#গল্প: \'কিশলয় কুঞ্জ\'✍নাদিয়া নওশাদ অনাথ,বাবা-মা হারা শিশুদের অনাথ আশ্রম \'কিশলয় কুঞ্জ\'।জন্মের পর পরিত্যক্ত দুধের শিশু থেকে শুরু করে আঠারো,উনিশ বছরের কিশোর, কিশোরী সবার আশ্রয়স্হল এ আশ্রম। প্রতিষ্ঠাতা রেজাউল করিম সাহেব একটা প্রাইমারী স্কুলের ইংরেজী বিষয়ের উপর শিক্ষকতা করতেন। বছর সাতেক হলো রিটায়ার করার পর \'কিশলয় কুঞ্জ\' গড়ে তুলেছেন। তবে এর তত্ত্বাবধানের জন্য লোকজন আছে। সুপারিনটেনডেন্ট জুবায়ের ইসলাম,মহিলা সুপারিনটেনডেন্ট মাইমুনা হক,সোবহান বাবুর্চি, ঠিকে আয়া হালিমা আরো অনেকে। এই আশ্রমেরই অনাথ শিশু ছোট্ট মৌ। বয়স মাত্র পাঁচ বছর।ছোটখাটো,দেখতে খুব আদুরে। অসম্ভব মায়াভরা দুটো চোখ। একরাতে কে বা কারা মাত্র পাঁচ দিন বয়সী মৌকে আশ্রমের গেটের সামনে ফেলে রেখে যায়। তারপর থেকে এই আশ্রমেই তার দিনাতিপাত হয়। শুধু মৌ নয়,শিহান,টুকু,মারিয়া অনেক ছেলেমেয়েদের মিলনমেলা এই \'কিশলয় কুঞ্জ\'। অনেকে আবার পেটের জ্বালায় বাচ্চাকে না খাওয়াতে পেরে এআশ্রমে ফেলে চলে যায়। আসফিয়া চৌধুরী \'কিশলয় কুঞ্জ\'এর বাংলা লিটারেচারটিচার। মৌকে ভীষণ ভালোবাসে। কালচারাল টিচার হচ্ছেন সাবরিনা। এঅনাথ আশ্রমে মাঝে মাঝে বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা থেকে ডোনেশন আসে। কিন্ত এর পেছনে একটা গভীর চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র রয়েছে। যথেষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে বাবুর্চি সোবহান ডালে মাত্রাতিরিক্ত লবণ মিশিয়ে ছেলেমেয়েদের খেতে দেয়। তরল দুধে পানি মিশিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ানো হয়।তবে এসব কার্যকলাপ ঘটে রেজাউল করিম সাহেবের অগোচরে। অনাথ ছেলেমেয়েগুলোর যাওয়ার কোনও জায়গা নেই বলেই তাদের এই দুর্দশা।নীরবে তারা এসব অত্যাচার সহ্য করে।দুষ্টুমি জন্য শিশুদের এমনকি কিশোর কিশোরীদের মাঝেমধ্যেই ঘরে তালাবন্ধ করে রাখেন সুপারিনটেনডেন্ট মাইমুনা। কিন্ত আসফিয়া,সাবরিনা কাউকে মৌ,শিহান আরো অন্যান্য ছেলেমেয়েরা কিছু জানায় না। একদিন \'কিশলয় কুঞ্জে\' এলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদ চৌধুরী। তখন অনুষ্ঠানে গানে গানে মৌ তাদের দুর্দশার কথা ফুটিয়ে তোলে। আসাদ সাহেব রেজাউল করিম সাহেবকে অবিলম্বে মাইমুনা হক, সোবহান এদের বিরুদ্ধে জরুরী পদক্ষেপ নিতে বলেন। এভাবেই সবাই অনাথ আশ্রমে দুষ্টুলোকদের হাত থেকে রেহাই পেলো। বিয়ের দশ বছর পর অনেক চেষ্টার পরেও আসিফ আর মিতু সন্তানলাভ করতে পারলো না। তাই তারা সন্তান দত্তক নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। তখন তারা \'কিশলয় কুঞ্জ\'তে যায়। সব শুনে রেজাউল করিম সাহেব মৌকে দত্তক নেয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দিলেন। আসফিয়া মৌকে আসিফ আর মিতুর কাছে নিয়ে এলো। মৌকে দেখে মিতু আর আবেগ সামলাতে পারলো না। অবশেষে সমস্ত নিয়ম-কানুন মেনে কাগজপত্রে সই-সাবুদ করে মৌকে দত্তক নিয়ে নিলো। \'কিশলয় কুঞ্জ\'এরসবাইকে বিদায় জানিয়ে আসিফ আর মিতূর সাথে মৌ সোনা চলে গেলো তার নবরুপে প্রাপ্ত আশ্রয়। আজ প্রায় বিশ বছর কেটে গেলো। এরইমধ্যে \'কিশলয় কুঞ্জ\' এর প্রাণভ্রমরা রেজাউল করিম সাহেবের ইন্তেকাল হয়েছে। তার অবর্তমানে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেআসফিয়া। অনেক ছেলেমেয়েরা এ অনাথ আশ্রম থেকে পড়াশোনা করে সাবলম্বী হয়েছে, অনেকের আবার দেখেশুনে বিয়ে-থাও দিয়ে গেছেন রেজাউল করিম। এখন মৌ একজন পূর্ণ যুবতী। রুপে-গুণেও সেইরকম। আসিফ আর মিতু শখ করে মৌকে গান শিখিয়েছে। আজ মৌ একজন স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী। পাশাপাশি টুকটুক করে সমাজসেবাও করে থাকে। আজ মৌ\'কিশলয় কুঞ্জ\' গিয়ে আসফিয়ার সাথে দেখা করেছে। এই \'কিশলয় কুঞ্জ\' তার প্রাণ। এই আশ্রমের ছেলেমেয়েদের জন্য অনেক কিছু করার ইচ্ছা মৌএর। ছোটবেলার অসংখ্য স্মৃতি বিজড়িত \'কিশলয় কুঞ্জ\' বারে বারে তাকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে! *সমাপ্ত*
0 Comments