বান্দরের কবলে সুন্দর আলী

সুন্দর আলী গ্রামের সবচেয়ে স্মার্ট ও আত্মবিশ্বাসী লোক। মাথার চুলে বেশি তেল, হাতে সবসময় লাল তোয়ালে, আর মুখে হাসি—যা নিজেই নিজের গুণে মুগ্ধ। সে নিজেকে গ্রামের \"হিরো\" ভাবে। বাজারে গেলে সাইকেল হেঁকিয়ে এমন ঢংয়ে চলে যেন হিরো আলম আর সালমান খান একসঙ্গে ভর করেছে!একদিন সে খবর পেল, পাশের বাজারে মেলা বসেছে। মেলায় নাকি এক খাঁচাভরা বিদেশি \"সার্কাসের বানর\" এসেছে, যারা মানুষের মতো অভিনয় করে।সুন্দর আলী ভাবল, “আহা! একটা ফেসবুক লাইভ মারি, আরেকটু নিজের জনপ্রিয়তা বাড়াই।”হাঁটু পর্যন্ত লুঙ্গি তুলে, নতুন গেঞ্জি পরে, হাতে বডি স্প্রে ছিটিয়ে সাইকেল চেপে সে চলে গেল মেলায়। গিয়ে দেখে সত্যি এক বিরাট খাঁচায় কয়েকটা বানর ঘোরাঘুরি করছে। একটাকে দেখে তো তার সন্দেহই হয়, \"এইটা মানুষ না, বানর সাজা!\"তারপর হঠাৎ কি মনে করে সে মঞ্চে উঠে দর্শকদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিল—“এইসব বানরের ভয় আমার নাই। আমি সুন্দর আলী, বানরও আমার চেনা।”এই কথা শুনে এক দুষ্টু বানর (নাম জঙ্গি বানর) যেন ব্যক্তিগত অপমান মনে করল। খাঁচার গেট একটু ফাঁকা ছিল। চোখের পলকে বেরিয়ে এল সেই বানর!লোকজন ছুটোছুটি শুরু করে, কেউ বলে \"বাঁচাও!\", কেউ বলে \"আল্লাহ! বানর আইতেছে!\" আর সুন্দর আলী? সাহস দেখানোর বদলে খাঁচার পেছনে ঢুকতে গিয়ে উল্টে স্লিপ খেয়ে পড়ে গেল।এরপর শুরু হয় ইতিহাস—বানর এসে তার মাথার তেল মাখা চুলে হাত বুলিয়ে দিল। সুন্দর আলী চুপ। বানর তার গালে এক টোকা মারল, তারপর সুন্দর আলীর গেঞ্জি ধরে টানাটানি শুরু করল। সুন্দর আলী চিৎকার করে ওঠে,“এইটা রেইপ! আমি ফেসবুক লাইভ করতেছিলাম না ভাই!”বানর কিছু বুঝে না, সে সুন্দর আলীর মাথায় চেপে বসে, তার গলায় লাল তোয়ালে পেঁচিয়ে, হঠাৎ করে গলার আওয়াজ নকল করে ডাকতে থাকে—“আমি সুন্দর আলী! বানর আমার ভয় নাই!”এত কাণ্ড দেখে লোকজন হেসে গড়াগড়ি খায়। কেউ ভিডিও করে, কেউ পাকা কলা ছুঁড়ে বানরকে শান্ত করার চেষ্টা করে।শেষমেশ সার্কাসের লোক এসে বানরটাকে কায়দা করে ধরে। সুন্দর আলী উঠে দাঁড়ায়, তার চুল এলোমেলো, তোয়ালে নেই, গেঞ্জির একপাশ ছেঁড়া, গলায় ফেসবুক লাইভ চালু ফোন ঝুলছে।সে কাঁপা গলায় বলে—“আহা! বানরও যদি এত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হয়, তাহলে মানুষ হয়ে আমি এত অহংকার করি কেন!”তারপর থেকে গ্রামের লোকজন তাকে দেখে বলে—“আরে ঐ যে সুন্দর আলী, বান্দরের শ্বশুর!”