রাজেশপুর গ্রামটা যেনো এক টুকরো স্বর্গ। চারপাশে ফসলের মাঠ, মাঝখানে পুকুর, আর তার পাশে একটা পুরনো প্রাসাদ—লোকেরা বলে, এই বাড়িতেই বাস করতেন \"রাজেশপুরের রানী\"।রানী?না, কোনো রাজবংশের নারী নয়, সে ছিলো এক রূপকথার মত মেয়ে। নাম ছিলো কোকিলা। শ্যামলা, দীঘল চুল, চোখে ছিলো উদাস বাতাসের মতো এক দৃষ্টি, আর কণ্ঠে যেন কোকিলের ডাক।কোকিলার প্রেমে পড়েছিলো রাজেশপুরেরই এক কৃষক যুবক—অমল।অমল ছিলো চুপচাপ স্বভাবের, চাষ করে, বই পড়ে, আর সন্ধ্যায় পুকুর পাড়ে বসে কোকিলার গান শোনে।প্রথম দেখায় প্রেম হয়নি, তবে প্রথম শোনাতেই হয়েছিলো।এক চৈত্রের দুপুরে, কোকিলা নদীর ঘাটে কাপড় ধুচ্ছিলো। মাথার কাপড় একটু সরে গিয়ে চোখে পড়ল তার দীপ্তি। অমল পানির কলসি হাতে দাঁড়িয়ে রইল স্থির হয়ে।হঠাৎ কোকিলা গেয়ে উঠল—\"অন্ধ হইয়া প্রেমে পড়ছো, ওরে কাঁচা বঁধু,কালো বলছো রঙরে, দেখি তো চোখের চুন্ধু!\"অমলের বুকের ভেতর যেন বজ্রপাত হল। কোকিলা হেসে তাকাল তার দিকে—সেই হাসি অমলের জীবন ওলটপালট করে দিল।গ্রামের অনেকে কোকিলার রং নিয়ে কুৎসা করত।— “কালো মেয়ে, গান গেয়ে কে নায়িকা হয়?”— “রানী সাজে, হুঁঃ!”কিন্তু অমল দেখেছিলো কোকিলার সৌন্দর্য চোখে নয়, গানে, আচরণে, আর সাহসে।একদিন হাট থেকে ফেরার পথে অমল বলল,— “তোমার গানের মাঝে আমি আমার মন পাই।”কোকিলা হেসে বলল,— “তুমি কি আমার প্রেমে পড়েছো?”অমল বলল,— “যদি বলো না প্রেম, তবে বলি পূজা।”বিয়ের দিন এল। পুরো রাজেশপুর তাজ্জব—অমল ‘কালো মেয়ে’ কোকিলাকে বিয়ে করছে!কিন্তু বিয়ের দিন সকালে এক বৃষ্টিভেজা কাক ডাকল পুকুর পাড়ে। লোকজন ছুটে গিয়ে দেখল—কোকিলা নেই। শুধু তার রেশমি ওড়নাটা পুকুরের ধারে পড়ে আছে।কেউ বলে, সে অপমান সইতে না পেরে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে।কেউ বলে, কোকিলাকে জ্বীন বিয়ে করেছে।তবে অমল বিশ্বাস করে, কোকিলা যায়নি, সে রূপ নিয়েছে এই গ্রামেই, বাতাসে, কোকিলের ডাকে।প্রতিবছর চৈত্র মাসে, রাজেশপুরে কেউ একজন পুকুরপাড়ে গান গায়—\"কালো রঙের কোকিল ছিলো রাজেশপুরের রানী,সে ভালোবাসতো প্রেম, সে ছিলো অমলের প্রাণী।\"
রাজেশপুর গ্রামটা যেনো এক টুকরো স্বর্গ। চারপাশে ফসলের মাঠ, মাঝখানে পুকুর, আর তার পাশে একটা পুরনো প্রাসাদ—লোকেরা বলে, এই বাড়িতেই বাস করতেন \"রাজেশপুরের রানী\"।রানী?না, কোনো রাজবংশের নারী নয়, সে ছিলো এক রূপকথার মত মেয়ে। নাম ছিলো কোকিলা। শ্যামলা, দীঘল চুল, চোখে ছিলো উদাস বাতাসের মতো এক দৃষ্টি, আর কণ্ঠে যেন কোকিলের ডাক।কোকিলার প্রেমে পড়েছিলো রাজেশপুরেরই এক কৃষক যুবক—অমল।
0 Comments