আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে। নাম আমার শাহেদ। দেখতে শুনতে সাধারণ, শ্যামলা রঙ, মাঝারি গড়ন, চশমা পড়ি—অর্থাৎ \"নায়ক\" টাইপের কিছু না। কিন্তু মন? সেটা ছিল একেবারে দরিয়ানদী। আর সেই দরিয়ায় এসে একদিন ঝাঁপ দিয়েছিলো হাসি।চার বছর একসাথে কাটিয়েছি আমরা। প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর প্রেম। হাসি খুব সুন্দরী ছিল, যেমন চেহারায়, তেমনি কথায়। তার হাসিতে আমি ভবিষ্যৎ দেখতাম। ভাবতাম, একদিন সংসার করব, সে রান্না করবে আর আমি তাকে দেখে চায়ের কাপ হাতে কাব্য লিখব।কিন্তু সেই কাব্যের পাতা ছিঁড়ে গেল হঠাৎ। একদিন শুনি, হাসির বিয়ে হয়ে গেছে।না, আমাকে সে কিছু বলেনি। ফোন বন্ধ, মেসেজের জবাব নেই। কদিন পর নিজেই এল, মাথায় ঘোমটা, গলায় সোনার হার, চোখে তড়িৎ ম্লানতা।বলল,— “দেখ শাহেদ, আমার কিছু করার ছিল না। পরিবার জোর করল, ছেলেটা ধনী, বিদেশ ফেরত। তুমি তো জানোই, তোমার চাকরি তখনও হয়নি। আমি চাইনি এমন হোক, কিন্তু হয়ে গেল। ক্ষমা করে দিও।”আমি বোকার মতো তাকিয়ে ছিলাম। কিছু বলতে পারিনি।তারপর সে যেটা বলল, সেটা ছিল তীব্র, যেন বুক চিরে বৃষ্টির মতো ব্যথা ঝরে পড়ল:— “আচ্ছা, যদি ভবিষ্যতে কেউ তোমাকে ছেড়ে চলে যায়, তবে আর ভালোবাসার মেয়ের পেছনে দৌড়াবে না, এসো আমাদের বাড়িতে। আমাদের কাজের মেয়েটা আছে না, সাবিনা, দেখতে তোমার মতোই সাধারণ—তাকে বিয়ে দিতে সাহায্য করব।”আমি হেসে ফেললাম।না, কষ্টে না। অবিশ্বাসে। মানুষ এতটা ঠান্ডা হতে পারে! আমি দেখতে সুন্দর নই—সেই কারণে? সময়ের স্রোত বয়ে গেল। আমি সরকারি চাকরিতে ঢুকলাম। কর্মস্থল দূরে, হাসির শহর থেকে অনেক দূরে।একদিন, ছয় বছর পর, এক কনফারেন্সে দেখা হয়ে গেল হাসির সঙ্গে।সে আগের মত নেই। চেহারায় ক্লান্তি, মুখে বিরক্তি। বলল—— “তুমি জানো, আমি ডিভোর্সড। ছেলেটা ভালো ছিল না, নেশা করত, মারধর করত। আমি ভাবি মাঝে মাঝে, তুমিই হয়তো আমার জন্য সঠিক ছিলে।”আমি চুপ থাকলাম। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল আমার স্ত্রী—সাবিনা।হ্যাঁ, সেই সাবিনা। একদিন যে ছিল কাজের মেয়ে, আজ সে আমার ঘরের রানী।আমি বললাম,— “তোমার একসময়কার কথা মনে আছে? বলেছিলে, কেউ যদি আমায় ছেড়ে যায়, তবে কাজের মেয়েটাকে বিয়ে করিয়ে দেবে! তুমি ভুল বলোনি। শুধু, বিয়েটা আমি করেছিলাম আমার সিদ্ধান্তে, অবজ্ঞা নয়, ভালোবাসা দেখে।”হাসি তাকিয়ে রইল নির্বাক। আর আমি? আমি আমার স্ত্রী সাবিনার হাত ধরলাম।জীবন আমাকে শিখিয়েছে—\"যারা অথই জলের মাছ হয়, তারা কখনো গভীর ভালোবাসা বুঝতে পারে না।\"
আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে। নাম আমার শাহেদ। দেখতে শুনতে সাধারণ, শ্যামলা রঙ, মাঝারি গড়ন, চশমা পড়ি—অর্থাৎ \"নায়ক\" টাইপের কিছু না। কিন্তু মন? সেটা ছিল একেবারে দরিয়ানদী। আর সেই দরিয়ায় এসে একদিন ঝাঁপ দিয়েছিলো হাসি।চার বছর একসাথে কাটিয়েছি আমরা। প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর প্রেম। হাসি খুব সুন্দরী ছিল, যেমন চেহারায়, তেমনি কথায়। তার হাসিতে আমি ভবিষ্যৎ দেখতাম। ভাবতাম, একদিন সংসার করব, সে রান্না করবে আর আমি তাকে দেখে চায়ের কাপ হাতে কাব্য লিখব।কিন্তু সেই কাব্যের পাতা ছিঁড়ে গেল হঠাৎ। একদিন শুনি, হাসির বিয়ে হয়ে গেছে।
0 Comments