নিঝুম রাতের পরী

গ্রামের নাম নিঝুমপুর। রাত নামলেই পুরো গ্রাম ঢেকে যায় এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতায়। কুকুর ডাকে না, পাখিরা চুপ থাকে, বাতাস থমকে দাঁড়ায়। অথচ আকাশের তারা গুনলে দেখা যায়— প্রতিদিন একটা করে তারা কমে যাচ্ছে।এই গ্রামের ছেলে অপু, সদ্য কলেজে ভর্তি হয়েছে। সে বরাবরই একটু অন্যরকম। রাতের আকাশ দেখতে তার খুব ভালো লাগে। চুপচাপ বাড়ির পেছনের বাঁশবনে বসে থেকে আকাশ দেখে আর ভাবে— “এই নীরবতার পেছনে কোনো রহস্য আছে?”একদিন মাঝরাতে, হঠাৎ করেই অপু দেখতে পেল একটা আলো এসে পড়ছে তার পেছনের বাঁশঝাড়ের ভিতর থেকে। সাহস করে এগিয়ে গেল সে। অদ্ভুত সুন্দর এক দৃশ্য— রূপালী আলোর মাঝে দাঁড়িয়ে আছে এক পরী! সে স্বচ্ছ পাখা মেলে বাতাসে ভেসে থাকে, চোখে গভীর বিষাদ।পরী অপুকে বলল,— \"আমি তারা-পরী। নিঝুমপুর একসময় জোছনায় ভরা থাকত। কিন্তু এখন মানুষের হৃদয়ে জেগেছে লোভ, হিংসা আর ভয়। প্রতি রাতে এক একটি তারা হারিয়ে যায় মানুষের অমানবিকতায়। আমি এসেছি শেষ তারা রক্ষার জন্য।\"অপু হতভম্ব।— “তাহলে আমি কী করতে পারি?”পরী বলল,“তুমি একমাত্র মানব, যার মনে এখনো শিশুর মতো নিখাদ কৌতূহল আছে। তোমার সাহায্য চাই।”তারপর শুরু হয় অপু আর তারা-পরীর এক গোপন অভিযান— নিঝুমপুরের মানুষদের হৃদয়ে আবার জাগিয়ে তোলা ভালোবাসা, দয়া, ও সহানুভূতির গল্প। অপু রাতের পর রাত মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে তাদের ছোট ছোট দুঃখগুলো মেরামত করতে থাকে— কোনো শিশুর জন্য খেলনা পৌঁছে দেয়, কোনো বৃদ্ধার ওষুধ জোগাড় করে, কারো হারিয়ে যাওয়া পোষা পাখি খুঁজে দেয়।প্রতিদিন একটা তারা ফিরে আসে আকাশে।শেষ রাতে, পরী অপুকে বলল,“সবগুলো তারা ফিরে এসেছে। এখন আমাকে চলে যেতে হবে।”অপু অবাক হয়ে বলে,“তুমি কি আর কখনো ফিরবে না?”পরী মৃদু হেসে বলল,“যখনি নিঝুম রাত আবার নিস্তব্ধ হয়ে উঠবে ভালোবাসায়, আমি ফিরে আসব। আকাশে তাকিয়ো, অপু।”পরী মিলিয়ে গেল রূপালী আলোয়।সেই থেকে অপু প্রতিদিন আকাশের তারা গুনে। আর মনেপ্রাণে চায়, নিঝুম রাতের সেই পরী আবার একদিন ফিরে আসুক।