লা মিজারেবল্ 2024স্বাধীনতার মত বড় বড় life changing ঘটনা গোটা শতাব্দীতে একটা জাতির জীবনে আর কয়টাইবা ঘটে? যদি কখনও ঘটেই যায় এক সময় ঠিকই কালের গর্ভে তা হারিয়ে যেতে থাকে। নতুন নতুন অভ্যাসে মানুষ আবারও নতুন করেই অভ্যস্থ হয়ে উঠতে থাকে। ইতিহাস এর পাতায় পাতায় ধুলো জমতে থাকে যেমন করে জমতে থাকে মানুষের মন ও মগজে। তারা ভুলে যেতে থাকে কি কঠিন সময়কে challenge করেই না তারা কোন একদিন ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার সোনার হরিণটিকে। সেই হরিণটি আজ তাদের নিজেদের বানানো কারাগারেই অবরুদ্ধ। আর যার মুক্তির আকাঙ্ক্ষাতে সময়টাও মিজারেবল্।জীবনের সুর যতই কেটে যাকনা, তবু জীবন তার নিজস্ব গতিতেই এগিয়ে চলে। এই গতির ছন্দ বোধহয় কখনোই থামেনা। কাল পার হয়ে, পৃথিবীর মানচিত্র ঘুরে মুক্ত স্বাধীন সেই হরিণটির খোঁজে একজনের গতির ছন্দ একসময় ঠিকই ছুঁয়ে যায় অন্য একজনকে। সেখান থেকে আরো অনেককে। একসময় দেশের আনাচে কানাচে মানুষের হৃদয়ে চেপে সে ছন্দ আরও আরও মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে থাকে। জন্ম নেয় ছোট্ট বিপ্লব শিশু।জীবনের অচেনা গলিঘুঁচির মাঝে শিশুটির পথচলা কেমন হবে, আদোতেই সে বেড়ে উঠতে পারবে কি না সেই প্রশ্ন সবসময়ে থেকেই যেত যদি না খেটে খাওয়া মানুষদের দৈনন্দিন জীবন যাপন হোত বাধাগ্রস্ত, বিপদগ্রস্থ। কেটে যাওয়া সেই সুরে ভেসেই কিভাবে যেন তাদের মাঝে শিশুটি খুব দ্রুতই খুঁজে পায় তার আশ্রয়। তার বেড়ে ওঠা তাই চলতে শুরু করে এই সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষগুলোর মাঝেই।ছোট্ট শিশুটির শৈশবকাল হয় ভয়াবহ সুবিধা বঞ্চিত। পদে পদে সে হয় বাধার সম্মুখীন। একসময় হতাশাগ্রস্থ কবি সাহিত্যিকেরা সেই শিশুর খোঁজ কিভাবে যেন পেয়ে যায়। French Revolution এর দিনগুলোতে Victor Hugo যেমন পেয়েছিলেন তার খোঁজ । দুই শতাব্দী পেরিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রের অন্য প্রান্তে তাকে নিয়ে নষ্ট হতে থাকে দিস্তা দিস্তা কাগজের পাতা। ভারি হতে থাকে বহু রাত না ঘুমানো চোখের পাতা। অসংখ্য লেখনি, শিল্পীর রঙ তুলিতে রাজপথের আনােচকানাচে, ব্যানার ফেস্টুন দেয়ালচিত্র পিলার আর স্তম্ভের গ্রাফিতিতে , গায়কের গানে গানে, স্যোশাল মিডিয়ার পোষ্টে পোষ্টে লাল কালো রঙের অস্বাভাবিক ব্যবহারে এবং লেখনিতে ঝড় তোলার মধ্য দিয়েই শিশুটি একটু একটু করে বড় হয়ে বালকে রূপ নেয়। যে বালকের শৈশব কেটেছে সমাজের কথিত তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণীর নাগরিকদের এবং অনিবার্য ভাবেই সৃষ্টিশীল মানুষদের মাঝে, পদে পদে তাকে তো বাধার সম্মুখীন হতেই হবে।এরকম সময় থেকেই সমাজের মাথাদের মাথাব্যাথা শুরু হয় সেই বালককে ঘিরে । যাদের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বহু মানুষের চোখের পানি, ঘাম আর রক্ত ঝরে তারা তো আর নিজেদের মধ্যে সেই বালকটিকে স্থান দিতে পারেন না। স্ট্যাটাস বলে তো একটা ব্যাপার আছে নাকি। যে ব্যাপারটাকে মানার ব্যাপারে দেশের এই মস্তক শ্রেণির এলিটদের মাঝে কোনো সরকারি বা বিরোধী দল নেই। ভেদাভেদ ভুলে সবাই শুধুই এলিট।