শিরোনাম: গোপাল ভাঁড়ের সাথে দেখালেখক: মোবারক হোসেনসকালের আলো একটু একটু করে জানালা গলিয়ে আমার ঘরে ঢুকছে। আমি তখনও আধঘুমে। হঠাৎ এক অদ্ভুত আওয়াজে চমকে উঠলাম—\"ওহে বাঙাল, উঠো! রাজ দরবারে যাওয়ার সময় হইসে!\"চোখ মেলে দেখি, এক বেঁটে, গোঁফওলা লোক আমার ঘরের মাঝে দাঁড়িয়ে, পরনে ধুতি আর গায়ে লাল পাড়ের উত্তরীয়। মুখে দুষ্টু হাসি। ঠিক যেনো গোপাল ভাঁড়!আমি ভয় পেয়েই বললাম, “আপনি কে? কী চান?”লোকটা খিলখিলিয়ে হেসে বলল, “আমি গোপাল ভাঁড়! রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রিয় দরবারি। তুমি তো গতকাল রাতে বললে, ‘ইশ! গোপাল ভাঁড়ের সঙ্গে যদি একদিন দেখা হতো!’ তাই স্বপ্নে দেখা দিতে আসছি। কিন্তু হায়, কপাল এমন যে ভুল করে স্বপ্ন নয়, সরাসরি তোমার ঘরে ঢুকে পড়েছি!”আমি চুলকাতে চুলকাতে বললাম, “আচ্ছা, তাহলে সত্যিই আপনি গোপাল ভাঁড়? প্রমাণ দেন তো!”গোপাল ভাঁড় হেসে বলল, “দেখো, আমি যদি মিথ্যে বলি, তো এবার থেকে ভাত খাওয়ার সময় প্রতিবার তোমার নাকে চুলকানি উঠবে।”পরদিনই বুঝলাম, ব্যাটা সত্যিই গোপাল ভাঁড়! খেতে বসলেই নাক চুলকায়!গোপাল বলল, “তো বলো দেখি, বাঙালরা এখন কেমন আছে?”আমি দুঃখ করে বললাম, “আপনার আমলের মতো বুদ্ধিমান লোক এখন কম। তবে আপনার গল্প শুনে মানুষ এখনও হাসে।”গোপাল বলল, “হাসে, জানি। তবে আমি এখনকার বাঙালদের মতো ফেসবুকে হাসি ইমোজি দিয়ে শুধু কাজ চালাতাম না—সরাসরি পেছনে ধইরা রাজাকে জিজ্ঞেস করতাম, ‘মহারাজ, এই যে তিনবার কর বাড়লেন, চতুর্থবার কি হজম শক্তি বাড়াইছেন?’”আমি বললাম, “আপনি যদি এখন থাকতেন, নিশ্চয় টকশোতে ডাক পেতেন।”সে বলল, “না ভাই, আমি তো টকশোতে যাব না। ওখানে সবাই শুধু টক করে, শো করে না!”এবার গোপাল বলল, “আমার ফেরার সময় হলো। একটা কথা বলে যাই—তুমি যদি হাস্যরস চাও, তাহলে কারও অপমান করে নয়; বরং নিজের ওপর একটু মজা করো। তাহলেই জীবন সহজ লাগবে!”গোপাল যাওয়ার আগে দরজার সামনে একটু দাঁড়িয়ে বলল,“আর শোনো, একটা প্রশ্ন তুমি বুকের মাঝে জমিয়ে রেখেছো—মীর জাফর কেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে বেঈমানি করলো?”আমি মাথা নিচু করে বললাম, “হ্যাঁ… জানি, হাসির গল্পে এই প্রশ্ন বেমানান। কিন্তু আমাদের ইতিহাসটাই তো আজ হাসির পাত্র!”গোপাল এবার গম্ভীর হলো, তার চোখে ঝিলমিল করলো ভিন্ন এক আলো। সে বলল—“মীর জাফর হারামি হয়েছিল, কারণ সে নিজেকে নবাবের চেয়েও বড় ভাবতে শুরু করেছিল, অথচ সাহস ছিল না সম্মুখে এসে বলার। তাই সে পেছনে ছুরি মারলো। তার লোভ, তার অহংকার আর নিজের ব্যর্থতা ঢাকতেই সে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।কিন্তু সত্যি কথা বলি বন্ধু—মীর জাফর শুধু একজন নয়, সে একটা নাম—যে নাম সময় পেলেই ফিরে আসে নতুন মুখে, নতুন বেশে।আরেকজন সিরাজ পড়ে থাকে ইতিহাসের কান্নায়, আরেকজন মীর জাফর হাঁটে বুক ফুলিয়ে বিজয় মঞ্চে।তবে মনে রেখো—সিরাজের চোখের অশ্রুতে যে আগুন জমে,তার ধোঁয়া একদিন ঠিকই ইতিহাসের নাক চুলকায়।”বলেই গোপাল একটুখানি হাসল। তারপর বলল,“তুমি যারা এখনও প্রশ্ন করো—‘মীর জাফর কেন?’তোমরাই ইতিহাসের আলো।প্রশ্ন করো, হার মানো না।”সেই রাতের পর থেকে গোপাল আর ফিরে আসেনি।তবে তার কথাগুলো বুকের ভেতর এমনভাবে গেঁথে গেছে,যেন প্রতিবার কেউ বিশ্বাস ভাঙে, আমার কানে তার কণ্ঠস্বর বাজে—“সততা কখনও মরে না। শুধু পরীক্ষার সময় একটু নিঃশব্দ হয়ে যায়।”বলে সে হঠাৎ ধোঁয়ার মতো মিলিয়ে গেল। আমি চোখ মেলে দেখি, ঘরে কেউ নেই। তবে টেবিলের উপর একখানা ফলকে লেখা—\"গোপাল ভাঁড় এসেছিল, তবে বাস্তবে নয় বোকা—তোমার স্বপ্নে, আবেগের পাতায়!\"আজও আমার নাক চুলকায় খেতে বসলে!
সকালের আলো একটু একটু করে জানালা গলিয়ে আমার ঘরে ঢুকছে। আমি তখনও আধঘুমে। হঠাৎ এক অদ্ভুত আওয়াজে চমকে উঠলাম—\"ওহে বাঙাল, উঠো! রাজ দরবারে যাওয়ার সময় হইসে!\"চোখ মেলে দেখি, এক বেঁটে, গোঁফওলা লোক আমার ঘরের মাঝে দাঁড়িয়ে, পরনে ধুতি আর গায়ে লাল পাড়ের উত্তরীয়। মুখে দুষ্টু হাসি। ঠিক যেনো গোপাল ভাঁড়!আমি ভয় পেয়েই বললাম, “আপনি কে? কী চান?”লোকটা খিলখিলিয়ে হেসে বলল, “আমি গোপাল ভাঁড়! রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রিয় দরবারি। তুমি তো গতকাল রাতে বললে, ‘ইশ! গোপাল ভাঁড়ের সঙ্গে যদি একদিন দেখা হতো!’ তাই স্বপ্নে দেখা দিতে আসছি। কিন্তু হায়, কপাল এমন যে ভুল করে স্বপ্ন নয়, সরাসরি তোমার ঘরে ঢুকে পড়েছি!”আমি চুলকাতে চুলকাতে বললাম, “আচ্ছা, তাহলে সত্যিই আপনি গোপাল ভাঁড়? প্রমাণ দেন তো!”
0 Comments