টানাপোড়েন ( ছোটগল্প )▪ পার্থসারথিসুঠাম দেহ, পেশীবহুল হাত, মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুল, কালো বর্ণের আকর্ষণীয় চোখ, মোট কথা অশোকের স্বাস্থ্যটা বেশ শক্ত ধাঁচের। যাকে বলে হাতুরি পেটানো স্বাস্থ্য। পুরো নাম অশোক কুমার দাশ। উত্তরবঙ্গের সাদাসিধে সরল স্বভাবের লোক। প্রতিদিনকার মতো শংকর বাসস্ট্যান্ডে রিকশা নিয়ে যাত্রীর প্রতীক্ষায়। বেলা প্রায় দুপুর গড়িয়ে এল। এখনও রিক্সা জমার টাকাই ওঠে নি। বলিষ্ঠ দেহের ভাঁজে ভাঁজে চিন্তার বলিরেখা স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। আবার মনে মনে হিসেব কষলো সন্ধ্যা অবধি রিক্শা চালালে আজকের সংসার খরচটা ওঠবে কি না।– নিজেই নিজেকে মনের অজান্তে জিজ্ঞাসা করে। আবার প্রতীক্ষায় কাটে একজন যাত্রীর আশায়। আগে তো যাত্রীদের ডাকাডাকিতে মন সবসময় ফুরফুরে থাকতো। এখন রাস্তায় মানুষজন খুব একটা নেই। যে ক\'জনকে দেখা যাচ্ছে উনারা হেঁটেই যাচ্ছেন।পাশের পরিচিত রিক্শাওয়ালা-বন্ধু রহিমকে জিজ্ঞাসা করল- কিরে রহিম ভাই, ভাড়া কেমন পেয়েছিস এ\'পর্যন্ত? রহিমের নিরাসক্ত উত্তর- না দাদা, পেট চালানো দায়। কী-না-কী একটা রোগ আইছে। নাম নাকি করোনা। ভয়েতে কেউ রিক্শায় উঠে না। হেঁটেই চলে যাচ্ছে সব।অশোকের কন্ঠ কেঁপে ওঠে- রহিম ভাই, কেমনে চলবো। ভাড়া যদি না পাই তবে খাবটা কী? চিন্তায় চিন্তায় মাথা ঘুরে।রহিমের চোখের কোণেও অশ্রুবিন্দু জমাট বেঁধেছে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে- কী যে করব! কেমন করে সংসার চালাবো!- এই বলে রহিম কপালে কনুই ঠেকিয়ে মাথা নীচু করে চুপচাপ বসে থাকে। অশোকের গলা শুকিয়ে আসছে। ক্ষুধার জ্বালায় পেটের ভেতরটা ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। দোকানপাট সব বন্ধ কোনকিছু খাওয়ার কোন উপায় নেই। রিক্শার বসার সীটটা তুলে পানির বোতলটা বের করে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিল। তারপর এদিক-ওদিক চোখজোড়া যাত্রী খোঁজায় ব্যস্ত। অশোকের বিধ্বস্ত চেহারা দেখে কবিতা রাণী হাঁউমাঁউ করে কেঁদে ওঠে- কিগো তোমার কী হয়েছে? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? দুপুরে কিছু খাও নি? সন্ধ্যা হয়েছে সেই কখন! কোন কথা না বলে অশোক মাথাটা নীচু করে ঘরের ভেতর পা রাখল। পলিথিনে প্যাক করা কিছু চাউল, আলু আর দু\'আটি কলমি শাক স্ত্রীর হাতে দিল। কবিতা রাণী উদগ্রীব হয়ে আবার জিজ্ঞাসা করে- কী ব্যাপার, কোন কথা বলছো না কেন?কী আর বলবো কবিতা! আর মনে হয় খেয়ে-পরে বাঁচতে পারবো না। সারাদিন রিক্শা চালিয়েও খোরাক যোগাতে পারি নি। কী করে চলবো?