বালকটি যেন কোনক্রমেই বেড়ে উঠতে না পারে সেজন্য তাকে গলা টিপে ধরার সকল ব্যবস্থা তারা করে দেন। কিন্তু সরাসরি তো আর গলা টিপে ধরা যায় না লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে। মিডিয়া আছে, মানুষজন জেনে যাওয়ার ভয় আছে। তাই প্রহসনমূলক নিজস্ব আইনি ব্যবস্থার জোর খাটিয়ে ময়দানে ছেড়ে দেওয়া হয় ব্যক্তিগত ও পারিবারিক মেন উইথ ইউনিফরম এবং অতি ইউনিক \"হেলমেট\" বাহিনী। নিজেদের অবস্থান তো আর একটা বালকের জন্য নড়বড়ে করে দেয়া যায় না। সাথেসাথে নিজেদের কর্মকাণ্ডের সাফাই দিতে শুরু করা হয় আলোচনা, টক শোগুলোর বহর, মতামত, পাল্টা মতামত, যুক্তি তক্কো গল্প।যখন \'একজন\' মানুষের জীবনের সুর কেটে যায়, তাতে অন্যদের কিছুই যায় আসেনা। কিন্তু, সুর যদি কেটে যায় সমাজের, তখন কেউই বোধহয় আর নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারে না। জীবনের সব দিকেই বিপদ লুকিয়ে আছে। আছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শারীরিক - মানসিক বিপর্যয়, ইচ্ছা ও ইচ্ছা পূরণের মাঝের চিরায়ত দ্বন্দ্ব। এই সবকিছুর পরেও মানুষ টিকে থাকতে চায়। আর সবচেয়ে বেশি বোধহয় চায় স্বাভাবিক সচল একটা জীবন যাপন। কিছু মানুষের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার আর অল্প কিছু মানুষের ক্ষমতায় ওঠার লালসার তীব্র মূল্য দিতে গিয়ে যখন সেই স্বাভাবিক জীবন যাপন পদ্ধতি পুরোপুরিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন সকল পেশা - শ্রেণীর মানুষের মাঝেই হঠাৎ করে যেন সেই বালকটি তার কৈশোরপ্রাপ্ত হয়।আঘাত যখন প্রথম তার চেহারা দেখায় মানুষের মাঝে, বেশিরভাগ মানুষই তখন ভয় পায়। ভয় পায়, আঘাত যদি আরও তীব্র হয়। তবে, সহ্যের একটা সীমা বোধহয় থাকে মানুষের। আঘাত যদি একের পর এক আসতেই থাকে, তখন ভয়, আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা এগুলো কিভাবে কিভাবে যেন হারিয়ে যায় মানবিক আবেগ থেকে। আর ইমোশন থেকে এগুলোর বিয়োগে যা কিছু অবশেষ থেকে যায় তা হলো, আঘাতের প্রতি তীব্র ঘৃণা, বিতৃষ্ণা, রেজিস্টেনস্, ফাইট ব্যাক। মনে জেগে ওঠে আঘাতকে আঘাত করার তীব্র ইচ্ছা। ইচ্ছাটাকে মূল্য দিতে গিয়ে বেড়ে যায় আরো আরও আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু সমানুপাতিক হারে ইচ্ছাটাও তীব্র হতে থাকে আরও অনেক বেশি।\"সমাজের যাই হোক না কেন, আমার কি? আমার বোধহয় কিছুই হবে না। সমাজ যেদিকে যায় যাক না কেন।\" এই ধরনের মানসিকতার লোকগুলোর মাঝেও এরকম সময়ে কিশোর ছেলেটি পৌঁছে যায় তার প্রথম যৌবনের বার্তা সঙ্গে নিয়ে। তারা যেন সন্ধান পায় নতুন কোনো ভোরের।বিভিন্ন এলাকার আঘাতে আঘাতে জর্জরিত মানুষদের হাহাকার যেন একসুরে মিশে যায়। দূরের মানুষগুলোও- যাদের সাথে কখনো হয়তোবা দেখাই হয়নি, পরিচয় তো অনেক পরের ব্যাপার, কিভাবে কখন যেন তারাও খুব আপন হয়ে যায়। এরকম বহু মানুষের দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয়ে যাওয়া বাতাসের মাঝেই কিশোর ছেলেটি হঠাৎই যেন পূর্ণ যৌবনপ্রাপ্ত হয়ে যায়।