় রাস্তায় পড়ে রইল জোসেফ।কিছু পথচারী তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাল।বন্দি থাকা অবস্থায় আদ্রিয়ানা কেঁদে কেঁদে বলে,বাবা আমায় ছেড়ে দাও।আমি জোসেফের কাছে যাব।আমি তাকে ভালোবাসি।তাকে ছাড়া আমি বাঁচবনা।কে শুনে কার কথা। আদ্রিয়ানা আপন মনে কেঁদে চলেছে।তার কান্না যেন শেষ হচ্ছেনা।এদিকে প্রায় এক মাস চিকিৎসার পর জোসেফ সুস্থ হয়ে উঠল।মনে পড়ল আদ্রিয়ানার কথা।ছুটে যেতে প্রস্থুত হলো।কিন্তু যদি তাকে মেরে ফেলে।এসব ভাবনা মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।হঠাৎ মোবাইলে টুংটাং শব্দ হলো।দেখতে পেল একটা এস এম এস।জোসেফ তুমি কোন চিন্তা করোনা।আমি তোমার আছি তোমার থাকব।অন্য কারো হবনা।অপেক্ষায় থেকো।আমি সুযোগ পেলে চলে আসব।তুমি কেমন আছ?জোসেফ উত্তর দেয়,আমি ভালো নেই।তোমার চিন্তায় অস্থির।তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবনা।তুমি তাড়াতাড়ি এসো।জোসেফ।মোবাইল টুংটাং বাজতেই মা দেখতে পেলেন জোসেফের এস এম এস।তারপর এন্ড্রোমিডাকে দেখালেন।তিনি ক্ষেপে গেলেন।আদ্রিয়ানাকে খুব মারধর করলেন।জোসেফকে মেরে ফেলার হুমকি দিলেন।আদ্রিয়ানা জোসেফকে বাঁচানোর জন্য কোন প্রতিবাদ করলনা।নীরবে সবকিছু হজম করে নিলো।এন্ড্রোমিডা কিন্তু থেমে নেই।দ্রুত গতিতে মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেললেন।একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলা কথা।জাঁকজমক না হয়ে কি পারে?আত্নীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব সবাইকে নিমন্ত্রণ করলেন।সাতদিন আগে থেকে বিয়ের প্রস্তুতি। বিশাল আয়োজন..।আদ্রিয়ানার মনে কিন্তু এক বিন্দু শান্তি নেই।জোসেফের জন্য কেঁদে বুক...।পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছেনা।তাকে পাহারা দিচ্ছে কয়েকজন গার্ড।হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি আসল।ঘুমের ঔষধ খেয়ে অচেতন হয়ে বিছানায় পড়ে রইল।তাৎক্ষণিক তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো।এন্ড্রোমিডার মেয়ে বলে কথা ডাক্তার কি আর থেমে থাকে।দ্রুত চিকিৎসা শুরু হলো।কয়েক ঘন্টার মধ্যে তার জ্ঞান ফিরে আসল।চোখ মেলে দেখে মা বাবা গার্ড সবাই তার পাশে বসে আছে।এখন উপায় যাবে কিভাবে।ভাবতে লাগল।রাত অনেক হলো। এবার কেউ জেগে নেই।সবাই গভীর ঘুমে মগ্ন।আর এই সুযোগে পালিয়ে গেল আদ্রিয়ানা। জোসেফ তাকে পেয়ে খুব খুশি।সে আর দেরী করলনা।দ্রুত বিয়ের কাজ শেষ করল।ঠিক সেই মুহূর্ত এন্ড্রোমিডা পুলিশ বাহিনী নিয়ে সেখানে হাজির হলো।আদ্রিয়ানাকে নিয়ে আসতে চাইলে সে বলল,বাবা আমাকে নিয়ে কোন লাভ হবেনা।আমি এখন জোসেফের বিবাহিতা স্ত্রী।আমি এ বিয়ে মানিনা।প্লিজ বাবা রাগ করোনা।বিয়ে মেনে নাও।না মানবনা।এক্ষণি জোসেফকে মেরে ফেলব।বলতে না বলতে তিনি বন্ধুক তাক করলেন।আদ্রিয়ানা সামনে দাঁড়িয়ে বুক পেতে কেঁদে কেঁদে বলল,বাবা মারতে হলে প্রথমে আমাকে মার।কারণ জোসেফকে ছাড়া আমি বাঁচবনা।মরলে দুজন এক সঙ্গে মরব।সে একা মরবে কেনো?এযে \"প্রেমের বাঁধন\" এ বাঁধন ছিন্ন করা যায়না।এন্ড্রোমিডার চোখ বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ল।হাত ফসকে বন্ধুক পড়ে গেল।দুহাত প্রসারিত করে বললেন,মা আমি তোর প্রেমের বাঁধনের কাছে হেরে গেলাম।মেনে নিলাম তোর ভালোবাসা।আয় আমার বুকে আয়।বাবা মেয়ে মিট হলো।জয়ী হল প্রেমের বাঁধন।রচিত হলো ভালোবাসার সংসার।
0 Comments