কাচের স্বর্গ

জীবন যেমন সুন্দর, তেমনি নির্মম। আর প্রেম? সে যেন কাচের তৈরি স্বর্গ—দেখতে অপূর্ব, ছুঁতে গেলেই ভেঙে চুরমার।লুবনা শহরের ধনী ব্যবসায়ীর মেয়ে। তার ত্বকের উজ্জ্বলতা যেন দুধে আলতা মেশানো, চোখে স্বপ্ন, ঠোঁটে দামি লিপস্টিক, চলাফেরায় অভিজাত এক ঘ্রাণ। তার হাসি নিয়ে কত ছেলেই স্বপ্ন বুনতো—কিন্তু লুবনা হাসতো কেবল নিজের প্রয়োজনে, সময় বুঝে।অন্যদিকে রিদয়—একজন গরীব বেকার যুবক। দেখতে কালো, রোগা, দাঁতে ফাঁক। ছোটবেলা থেকেই সমাজ তাকে তুচ্ছ করেছে, তবু সে স্বপ্ন দেখেছে। একটি স্বপ্ন—লুবনার! সে লুবনাকে ভালবেসে ফেলেছিল একদিন। নিঃস্বার্থে। নিঃশর্তে। এতটাই গভীরভাবে, যেন তার পৃথিবীতে লুবনাই ঈশ্বরী।তবে লুবনা কখনোই তাকে ভালবাসেনি।লুবনা তাকে দরকার হিসেবে ব্যবহার করেছিল। একদিন হুট করে তার গাড়ির চাবি হারিয়ে গিয়েছিল, রিদয় পাশে দাঁড়িয়েছিল, বলেছিল——\"আমি দিচ্ছি, তুমি চিন্তা কইরো না।\"লুবনা তখন প্রথম হেসেছিল।এরপর ধীরে ধীরে রিদয় তার জীবনের ছোটখাট কাজে ব্যবহৃত হতে থাকে। প্রেমের অভিনয় করে লুবনা তাকে ফাঁদে ফেলে—সে হীরের কানের দুল কিনে দেয় নিজের মায়ের গয়না বন্ধক রেখে। তবু খুশি ছিল সে, কারণ লুবনা \"ভালবাসি\" বলেছিল একবার।কিন্তু একদিন হঠাৎ সব বদলে গেল।লুবনা এক বিয়ের কার্ড পাঠালো—তার বিয়ে এক নামজাদা ধনীর ছেলের সাথে।রিদয় অবাক হল না, কাঁদলও না। শুধু একা একা কাচের মত জ্বলে উঠল তার চোখ।সে একটা রিকশা কিনে চালাতে শুরু করল। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, সে শুধু কাজ করে। রাতে ফিরে একা ঘরে চুপচাপ বসে থাকে। টেবিলের ওপর একজোড়া হীরের দুল, সযত্নে রাখা। কাচের বাক্সে।আজও সে লুবনাকে ভুলতে পারেনি।আজও তার স্বপ্নে আসে—লুবনার হাসি, তার গলা ছুঁয়ে বলা সেই একটিমাত্র মিথ্যা শব্দ—“ভালবাসি”।এই শহরে আলো আছে, গান আছে, মানুষ আছে।তবু রিদয়ের জীবনে শুধু কাচের স্বর্গ—যেখানে প্রেম আছে, ছোঁয়া নেই।ভালোবাসা আছে, অথচ ভালবাসার মানুষ নেই।গল্পটা এখানেই শেষ নয়।শেষ কেবল তখনই হয়, যখন সব স্বপ্ন একদিন ঘুমিয়ে যায়।একদিন স্বপ্ন আর আশা ফুরালো, কাচের স্বর্গ ভেঙ্গে গেল, শুধু রয়ে গেল আম গাছে ঝুলে থাকা স্বপ্ন হারানো এক মানুষের লাশ!!!