মূর্খদের গল্প

বিয়ের পরপরই নতুন সংসারে আনন্দ যেন আকাশ ছুঁই ছুঁই বাঘদম্পতির। বাঘিনির চোখে নতুন স্বপ্ন, নতুন প্রেম। একদিন সে গলায় নরম সুর মিশিয়ে স্বামীকে বলল——শোন, মানুষ নাকি বিয়ের পর “হানিমুন” নামে এক জায়গায় যায়। বনজঙ্গলে বসে থাকলে আর কতদিন! চল না, আমরা-ও একদিন হানিমুনে যাই।বাঘটা প্রথমে কাঁচুমাচু করল। মনে মনে ভেবেছিল, বন ছেড়ে বাইরে গেলে বিপদ হতে পারে। কিন্তু সুন্দরী বউয়ের সামনে তা আর বলতে সাহস পেল না। মনের ভেতর ভাব, আচ্ছা, স্ত্রী যদি খুশি হয়, তবে জীবন-জঙ্গল দুটোই সার্থক।পরদিন সন্ধ্যায় পূর্ণিমার আলো ঝরঝর করে পড়ছে গাছপালার ফাঁক দিয়ে। দু’জনে পা মেলল হানিমুন যাত্রায়। হাঁটতে হাঁটতে একসময় একটা গ্রামে এসে পড়ল। হঠাৎ কানে এল ভীষণ কোলাহল। মানুষজন চেঁচামেচি করছে।বাঘ ভয়ে ফিসফিস করে বলল——শোন, এরা মানুষ। আমাদের দেখলে বাঘের খবর শেষ। চল ফিরে যাই।কিন্তু বাঘিনি কৌতূহলী হয়ে উঠল। বলল——না না, এত দূর আসার পর খালি হাতে ফিরব কেন? চল দেখি, কী হচ্ছে।দু’জনে আড়ালে গিয়ে লুকিয়ে দেখল। সেখানে বিশাল রাজনৈতিক সভা বসেছে। লাল-নীল ব্যানার, মাইকে কড়মড় শব্দ, আর হাজারো মানুষের ভিড়।এক নেতা মঞ্চে উঠে হাত তুলে চিৎকার করে বলল——শোনো সবাই! আমাদের দলকে শেষ করে দিতে চায় বিরোধীরা। আমরা কি ভয় পাই? না! আমরা সবাই বাঘের বাচ্চা!এই কথা শুনেই বাঘিনির চোখ ছলছল করে উঠল। সে বাঘকে খোঁচা মেরে বলল——ওরে ধূর্ত! এ জন্যই না তুই মাঝে মাঝে বনের বাইরে পালিয়ে আসিস! আজ বুঝলাম—এখানেই তোর আরেক সংসার। শয়তান, লুকিয়ে লুকিয়ে আরেক সংসার চালাস, আর তারাই এখন সভায় বলে বেড়াচ্ছে “আমরা সবাই বাঘের বাচ্চা”! হায় হায়, আমার কপাল! আমি ভেবেছিলাম ভাল বাঘের সাথে ঘর বেঁধেছি, আর দেখি লুচ্চার সাথে ঘর বেঁধে জীবনটাই শেষ করেছি।বাঘ হতভম্ব। সে তো কিছুই বোঝে না। মুখ চুন করে বলল——আরে না না, আমি শপথ করে বলছি, আমি তোমাকেই শুধু ভালবাসি। আর কোন বউ নেই আমার।কিন্তু কে শোনে কার কথা! রাগে-দুঃখে বাঘিনি গর্জে উঠল——চুপ! আমি চললাম, তোর সাথে আর সংসার নয়।এ কথা বলে বাঘিনি রাগে গড়াগড়ি খেতে খেতে বনমুখী চলে গেল।অসহায় বাঘ দাঁড়িয়ে রইল আর মনে মনে ভাবতে লাগলো, আমরা বনের পশুরা বেশি মূর্খ নাকি, মানুষেরা?