আমাদের গ্রামে গফুর চাচার মতো বিচিত্র মানুষ আর একটা নেই। তিনি মানুষকে বিশ্বাস করেন না, কিন্তু বলদকে করেন। তাই বাড়িতে ছেলেমেয়ের চেয়ে বলদের যত্ন বেশি!একদিন সকালে গফুর চাচার মাথায় এক আজব বুদ্ধি খেলে গেল। বাজারে শুনেছে, এখন নাকি গরুর দুধে ভেজাল মেশায়। তাই তিনি ভাবলেন, “গরুর দুধ যদি ভেজাল হয়, তাহলে বলদের দুধ বিক্রি করব! অন্তত ভেজাল তো থাকবে না!”সমস্যা একটাই—বলদ যে দুধ দেয় না!কিন্তু তাতে কি আসে যায় গফুর চাচার!তিনি গাঁয়ের সবচেয়ে বোকাসোকা ছেলেটা, রইচকে ডেকে বললেন,—“শোন রইচ, আজ থেকে এই বলদটারে দোহাবি।”রইচ মাথা চুলকায়, “কিন্তু চাচা, বলদ তো... মানে...”—“তুই শুধু দোহা, বাকি দায়িত্ব আমার!”সেই দিন বিকেলবেলা গফুর চাচা হাটে একটা ছোট টিনে সাদা কিছু নিয়ে হাজির, উপরেই বড় করে কালি দিয়ে লিখেছেন:\"বিশুদ্ধ বলদের দুধ — ১০ টাকা গ্লাস। গ্যারান্টি সহকারে ভেজালমুক্ত!\"দেখে মানুষ ভিড় জমাল। কেউ বলছে, “বলদের আবার দুধ হয় নাকি?”চাচা গম্ভীর গলায় বললেন, “আমার বলদ বিশেষ প্রজাতির। গাভীর চেয়েও বেশি পুষ্টি দেয়।”এক লোক একটু সন্দেহ নিয়ে এক গ্লাস খেল। মিষ্টি স্বাদ!—“এইটা তো নারকেলের দুধের মতো লাগতেছে!”চাচা হেসে বললেন, “বলদটা খালি নারকেলপাতা খায় তো, সেই জন্য!”পরদিন হাটে মানুষের ভিড় দ্বিগুণ। \"বলদের দুধ\" এখন সবার প্রিয় পানীয়। কেউ কোমরে ব্যথায় খাচ্ছে, কেউ বাতের চিকিৎসায়।গ্রামের হোমিও ডাক্তার বললেন, “আমি তো এতদিন ভুলই করে আসছিলাম! বলদের দুধে যে এমন ঔষধি গুণ, জানতাম না!”কিন্তু একটা সমস্যা দেখা দিল—বলদটা দিন দিন খিটখিটে হয়ে উঠছে। দোহানোর সময় লাথি মারছে, চিৎকার করছে।রইচ তো মার খেতে খেতে রোগাটে হয়ে গেছে।একদিন হাটের মাঝে পশুসম্পদ অফিসের লোক এলেন। শুনেছেন এই গ্রামে বলদের দুধ পাওয়া যায়। পরীক্ষা করলেন... দেখা গেল, এইটা আসলে নারকেল দুধ আর খানিকটা গুঁড়ো দুধের মিশ্রণ!লোকটা রেগে গিয়ে বললেন,—“আপনি তো মানুষ ঠকাচ্ছেন! এটা প্রতারণা!”গফুর চাচা শান্ত গলায় বললেন,—“ভাই, আমি তো কোথাও বলিনি বলদ নিজে দুধ দেয়। আমি শুধু বলেছি, বলদের দুধ! আর ওটাই তো মজা—সবাই জানে বলদ দুধ দেয় না, কিন্তু খেয়ে শান্তি পাচ্ছে না?”শেষমেশ গ্রামবাসী মিলে চাচাকে ছেড়ে দিল। কারণ গফুর চাচার “বলদের দুধ” তাদের হাসির খোরাক হয়ে গেছে। এখন এটা শুধু একটা পানীয় নয়—গ্রামের গর্ব, একান্ত ‘ব্র্যান্ড’।গফুর চাচা এখন বলেন,—“মানুষের দুধে যদি বলদের বুদ্ধি থাকত, তাহলে সবাই ঠকানো বন্ধ করত!”আর গাঁয়ের ছেলেপেলে এখন রসিকতা করে বলে—“যে দুধ খেয়ে মানুষ হয় বুদ্ধিমান, সে দুধ দিত বলদ!”
0 Comments