মনের বাঘ

হাশেম চাচার বয়স ষাট ছুঁই ছুঁই, কিন্তু ভয়ের বয়স এখনও বাচ্চা শ্রেণির মধ্যে পড়ে। তিনি এমন একজন মানুষ, যিনি পেঁপের গাছে ঝুলে থাকা বিছে দেখে একবার মাথায় মলম লাগিয়ে পাগলের মতো হেঁটে গেছেন থানায়— “সাহেব, আমার মাথায় সাপ ঢুকছে, আমাকে বাঁচান!”এই লোকই আবার গ্রামে বড় কথা বলেন—“ভয়? আমি ভয় পাই না। ভয়ই আমারে দেখে ভয় পায়!”কিন্তু এক রাতে গ্রামের নাট্যমঞ্চে \"বাঘের মুখোমুখি\" নামের নাটক দেখতে গিয়ে ব্যাপক দুর্ঘটনা ঘটালেন। নাটকে হঠাৎ এক কালো বাঘের কস্টিউমে লোক মঞ্চে উঠতেই হাশেম চাচা চিৎকার দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন—“মারে রে! বাঘ আসছে! মইরা গেলাম!”তারপর? তিনি লাফ দিয়ে সামনে বসা ছফুরার কোলে পড়ে গেলেন। ছফুরা তখন নিজে মনে করলেন ভূমিকম্প। তিনিও চিৎকার করে উঠলেন—“বাঘ না ভূত! উফফ মাইরালা গো!”পরদিন হাটে দোকানে বাজারে পাড়ার ছেলেরা হ্যাশট্যাগ চালিয়ে দিল—#মনেরবাঘআসছেএই ঘটনার পর চাচা আত্মবিশ্বাসের সাথে বললেন—\"এই বাঘ দেখা কোনো সাধারণ জিনিস না। এটা মানুষের ভিতরের ভয়। আমি বলি— এটা ‘মনের বাঘ’।\"চাচার এই “মনের বাঘ” দর্শন এতটাই বিখ্যাত হলো যে, গ্রামের স্কুলে বিজ্ঞান মেলায় দুই ক্লাস নাইনের ছেলে “মনের বাঘ আবিষ্কার” নামে একটা প্রজেক্ট বানাল। তাতে লেখা:মনের বাঘ রাতে আসেটিকটিকি দেখলে জেগে উঠেভাত না খেলে লুকিয়ে পড়েআর হাশেম চাচাকে দেখলে হেসে ফেলেএকদিন চাচা নিজেই সাহসের পরীক্ষা দিতে গেলেন। রাতে ছাদে একা একা উঠে দাঁড়ালেন। অন্ধকার, বাতাস, নীচে কুকুর ঘেউ ঘেউ করছে। চাচা নিজেই বললেন—“আজকে ভয় পাব না। হাশেম মরলে মরবে, কিন্তু মনের বাঘের কাছে হারবে না!”ঠিক তখন কোথা থেকে একটা শুকনো গামছা উড়ে এসে গলায় পড়তেই চাচা “আল্লা রে বাঁচাও!” বলে ধপাস করে পড়ে গেলেন।পরদিন তাকে পাওয়া গেল গ্রামের হাসপাতে। জ্ঞান ফিরে প্রথম কথাই বলল“আমি ওরে দেখছি… সে আসলেই এসেছে… সে কোনো সাধারণ বাঘ না… ও মনের বাঘের চাচাতো ভাই!”গ্রামের লোক হেসে কুপোকাত। কেউ আর আজকাল কাউকে পাগল বলে না। বলে—“তোরে দেখলে তো মনে হয় হাশেম চাচার বাঘ ঢুকছে তো!”বাঘ দেখে পালানো লজ্জার না, কিন্তু “মনের বাঘ” দেখে নাটকে ঝাঁপ দেওয়া হাশেম চাচার মতো হলে, নাম হয়ে যায় ইতিহাস।তবে এই গল্প পড়ে কেউ যদি হঠাৎ রাতের বেলা আয়নায় নিজের ছায়া দেখে ভয় পায়, বুঝে নিও…“মনের বাঘ” এসে গেছে! 🐅😜