

#গল্পআত্মহত্যা আফছানা খানম অথৈরমিজ মিয়ার বয়স আশি +।স্ত্রী মারা গেছেন আট বছর আগে।এরপর থেকে শুরু হয় তার প্রতি সন্তানের অনাগ্রহ। বাবা বুড়ো হয়ে গেছে।এখন কাজকর্ম করতে পারে না।সে এখন তাদের কাছে একটা বোঝা।বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় বৃদ্ধ পিতামাতা কিছুকিছু সন্তানের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।প্রায় সময় দেখি পত্রিকার হেডলাইনে বড় বড় অক্ষরে এই নিয়ে নিউজ প্রকাশ করা হয়।সন্তান তার বৃদ্ধ পিতামাতাকে রাস্তায় ফেলে রেখে গেছে।দিনদিন মানুষ কেমন জানি স্বার্থপর অমানুষে পরিণত হচ্ছে।মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলছে। আগের মতো মায়ামতা, শ্রদ্ধা, আর ভালোবাসা নেই বললে চলে।এখন কারো প্রতি কারো মায়া, ভালোবাসা,শ্রদ্ধা কাজ করছে না।স্বার্থ আর দ্বন্ধ লেগে আছে প্রতিটি পরিবারে।পিতামাতার প্রতি সন্তানের অনাগ্রহ,ভাইয়ের সাথে বোনের দ্বন্ধ,ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া,বউ শ্বাশুড়ির অমিল,ইত্যাদি। সুখ শান্তি আস্তে আস্তে যেন বিলিন হতে চলেছে। পরিবারে মানুষগুলো স্বার্থ আর টাকার পেছনে ছুটছে।আজ রমিজ মিয়ার অবস্থাও সেইম।স্ত্রী মারা যাবার পর অনাদর আর অবহেলায় আট বছর কাটলেও এখন তিনি সবার চোখের শূল।সন্তান কিম্বা বউ কেউ তাকে ভালো চোখে দেখতে পারে না।কেউ তাকে খেতে পরতে দিচ্ছে না।একবেলা খাই আর একবেলা না খেয়ে থাকে।মাঝে মাঝে উপোষ ও থাকেন।কিছু বললে,বের করে দেয়ার হুমকি দেন।নিরুপায় রমিজ মিয়া আজ দুদিন ধরে না খেয়ে আছেন।বউ খেতে দিচ্ছে না।বুড়ো মানুষ না খেয়ে আর কদিন থাকবেন।তাই বউয়ের কাছে একমুঠো ভাত চাইলেন।বউ ক্ষুদ্ধ হয়ে বললেন,আপনাকে আমরা আর খাবাবার পারুম না।যেদিকে দুচোখ যাই চইল্যা যান।ক্ষুধার জ্বালা বড় জালা সহ্য করা দায়।রমিজ মিয়া পূণরায় ভাত চাইলেন।বউ আবার ও একই বাক্য পেশ করলেন।ছেলে বাড়ি আসলে বাবা বউয়ের বিরুদ্ধে নালিশ দিলেন।ছেলে বউকে দুচার কথা বলবে, তা না।বরং বউয়ের সুরে তাল মিলিয়ে বললেন,আমার বউ ঠিক কথা কইছে।সংসার চালাতে পারতাছি না,তোমারে খাওয়ামু ক্যামনে?যেদিকে দুচোখ যাই চইল্যা যাও।তোমারে আর খাওয়াবার পারুম না।ছেলের মুখের কথা শুনে বাবার যেন হার্ট এট্যাক হলো।তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন।কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললেন।যে সন্তানকে তিনি জন্ম দিলেন,সে সন্তান আজ তাকে ঘর থেকে বের করে দিচ্ছে।কথাটা ভাবতেই চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ল।কী বলবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না।থবনে হারিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।কিন্তু সন্তানের সহ্য হলো না।সে বাবাকে এক প্রকার জোর করে ঘাড় ধরে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজায় খিল দিলো।এতরাতে বাবা কোথায় যাবে? দরজায় বাহিরে সারারাত বসে রইল।চোখের জলে বুক ভেসে যাচ্ছে।মনের দু:খ মনে পুষে রেখেছে।শোনার কেউ নেই।সকাল হলে যখন বউ,ছেলে দেখতে পেল। শুরু হলো আবার ঝগড়া।ঝগড়া চরম লেভেলে চলে গেল।বউ ছেলে দুজনের এককথা,বাবাকে তারা ঘরে জায়গা দিবে না।রমিজ মিয়া থাকার জন্য অনেক অনুনয় বিনয় করলো।কোন লাভ হলো না।এক প্রকার জোর করে ছেলে বাবাকে তাড়িয়ে দিলেন।একবুক দুখ নিয়ে রমিজ মিয়া রওয়ানা করলো অজানার উদ্দেশ্যে। সকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা হলো,রমিজ মিয়া যাবেন কোথায়?রেল লাইনের একপাশে ঘাপটি মেরে বসে রইলেন।মনে মনে ভাবেন,যখন নিজের ছেলে বের করে দিয়েছে,আর দেখবে কে?এখন খাব কী?যাব কোথায়?এসব ভাবনা তাকে খুব ভাবিয়ে তোলে।কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রমিজ মিয়া।জীবনের প্রতি অনীহাভাব চলে আসে।বেঁচে থাকতে আর ইচ্ছে করে না।তখনি রেল লাইনের মাঝখানে গিয়ে শুয়ে পড়েন।অপর প্রান্ত থেকে গড়গড় শব্দ করে ছুটে আসছে ট্রেন।চোখের পলকে রমিজ মিয়ার নিথর দেহ পিষে রক্তাত্ব হয়ে গেল।রক্তে লাল হয়ে গেল,রেল লাইনের গলি। চারদিক থেকে ছুটে আসল লোকজন।দু:খে ক্ষোভে, অপমানে,\"আত্মহত্যা\" করলো রমিজ মিয়া।এই নিয়ে নিউজ করা হলো বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়।
0 Comments