কবিতাকে মনে পড়ে

 ত্রিশটা বছর কেটে গেছে।তারপরও সেই বিকেলের আলো-ছায়া মাখা মুখখানা মাঝে মাঝে হঠাৎ করেই ভেসে ওঠে চোখের সামনে—নামটা ছিল কবিতা।আমি তখন নবম শ্রেণিতে পড়ি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক মফস্বল শহরে বাবার বদলির চাকরি। স্কুল বদল হলো, শহর বদল হলো, জীবন বদল হলো। নতুন স্কুলে গিয়ে খুব একটা খাপ খাওয়াতে পারিনি—অন্তর্মুখী আর গম্ভীর স্বভাবের ছেলে ছিলাম। কারও সাথে তেমন মিশতাম না। ঠিক তখনই তাকে প্রথম দেখি।সাদা শাড়িতে, মাথায় দুটি বেনি, মিষ্টি হাসি নিয়ে কবিতা স্কুলের লাইব্রেরির বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। আমার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলেছিল,“তোমার চোখে সব সময় এতো রাগ কেন?”আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কেউ তো এমন করে কখনো প্রশ্ন করেনি।আমার রাগী চোখে কেউ কখনো হাসি খোঁজেনি।তারপর থেকে কবিতার সাথে প্রতিদিন দেখা হতো স্কুলে, লাইব্রেরিতে, পরীক্ষার হলে। কিন্তু সম্পর্কটা কখনো বন্ধুত্বের গণ্ডিও পেরোয়নি। আমি তার নাম জানতাম, সে হয়তো আমার নামও জানত। কিন্তু আমরা কেউই কিছু বলিনি, কিছু চাইনি, শুধু একটা নীরব ভাললাগা—একটা চোখের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল।হঠাৎ করেই আমার বাবার আবার বদলি হলো। স্কুল শেষ না হতেই আমাকে চলে যেতে হলো অন্য জেলায়। বিদায়ের দিন কবিতাকে দেখার জন্য বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম স্কুলের সামনে, কিন্তু সে এল না। তার কোনো কথা না রেখেই চলে এলাম।তারপর সময় পেরোলো।আমি বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করলাম, চাকরি পেলাম, সংসার করলাম, বাবা হলাম।জীবনের সব কিছু ঠিকঠাক চলছে, তবু মাঝে মাঝে—একটা বিকেলে, একটা পাতাঝরার মৌসুমে, অথবা কোনো নীরব সন্ধ্যায় হঠাৎ তার কথা মনে পড়ে যায়।কবিতা!সে এখন কোথায় আছে, কে জানে?কখনো খোঁজ করিনি, সাহস হয়নি।তবে আজও মনে হয়—সেদিন যদি একটু সাহস করে বলতাম,“তোমাকে ভালো লাগে,”তবে হয়তো গল্পটা অন্যরকম হতো।আজ ত্রিশ বছর পরও আমার ভিতরে তার জন্য যে অনুভূতিটা রয়ে গেছে, সেটা ভালোবাসা নাকি একরকম কল্পনার স্মৃতি—বুঝে উঠতে পারি না। তবে একটা কথা আমি খুব বিশ্বাস করি—আগের জন্মে হয়তো কবিতা আমার স্ত্রী ছিল।এই জন্মে সে শুধু স্মৃতি হয়ে থেকেছে। 

কবিতাকে মনে পড়ে

• মোবারক হোসেন
• 22/07/2025
• 6 views
• 0 Comments

ত্রিশটা বছর কেটে গেছে।তারপরও সেই বিকেলের আলো-ছায়া মাখা মুখখানা মাঝে মাঝে হঠাৎ করেই ভেসে ওঠে চোখের সামনে—নামটা ছিল কবিতা।আমি তখন নবম শ্রেণিতে পড়ি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক মফস্বল শহরে বাবার বদলির চাকরি। স্কুল বদল হলো, শহর বদল হলো, জীবন বদল হলো। নতুন স্কুলে গিয়ে খুব একটা খাপ খাওয়াতে পারিনি—অন্তর্মুখী আর গম্ভীর স্বভাবের ছেলে ছিলাম। কারও সাথে তেমন মিশতাম না। ঠিক তখনই তাকে প্রথম দেখি।

See More Read Full Story