এলিয়েনের বাচ্চা পালন

রাত তখন প্রায় বারোটা। আকাশে মেঘহীন নীলাভ আলো, তারারাও যেন অস্বাভাবিক ঝলমল করছে। গ্রামের পাশের খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে হঠাৎই আমি দেখলাম একটা অদ্ভুত আগুনের রেখা আকাশ ছিঁড়ে নিচে নামছে। মুহূর্তের মধ্যে শব্দ করে সেটি পড়ল পাশের জঙ্গলঘেঁষা ফাঁকা জায়গায়।ভয়ে ভয়ে কাছে যেতেই দেখি—একটা অদ্ভুত যন্ত্র, গোলাকার, ধাতব মতো কিন্তু জ্যোৎস্নায় কেমন উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। যন্ত্রটার ভেতর থেকে ক্ষীণ কান্নার শব্দ আসছে। বুক কাঁপতে কাঁপতে ঢুকলাম ভেতরে, আর যা দেখলাম—একেবারেই অবিশ্বাস্য। ছোট্ট, সবুজাভ রঙের এক শিশু, বড় বড় চোখ, মুখটা মানুষের মতো হলেও অদ্ভুত আলো ছড়াচ্ছে।আমি ওকে কোলে তুলে নিলাম। কেমন জানি নিজের সন্তানের মতো মনে হল। ভয়ে পুলিশ ডাকতে পারতাম, বা সবাইকে খবর দিতে পারতাম, কিন্তু করলাম না। গোপনে বাসায় নিয়ে এলাম।শুরু হল “এলিয়েনের বাচ্চা পালন।”প্রথম দিকে সে শুধু অদ্ভুত শব্দ করত, খাওয়ানোর জন্য গরুর দুধ দিলাম—খেতে চাইলো না। পরে দেখলাম, ও কেবল আলো শোষণ করে বাঁচে। তাই প্রতিদিন জানলার ধারে বসিয়ে সূর্যের আলোতে রাখতাম। ধীরে ধীরে সে হাঁটতে শিখল, আমার ভাষাও শিখে ফেলল। অদ্ভুত ব্যাপার হল, ও যখন হাসত, তখন চারপাশ আলোকিত হয়ে উঠত।কিন্তু সমস্যা হল, গ্রামের লোকেরা সন্দেহ করতে শুরু করল। রাতে বাড়ি থেকে নীল আলো বের হত, শিশুদের খেলার সময় এক অদ্ভুত শব্দ শোনা যেত। একদিন গ্রামের কয়েকজন চুপিসারে দেখে ফেলল। আতঙ্কে তারা বলল, “এটা শয়তানের বাচ্চা, এটাকে তাড়াতে হবে!”আমি প্রাণপণে রক্ষা করলাম। ওর চোখে তখন জল, বলল, “বাবা, আমার আসল ঘর অনেক দূরে… তারা-পারের দেশে। একদিন আমাকে ফিরে যেতে হবে।”শেষ পর্যন্ত সত্যিই সে দিন এল। আবারও সেই আগুনের রেখা নেমে এল আকাশ থেকে। গোলাকার যন্ত্র নেমে এলো উঠোনে। আমার কোলে থাকা বাচ্চাটি বিদায় নিল অশ্রুভরা চোখে, আর বলল, “তুমি মানুষ, কিন্তু তুমি-ই আমার আসল অভিভাবক।”যন্ত্রটা আকাশে মিলিয়ে গেল, আমি দাঁড়িয়ে রইলাম শূন্যে তাকিয়ে। চারপাশ নিস্তব্ধ।তবুও মাঝে মাঝে মনে হয়—জানলার ধারে আজও নীলাভ আলো ঝিলিক দেয়।