রাত তখন ১২টা ৩৭।ঘরের জানালায় ঠুকঠুক করে বৃষ্টির শব্দ।মিথিলা জানালার পাশে বসে উলের সোয়েটার বুনছিল। হঠাৎ করে মোবাইলটা বেজে উঠলো—একটা সম্পূর্ণ অপরিচিত নাম্বার।পাশে রাখা মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে ওর বুক ধকধক করে উঠল। এই সময় কে ফোন করে? কিছুটা ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করল।— \"হ্যালো?\"একটা গভীর, কোমল পুরুষ কণ্ঠ…— \"তুমি কি মিথিলা?\"— \"কে আপনি?\" মিথিলা একটু বিস্মিত।— \"আমি রুহান। তুমি চিনবে না। কিন্তু আমি... তোমায় দেখি। প্রতি রাতেই।\"মিথিলা শিউরে উঠল।— \"আপনি আমাকে ‘দেখেন’ মানে?\"— \"তুমি জানালার পাশে যে আলোটা জ্বালিয়ে রাখো, তার আড়ালে আমি থাকি। তোমার একাকীত্বের শব্দ আমি শুনতে পাই…\"মিথিলার শরীরে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল।— \"এটা কি রকম বাজে মজা করছেন আপনি?\"— \"মিথিলা… আমি সত্যিই আছি। আমি মরিনি। শুধু বদলে গেছি।\"— \"মানে?\" মিথিলার কণ্ঠ কেঁপে ওঠে।— \"চার বছর আগে যে রুহানকে তুমি ভালোবেসেছিলে, যে হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে গেল—সে হারায়নি। সে প্রতিরাতে ফিরে আসে… এই ফোনে, এই বৃষ্টির রাতে… শুধু তোমায় দেখার জন্য।\"মিথিলা থমকে গেল।এই নাম… এই কণ্ঠ… এত বছর পর!তার কলেজের প্রেম—রুহান—যে হঠাৎ একদিন নিখোঁজ হয়েছিল, কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি তার। তার ছবি আজও মিথিলার ডায়েরির ভেতর আছে।— \"তুমি কি সত্যি রুহান?\" মিথিলা ফিসফিস করে বলে।— \"হ্যাঁ। আমি এখন আর মানুষের জগতে নেই। কিন্তু তোমার ভালোবাসা আমাকে প্রতি রাতে ফিরিয়ে আনে। এই ফোনের তারে, এই বৃষ্টির শব্দে…\"মিথিলা ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করল।আর কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেল।দুপুরবেলা যখন বৃষ্টি থেমে গেল, মিথিলা নিচে নামল। বাসার সামনের পোষ্টবক্সে একটা হলুদ খাম পড়ে ছিল।খামের ভেতর ছোট্ট একটা নোট:> “আমি তোমার কাছেই ছিলাম, আছি। জানালার পাশে একটা বেগুনি ফুল গাছ রেখো। আমি ঠিক সেখানে থাকব। – রুহান”সেই রাতেই মিথিলা জানালার পাশে একটা ছোট্ট বেগুনি ফুলের টব রাখল।ফুলটাও যেন জানে, তার গা ছুঁয়ে কেউ নিঃশ্বাস ফেলে যায়…
0 Comments