অহনা শুরুতে ভেবেছিল সবটাই এক ধরনের মজা, হয়তো বন্ধুদের মধ্যে কেউ তার সাথে খেলছে। কিন্তু বারবার একই হাতের লেখা, অদ্ভুত রকম গভীর অনুভূতির চিঠিগুলো তার ভেতর কেমন অস্থিরতা তৈরি করতে লাগলো।প্রথম চিঠি সে ছিঁড়ে ফেলেছিল রাগ করে। কিন্তু দ্বিতীয় চিঠি, ইতিহাস বইয়ের পাতার ভেতরে রাখা, সেটা তার বুকের ভেতর কেমন অদৃশ্য এক কম্পন তুলে দিল। লিখেছিল—“তুমি যত খুঁজো না কেন, আমাকে পাবে না। অথচ আমি তোমার পাশেই আছি—তোমার ছায়া হয়ে।”অহনার বুকটা কেঁপে উঠল। কে হতে পারে? রাকিব? না, রাকিব এমন ছায়ার মতো নীরব প্রেমিক হতে পারে না। ওর আচরণে আছে চটুলতা, আত্মবিশ্বাস, দাপট। এই হাতের লেখায় আছে নিঃশব্দ ভাঙচুর, বুকফাটা কষ্ট।দিন যায়। চিঠি আসে। কখনো লাইব্রেরির বইয়ের ভেতরে, কখনো খাতার পাতার ফাঁকে, আবার কখনো ক্লাসের বেঞ্চের নিচে। অথচ একবারও তাকে ধরতে পারলো না অহনা।চিঠিগুলোতে ছিল এক ধরনের নিঃশেষিত মমতা—“আমি জানি, তুমি আমাকে কোনোদিন চাইবে না। আমি জানি, তোমার চোখের আকাশে আমার কোনো জায়গা নেই। তবুও তোমার দিকে তাকিয়ে বাঁচতে আমার ভালো লাগে। আমি শুধু চাই, তুমি থাকো ভালো, আমি দূরে থেকেই তৃপ্ত থাকবো।”অহনা মাঝে মাঝে অকারণে বিরক্ত হতো। মনে হতো—এ এক ধরনের কাপুরুষতা! সাহস নেই সামনে আসার, অথচ প্রেমে আছড়ে পড়তে চায়। রাগে চিঠি ছুঁড়ে ফেলে দিত, তবুও রাত গভীর হলে বুকের ভেতর এক অদৃশ্য টান অনুভব করত। কে সে? কেন এভাবে?একদিন হঠাৎ করেই চিঠি আসা বন্ধ হলো। দিন গড়িয়ে সপ্তাহ, সপ্তাহ গড়িয়ে মাস। আর কোনো চিঠি নেই, আর কোনো শব্দ নেই। অহনা প্রথমে স্বস্তি পেলেও ধীরে ধীরে বুকের ভেতর এক অদ্ভুত শূন্যতা তৈরি হলো। মনে হতো, কেউ ছিল খুব কাছে, হঠাৎ নেই।সে বুঝতে পারলো—অদৃশ্য কোনো প্রেমিক তার জীবনে এক অচেনা ছায়ার মতো হেঁটে গেছে।বছর দুই পরে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হলো। অহনা চাকরিতে ঢুকে পড়লো। একদিন পুরনো লাইব্রেরিতে গিয়েছিল। বইয়ের তাক ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাৎ একটি পুরনো বইয়ের পাতার ভেতর আরেকটি হলুদ হয়ে যাওয়া চিঠি খুঁজে পেল। সেই একই হাতের লেখা—“অহনা, হয়তো তুমি আমাকে কোনোদিন জানতে পারবে না। হয়তো আমি আছি তোমার অচেনা ভিড়ের মধ্যে, কিংবা নেইও। কিন্তু বিশ্বাস করো, তোমার ছায়া হয়ে থাকাটাই আমার পরম প্রাপ্তি ছিল। তুমি সুখে থেকো, আমি অনন্ত অপ্রাপ্তির মাঝেই তৃপ্ত।” যার ঠিকানা কিছু দিনের মধ্যেই আকাশে মেঘ বাড়িতে ঠিক হয়ে গেছে, সে কি করে মাটির পরীর সামনে আসবে। তাই ইচ্ছে থাকা সত্বেও সামনে আসার সাহস হল না!চিঠি হাতে নিয়ে অহনা অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকলো। বুকের ভেতর হাহাকার জমলো—চোখ থেকে কফোটা জলও গড়িয়ে পড়লো কিন্তু সে জলের ভাষা সে বুঝতে পারলো না,,,,
অহনা শুরুতে ভেবেছিল সবটাই এক ধরনের মজা, হয়তো বন্ধুদের মধ্যে কেউ তার সাথে খেলছে। কিন্তু বারবার একই হাতের লেখা, অদ্ভুত রকম গভীর অনুভূতির চিঠিগুলো তার ভেতর কেমন অস্থিরতা তৈরি করতে লাগলো।প্রথম চিঠি সে ছিঁড়ে ফেলেছিল রাগ করে। কিন্তু দ্বিতীয় চিঠি, ইতিহাস বইয়ের পাতার ভেতরে রাখা, সেটা তার বুকের ভেতর কেমন অদৃশ্য এক কম্পন তুলে দিল। লিখেছিল—“তুমি যত খুঁজো না কেন, আমাকে পাবে না। অথচ আমি তোমার পাশেই আছি—তোমার ছায়া হয়ে।”
0 Comments