তার প্রথম যৌবনের ছোঁয়াতেই যেন ব্যাক্তিগত দুঃখকে হতাশার উর্দ্ধে উঠিয়ে, ঘরের কোণের একজন মানুষও রাজপথে শামিল হয়ে যায় হাজারো মানুষের ভিড়ে। তাদের একটাই চাওয়া, অনেক তো মরেছি, রক্তাক্ত হয়েছি আরো বেশি, এবার একটু বাঁচা যাক। এবার মৃত্যুর ভয়াবহ রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তাকে বরণ করে নেওয়াই হোক বেঁচে থাকার নতুন এক মানে। যে অনুভূতির তাড়নাতেই কাতারে কাতারে এক হয়ে রাজপথে নতুন এক সুরের সৃষ্টি করা শিশু কিশোর যুবক তরুণ এমনকি বৃদ্ধ মানুষদেরও। এধরনের এক হয়ে যাওয়া বহুপ্রান এর মিলনমেলাইই তো আমরা দেখেছি ইতিহাসের পাতায় পাতায়, সকল অমাবস্যার দিনে। কখনো তা আমাদের সামনে ধরা দিয়েছে ৪৭ এর ইংরেজ শেকল ভাঙার দিনরূপে, কখনো বায়ান্নর মাতৃভাষা রক্ষার দাবিরূপে, কখনো বা গণ অভ্যুথ্থান রূপে উনসত্তরে, কখনো বা মুক্তির যুদ্ধ রূপে একাত্তরে। সেগুলো ছিল পরাধীন দেশকে স্বাধীনতার সূর্যে উদ্ভাসিত করার দিন। স্বাধীন দেশে তো সেই একই অবস্থা হবার কথা নয়।তবে কেন এই চব্বিশ এ এসেও আমাদের এখনও দেখতে হচ্ছে শোষক শোষিতের সেই একই চিত্র আধুনিকতার নতুন বোতল এর ব্যানারে?ক্ষমতাসীন মানুষ এবং ক্ষমতায় উঠতে চাওয়া মানুষ, আপনারা সবাই কি দেখতে পান না যে, আজ আবার সেই অমাবস্যার দিন আমাদের মাঝে চলে এসেছে। মাত্রইতো একটি দুর্বিষহ দানবীয় শক্তিকে হাজারো প্রাণের অকাল প্রয়াণের বিনিময়ে উৎখাত করেছি আমরা। এরই মাঝে আপনাদের পুরাতন বিভেদের পাহাড় আর নতুন করে সৃষ্ট মীমাংসাহীনতার অভাব আবারও নতুন করে দেখা দিতে শুরু করেছে? আপনাদের ইচ্ছার মূল্য দিতে গিয়ে মিজারেবেল এই ক্ষমতার পালাবদলের দিনগুলো আজ সাধারণ মানুষের রক্তে এতো বেশি লাল হয়েছে যে, লাল মানে এখন আর শুধু রক্তের রং নয়, লাল হয়ে গেছে রাগান্বিত জনতার মিছিলের রং, আমাদের জ্বলন্ত চেতনার রং। যা দিনে দিনে ঘন হয়েছে আরও আরও বেশি। লাল মানে \"সূর্য উঠবেই\"।কালো মানে কিন্তু এখন আর শুধুই অন্ধকার নয়। কালো মানে কিন্তু আজ আশারও প্রতীক। অন্ধকার সুরঙ্গের দূর থেকে আসা আলোর মতো সাধারণ মানুষের মনে প্রবোধ দেয়া, অন্ধকার রাত পার হয়ে যাবেই। আর রাত পেরুলেই সূর্যের আলো আবার ঝকঝক করবে। কখনো বৃষ্টি হবে, সিক্ত মাটিতে ফসলের বীজের সাথে করে আমাদের স্বপ্নও বড় হবে। রোদ বৃষ্টি মিলে মিশে একাকার হয়ে সবার স্বপ্নের ফসল ফলবে নতুন করে গড়া আমাদের স্বপ্নের রঙধনু পথে। যে পথে হয়তো আবারও মুক্ত ভাবেই দেখতে পাবো আমাদের চির আরাধ্য সেই সোনার হরিণটিকে।।
লা মিজারেবল্ 2024স্বাধীনতার মত বড় বড় life changing ঘটনা গোটা শতাব্দীতে একটা জাতির জীবনে আর কয়টাইবা ঘটে? যদি কখনও ঘটেই যায় এক সময় ঠিকই কালের গর্ভে তা হারিয়ে যেতে থাকে। নতুন নতুন অভ্যাসে মানুষ আবারও নতুন করেই অভ্যস্থ হয়ে উঠতে থাকে। ইতিহাস এর পাতায় পাতায় ধুলো জমতে থাকে যেমন করে জমতে থাকে মানুষের মন ও মগজে। তারা ভুলে যেতে থাকে কি কঠিন সময়কে challenge করেই না তারা কোন একদিন ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার সোনার হরিণটিকে। সেই হরিণটি আজ তাদের নিজেদের বানানো কারাগারেই অবরুদ্ধ। আর যার মুক্তির আকাঙ্ক্ষাতে সময়টাও মিজারেবল্।জীবনের সুর যতই কেটে যাকনা, তবু জীবন তার নিজস্ব গতিতেই এগিয়ে চলে। এই গতির ছন্দ বোধহয় কখনোই থামেনা। কাল পার হয়ে, পৃথিবীর মানচিত্র ঘুরে মুক্ত স্বাধীন সেই হরিণটির খোঁজে একজনের গতির ছন্দ একসময় ঠিকই ছুঁয়ে যায় অন্য একজনকে। সেখান থেকে আরো অনেককে। একসময় দেশের আনাচে কানাচে মানুষের হৃদয়ে চেপে সে ছন্দ আরও আরও মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে থাকে। জন্ম নেয় ছোট্ট বিপ্লব শিশু।
চমৎকার লেখা। বর্তমান প্রেক্ষাপটের সাথে দারুন মিল।