গল্প ‘কাজল কাহিনী’---’নাদিয়া নওশাদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে অবস্থিত বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের সমাজবিজ্ঞান অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী কাজল চৌধুরী। ফর্সা,ছিপছিপে গড়ন আর এক মাথা ভর্তি লম্বা চুল। সব মিলিয়েই এক ঝলক দেখলেই যে কারোরই কাজলকে খুব পছন্দ হবে। পড়াশোনায় তুখোড় আর তার সাথে দূর্দান্ত নাচ করে সে। বয়স মাত্র বাইশ বছর। কলেজ আর নাচের ক্লাস নিয়েই দিনাতিপাত কাজল রাণীর! সেদিন কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে একটি একক নৃত্য ও একটি দলীয় নৃত্য পরিবেশন করলো কাজল। জমকালো সাজ-পোষাকে অসাধারণ দেখতে লাগছিল কাজল কে। ঐ অনুষ্ঠানেই অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিল সোহাগ, তাঁর মা ও বোন সুরভী। কাজের পরিবেশনায় মন্ত্রমুগ্ধ সোহাগ। ব্যাপারটা বুঝতে আর বাকি রইল না সুরাইয়া আহমেদ অর্থাৎ সোহাগের মায়ের। কাজলের বান্ধবী ইরার মাধ্যমে কাজলের সম্পর্কে সবকিছু জেনে এক সপ্তাহের মাথায় কাজলের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে উপস্থিত। তবে বিয়ের পর কাজলের নাচের ব্যাপারে সোহাগের বাবা,চাচা একটু আপত্তি জানিয়েছেন তারপরও চাচী,বোন সবাই মিলে কাজল কে হীরের আংটি পরিয়ে তবেই বাসায় ফিরেছে। অতঃপর বেশ ধুমধাম করে সোহাগ আর কাজলের বিয়ের সানাই বেজে উঠল। বিয়ের পর তারা দুজন বিভিন্ন জায়গায় বেড়িয়েছে।সব মোটামুটি ভালোই চলছিল। একদিন কাজলের বন্ধুরা কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে খুব করে নাচ পরিবেশন করার জন্য চেপে ধরলো। সোহাগের সাথে বিষয়টি আলাপ করাতে সে এক কথায় পরিষ্কার না জানিয়ে দিলো। সাথে সোহাগের বাবা আনিস সাহেব ও ছেলের সুরে সুর মিলিয়ে নিজের আপত্তির কথা জানালেন। তবে কাজলও ছেড়ে দেয়ার পাত্রী নয়। চুপি চূপি বাড়ির সবার নজর এড়িয়ে এটা সেটা বলে বিভিন্ন বাহানায় কলেজে গিয়ে রিহ্যার্সাল করেছে। এরই মাঝে সুরভী তার স্কুলে যাওয়ার পথে কাজলকে নাচের সাজ-পোষাকে কাজল কে দেখে ফেলে।ব্যস সেদিনই বিষয়টা সোহাগের কানে চলে যেতেই কাজ থেকে বাড়ি ফিরে কাজলের সাথে তুলকালাম বাঁধিয়ে দিলো। এক পর্যায়ে সোহাগ কাজলের গায়ে হাত তোলে আর কাজল প্রচন্ডভাবে আঘাত পায়। এরপর কাজলের বাবা বিষয়টি জানার পর কাজল কে বাড়ি নিয়ে যায়। আর সাথে সাথে পুলিশে সোহাগের নামে বঁধু নির্যাতনের মামলা করে। অনেক চিন্তা-ভাবনার পর কাজল সোহাগ কে বিবাহ-বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠায় এবং পরবর্তীতে তা বাস্তবায়ন করে। এতকিছুর পর আজ কাজল যেন সুবিশাল আকাশে মুক্ত,স্বাধীন বিহঙ্গ!
0 Comments