কবিতাও কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো- আমাকেও সব বাসা থেকে না করে দিয়েছে। করোনা রোগ শেষ হলে তারপর নেবে। দু\'জন পরস্পরের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ নির্বাক সময় কাটে দু\'জনার। আর চোখ বেয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ে। যেন জানান দিচ্ছে তাদের অব্যক্ত যন্ত্রণার পংক্তিমালা। পুত্র কৃষ্ণ ও কন্যা দিশারী ভাষাহীন মা-বাবার এমন দৃশ্য আগে কখনও দেখে নি। ওরা নিঃশব্দে মা-বাবার পাশে এসে দাঁড়াল। সন্তানদের কাছে টেনে নিয়ে আরও কিছুক্ষণ নীরবতায় ভেসে থাকলো। কবিতা নীরবতা ভেঙে বললো- চিন্তা করো না। আমার হাতে কিছু জমানো টাকা আছে। তাছাড়া সব বাসা থেকে পুরো বেতনই দিয়ে দিয়েছে। কেউ বেতন কাটে নি। তুমি চিন্তা করো না। দেখবে, ভগবান ঠিকই একটা ব্যবস্থা করে দিবে। যাও মুখটা একটু ধুয়ে এসে আগে খেয়ে নাও।অশোক স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। এবং বলে- তা\' ঠিক আছে। কিন্তু তা\'তে আর কতদিন। শুনেছি এ\'রকম নাকি মাসের পর মাস চলতে পারে। তখন কী করবো?মায়ের দিকে চোখ পড়তেই বুকটা আচমকা কেঁপে ওঠে। এগিয়ে আসে মায়ের কাছে। কপালে হাত রাখে। মায়ের দু\'চোখ গড়িয়ে অশ্রুধারায় বালিশ ভিজে গেছে। অশোকের মনের ভেতরটা আবারও ওলট-পালট হয়ে যায় কষ্টের কুন্ডলীতে। দিনদিন শরীরটা শুকয়ে যাচ্ছে। অথচ এই মা ওদের সাত-সাতটা ভাইবোনকে সবসময় বুকে আগলে রেখেছে। মা অশোককে একটু বেশিই ভালোবাসে। অশোকও মাকে মনে-প্রাণে ভালোবাসে। টানাপোড়েন সংসার কিন্তু মায়ের কোন অযত্ন করে না। সাধ্যমতো সবকিছুই ঠিকঠাক খেয়াল রাখে। এখন বাংলাদেশে ওর আর কেউ নেই। সবাই ভারত চলে গেছে। কিন্তু মা অশোককে ছেড়ে যাবেন না। অশোক বাংলাদেশের মাটির টান আলগা করতে পারে নি। বাংলাদেশের মাটিতেই শেষ ঘুম ঘুমোতে চায়। একসময় সবই ছিল। সচ্ছল কৃষক পরিবার। নদীর ভাঙনে সব হারিয়ে ঢাকায় চলে আসা। তা\' প্রায় বছর পাঁচেক হয়ে গেছে। মা মহামায়া দেবী শয্যাশায়ী প্রায় এক বৎসর। কিন্তু সুপুত্র অশোক, মায়াবতী কন্যার মতো পুত্রবধু, নাতি-নাতনি নিয়ে বেশ ভালই ছিলেন। এখন শয্যাশায়ী হয়ে এক টুকরো বাংলাদেশ।মায়ের চোখের জল মুছতে মুছতে অশোক বলে- মা কেঁদো না, সব ঠিক হয়ে যাবে। ডাক্তার বলেছে তুমি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যাবে। শুধু ঔষধগুলো ঠিকঠাক সময় মতো খেয়ো।ভাতের গ্রাসটা মুখে দিতে দিতে অশোক মায়ের দিকে তাকায়, স্ত্রীর দিকে তাকায়, সন্তানদের দিকে তাকায়, বলে- তোমরা সবাই খেয়ছো?হ্যাঁ খেয়েছি, তুমি নিশ্চিন্তে খাও।– এই বলে কবিতা রাণী বাম হাতে হাত-পাখা চালাচ্ছে। খাওয়া শেষে অশোক জলের গ্লাসটা হাতে নিয়ে বলে- জানি না, ভগবান কপালে কী রেখেছে!টানাপোড়েন সংসার নিয়েও অশোক বেশ চলছিল। ছেলে-মেয়ে দুটোকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছে। শিক্ষিত হয়ে সংসারের হাল ধরবে এই আশায় দিনরাত দু\'জন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এতগুলো মানুষ গাদাগাদি করে একটা রুমের ভেতর থাকে। রুম-ঘরের ভেতর একটা মাত্র চৌকি। মা ও সন্তানরা থাকে চৌকিতে। আর অশোক-কবিতা থাকে মেঝেতে। সবাই ঘুমিয়েছে।