

মা বলে খিটখিটে, কিন্তু কেউ বোঝে না সে কতটা কাঁদে…”সন্তান জন্মানোর পর একটা মেয়ের জীবন বদলে যায়—এই কথাটা সবাই বলে।কিন্তু কেউ বলে না, সেই বদলে যাওয়া জীবনে তার নিজের জন্য ঠিক কতটুকু জায়গা বাঁচে?সে কেন খিটখিটে হয়ে গেছে?কেন একটুতেই রেগে যাচ্ছে?কেন আগের মতো হাসছে না, কথা বলছে না?এই প্রশ্নগুলো আমরা করি ঠিকই,কিন্তু কখনো কি প্রশ্ন করি—সে কি ভালো আছে?সে যে নতুন মা হয়েছে, তার একটা নতুন পরিচয় তৈরি হয়েছে ঠিকই,কিন্তু সেই নতুন পরিচয়ের পেছনে কতটা ত্যাগ, কতটা কষ্ট, কতটা নিঃস্বতা জমে আছে—তা কেউ খুঁজে দেখে না।দিনের পর দিন, বছরের পর বছরসে ঘুমহীন রাত পার করে দেয় শুধু তার সন্তানের এক ফোঁটা হাসির জন্য।চোখে থাকে হাজার রাতের ঘুমের অভাব,পেটে খিদে, তবুও সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে বাচ্চার পাশে—তাকে খাওয়ানোর জন্য, ঘুম পাড়ানোর জন্য।বাড়িতে লোকজন থাকুক আর কাজের লোক থাকুক,তার সন্তানের প্রয়োজন, অপ্রয়োজন—সব কিছু দেখতে হয় তাকেই।কারণ, “মা” হওয়া মানেই যেন চব্বিশ ঘণ্টার ডিউটি,কোনো ছুটি নেই, কোনো রেস্ট নেই, কোনো পারিশ্রমিক নেই।বাচ্চার জন্য আয়া রাখলে, সংসারের কাজে বুয়া রাখলে আমরা সবাই বেতন দিই,কিন্তু একজন মা? একজন ঘরের বউ? তার সব কাজই যেন “স্বাভাবিক”।হ্যাঁ, সমাজ বলবে—“এটাই তো তার দায়িত্ব, এটা তো তার কর্তব্য!”ঠিকই, এটা তার দায়িত্ব।কিন্তু দায়িত্ব পালন করতে করতে সে যে কতটা ভেঙে পড়ে, সেটা কি আমরা একবারও ভেবেছি?সে তো মানুষ, সে কি ক্লান্ত হতে পারে না?সে কি বিরক্ত হতে পারে না?তার কি কষ্ট হয় না?তাকে আমরা বেতন দেবো না—সেটাই স্বাভাবিক।কিন্তু তার কষ্টগুলোকে, তার আবেগগুলোকে, তার নিঃস্ব হয়ে যাওয়া অনুভবগুলোকে তো অন্তত একটু সম্মান করতে পারি না?একটা মা যখন নিজের ঘুম, নিজের শরীর, নিজের পছন্দ, নিজের স্বাধীনতাকে বিসর্জন দিয়ে সন্তানের প্রতিটা হাসি, প্রতিটা আরামের জন্য লড়ে যায়—তখন কি সে শুধুই দায়িত্ব পালন করে?না, সে ভালোবাসে।সে নিঃস্ব হয়েও হাসে।সে ভাঙা শরীরে, ভাঙা মনে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে সন্তানকে আগলে রাখে।তবুও দিন শেষে সেই মাকেই শুনতে হয়—“তুমি তো সারাদিন ঘরেই থাকো, তোমার এত ক্লান্তি কিসের?”“সবকিছু তো ডিজিটাল, কাজের লোক আছে, বাচ্চাকে দেখার লোকও আছে—তোমার এত খিটখিটে মেজাজ কেন?”এই কথাগুলো যখন তার কানে আসে, তখন সে ভেতরে ভেঙে পড়ে।কারণ কেউ জানে না,সে কতটা একা,সে কতটা নিঃস্ব,সে কতটা অবহেলিত।সে নিজের ভালোবাসা দিয়ে একটা জীবন গড়ে তোলে,আর আমরা তার সেই পরিশ্রম, সেই আত্মত্যাগকে কেবল “দায়িত্ব” বলে পাশ কাটিয়ে যাই।একজন মা—সে বেতন চায় না,সে চায় একটু বোঝা, একটু সহানুভূতি, একটু প্রশ্রয়।সে চায় কেউ একজন বলুক—“তুমি অনেক কষ্ট করো, আমি বুঝি।”আমাদের সমাজ যদি এতটুকু করতে পারে—তাহলেই হয়তো একজন মা আর কাঁদবে না।হয়তো সে আবার একটু নিজের জন্য হাসবে।⸻এই লেখা শুধু একটি মায়ের নয়, হাজারো মায়ের কথা—যারা প্রতিদিন ঘরে বসেই একটা পৃথিবী তৈরি করছে, অথচ পৃথিবী তাদের মূল্য দিতে ভুলে যাচ্ছে।😊🙏🏻❤️🙏🏻❤️
0 Comments