২০২১ সাল। সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এক অদৃশ্য আতঙ্ক—করোনা ভাইরাস। চারদিকে শুধুই নিষেধাজ্ঞা, মুখে মাস্ক, মন ভরা উৎকণ্ঠা। এমন এক সময়, যেখানে সবাই নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে, সেখানে ঠিক জন্ম নিচ্ছিল এক ভালোবাসার নিঃশব্দ গল্প।ফেনীর এক প্রান্তে বসবাস করতেন জান্নাত। ভদ্র, লাজুক আর মিষ্টি স্বভাবের এক তরুণী। তার চোখে ছিল ভবিষ্যতের স্বপ্ন, আর মনের ভেতর বাসা বাঁধা এক অনিশ্চিত অপেক্ষা। হঠাৎ করেই সেই অপেক্ষার অবসান হয়—একটি ছবির মাধ্যমে।জান্নাতের খালামনির ভাসুর একদিন সিপন নামের এক তরুণকে তার একটি ছবি দেখান। ছবিটা ছিল সাধারণ, কিন্তু চোখে ছিল একরাশ দীপ্তি, মুখে ছিল প্রশান্তির হাসি। সিপন একনজরেই বুঝে গেল—এটাই সেই মেয়ে, যার জন্য সে অপেক্ষা করছিল।ছবিটি দেখেই সে যেন স্থির থাকতে পারল না। সে বলল, “এই মেয়েটাকেই আমি দেখতে চাই, জানার চেষ্টা করতে চাই।” অস্থির হয়ে উঠল সে। মনে হচ্ছিল, যদি এখনই দেখা না হয়, তবে সবকিছু হারিয়ে যাবে।এরপর শুরু হয় যোগাযোগ। জান্নাতের মা ও মেঝো খালামনি সিপনকে দেখতে যান। সিপনের ব্যবহার, তার সৌজন্যবোধ ও বিনয় দেখে তারা সন্তুষ্ট হন। এরপর আরও একদিন দেখা হয় জান্নাতের এক ভাবি ও তার মা জান্নাতকে সঙ্গে নিয়ে। ধাপে ধাপে তৈরি হতে থাকে একটি নতুন গল্পের ভিত্তি।তারপর একদিন সিপন গাড়ি করে পৌঁছায় মনপুরায়—দাগনভূঁইয়া, ফেনীর একটি রেস্টুরেন্ট বা কমিউনিটি সেন্টারে। সেখানেই প্রথমবার সামনে থেকে জান্নাতকে দেখে। জান্নাত ছিল সেদিন একেবারে সাধারণ সাজে, কিন্তু তার চোখের ভাষা ছিল অনন্য।সিপনের হৃদয় যেন থমকে যায়। বাস্তবের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ছবির মেয়েটিই আজ তার চোখের সামনে। সে মনে মনে বলল,“এটাই আমার জীবনসঙ্গী। ওকে ছাড়া আমি কিছু ভাবতেই পারছি না।”সেদিন ফিরে গিয়ে সিপন সরাসরি জান্নাতের মায়ের—আন্টির—সাথে যোগাযোগ করে। সে বলে,“আন্টি, আমি শুধু জান্নাতকেই বিয়ে করতে চাই। ও আমার জীবনের সঠিক সিদ্ধান্ত।”এরপর একে একে সবকিছু এগোতে থাকে। পরিবারের সম্মতি, পরস্পরের সম্মান আর দুই হৃদয়ের সম্মতিতে এক নতুন সম্পর্কের সূচনা ঘটে।বিয়ে৮ জুলাই, ২০২১—যখন সারা দেশ করোনা আতঙ্কে ভীত, সেই সময় ছোট আকারে, সীমিত অতিথির উপস্থিতিতে জান্নাত ও সিপনের বিয়ে সম্পন্ন হয়।সেই বিয়ে ছিল না বড় কোন আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান, কিন্তু ছিল ভালোবাসার গভীরতা। নিকাহর সময় যখন জান্নাত \"কবুল\" বলে উত্তর দেয়, তখন সিপনের চোখে জল চলে আসে—খুশির জল।সেই দিনটা ছিল এমন একটি দিন, যেটি আজও তারা দুজন মনে করে জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনগুলোর একটি।বিয়ের পরনতুন জীবন, নতুন গন্তব্য—চলার পথটা কখনো মসৃণ, কখনো কঠিন। কিন্তু প্রতিদিনের ছোট ছোট মুহূর্তে তারা খুঁজে পায় ভালোবাসা, নির্ভরতা। সিপন প্রতিদিন জান্নাতকে এক নতুন ভালোবাসায় আবিষ্কার করে, আর জান্নাত নিজের প্রতিটি কাজে বুঝিয়ে দেয়—সে শুধু স্ত্রী নয়, সে সিপনের সবচেয়ে আপন মানুষ।শেষ কথাঃআজো সিপন জান্নাতকে দেখে ভাবে,\"যখন পুরো পৃথিবী মুখ ফিরিয়েছিল, তখন আল্লাহ আমার জীবন সাজিয়ে দিয়েছিলেন। করোনা শুধু আতঙ্কই আনেনি, সঙ্গে এনেছিল আমার জান্নাতকে।”আর জান্নাত একা থাকলে চোখ বন্ধ করে ভাবে,“ভালোবাসা পেলে সব দুঃসময় পেরিয়ে আসা যায়, যেমন করে আমরা এসেছি...
“করোনার ছায়ায় ভালোবাসা” একটি বাস্তবধর্মী প্রেমের গল্প, যেখানে একটি বৈশ্বিক মহামারির ভয়াল সময়েও জন্ম নেয় এক নিঃশব্দ ভালোবাসা। ২০২১ সালের করোনা পরিস্থিতিতে, যখন মানুষ একে অপর থেকে দূরে, ঠিক তখনই জান্নাত ও সিপনের মধ্যকার এক অপূর্ব সম্পর্কের সূচনা হয় একটি ছবির মাধ্যমে। ধীরে ধীরে পরিচয়, দেখা, পরিবারিক সম্মতি এবং শেষ পর্যন্ত সীমিত আয়োজনের মধ্যেই ঘটে যায় তাদের বিয়ে। এই গল্পে আছে নির্ভরতা, বিশ্বাস আর সংকটকালে জন্ম নেওয়া এক চিরন্তন ভালোবাসার রূপ।
0 Comments