মাস পেরোতেই মাথায় হাত। পুরো এপ্রিল মাস জমানো টাকায় চলেছে। বাসা ভাড়া, খাওয়া খরচ, ঔষধ খরচ- সব টাকাই প্রায় শেষ। অশোক-কবিতার মাথায় হাত। এখন উপায়? আর তো কোন কাজ জানা নেই। জানলেও এখন কোন কিছু করার উপায় নেই। বিছানায় শুয়ে শুয়ে কপোত-কপোতির দীর্ঘশ্বাসে ঘরের ভেতর কষ্টের কুন্ডলী যেন ক্রমশঃ ভারী হচ্ছে। দীর্ঘশ্বাসের পর দীর্ঘশ্বাস। কোন সমাধান নেই। হঠাৎ মনে পড়তেই কবিতা বলল- একটা কাজ করো। আশেপাশে অনেক বড়লোকরা সাহায্য দিচ্ছে। ওখান থেকে গিয়ে সাহায্য নিয়ে এসো।অশোক নীরব।ঠিক আছে তোমার সাথে আমিও যাবো।অশোক নীরব।কী ব্যাপার, কথা বলছো না কেন?অশোক নীরব। পাশের বাসার শেফালী ভাবী আজ সাহায্যের বড় একটা প্যাকেট নিয়ে এসেছে। দু\'দিন চলে যাবে।অশোক নীরবতা ভেঙে ডুকরে কেঁদে ওঠে। কবিতা অশোককে জড়িয়ে ধরে। কাঁদছো কেন?- বলে কবিতা নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত। কন্ঠ বাষ্পরুদ্ধ। শেষ পর্যন্ত ভিক্ষা আনতে যাব!কবিতা নীরব।ভগবান কপালে এই রেখেছিল! কোনদিন তো কারও দয়ার আশা করি নি।কবিতা নীরব। শুনসান নীরবতা। সেকেন্ড...মিনিট...ঘন্টা...রাত গভীর থেকে গভীরতর। ঘুমের রাজ্যে ওরা রাতজাগা পাখি। একে অপরের কষ্টের শ্বাস-প্রশ্বাসে যেন স্নান করছে। পরিশুদ্ধ হয়ে শেষে কবিতা নিজেকে সামলে নিয়ে বলে- তুমি চিন্তা করো না। আমি গিয়ে নিয়ে আসবো। তুমি কী করে ভাবলে? আমি বেঁচে থাকতে তুমি যাবে মাগন আনতে। তুমি ঘরের লক্ষী, ঘরের ভেতরটা সামলাও। আমিই বের হবো।শোন, প্রয়োজনে তাই করবো। তবু বেঁচে থাকতে হবে। তাছাড়া আমরা তো নিরুপায়। সবাই বুঝবে। অশোক কিছুক্ষণ নীরব থাকে, তারপর বলে- ঠিক আছে, তুমি যেহেতু বলছো তাই হবে।শোন এতে লজ্জার কিছু নেই। সবাই আনছে। সরকার থেকেও সাহায্য দিচ্ছে। এরপর আমতা আমতা করে কবিতা বলে- জমিলা ভাবীও বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাহায্যও চেয়ে এনেছে। সাথে ছোট মেয়েটাকেও নিয়ে গিয়েছিল। অনেক টাকা পেয়েছে। সবাই নাকি ঘর থেকে জানালা দিয়ে ঢিল ছুঁড়ে ছুঁড়ে টাকা দেয়। অশোক চৈত্রের দুপুরের ক্লান্ত শালিকের মতো নিশ্চুপ। অনুচ্চারিত উচ্চারণ- ঠিক আছে এখন ঘুমোও। এত চিন্তা করলে শরীর খারাপ করবে। পরদিন অনেক চেষ্টা করে এক প্যাকেট সাহায্য-খাবার নিয়ে বাসায় ফেরে অশোক। দু\'দিন চলবে। কমিশনারের লোকের কাছে গিয়েছিল। সাহায্য জুটবে না। ভোটার যেখানের সেখানে সাহায্য যাবে। দুঃশ্চিন্তায় অশোকের চিন্তা-ভাবনার জগৎ সব এলোমেলো হয়ে আসে। আসার পথে অনেককেই দেখেছে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সাহায্য চেয়ে নিচ্ছে। বাসায় ফিরে সবিস্তারে স্ত্রীর কাছে খুলে বলল। তাহলে একটা কাজ করি, আমি কৃষ্ণকে নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাই।– কবিতা বেশ আগ্রহ নিয়ে বলে।অশোকের ভেতরটা অনলে পোড়া কয়লার মতো জ্বলছে। ভেতর ভুবন ভেঙে খানখান। তারপর কষ্টের উচ্চারণ- শেষ পর্যন্ত ভিক্ষা করবো!তুমি এভাবে নিচ্ছ কেন? এখন সবাই যে যেমন পারছে সাহায্য দিচ্ছে-নিচ্ছে। সব ঠিকঠাক হয়ে এলে আমরা আবার কাজে ফিরে আসবো।না-হয় গেলাম কিন্তু সাহায্য চাইবো কীভাব!- অশোকের কন্ঠস্বর ভারী হয়ে আসে।ওসব নিয়ে চিন্তা করো না। আমি কৃষ্ণকে নিয়ে বেরিয়ে পড়বো।তোমাকে যেতে হবে না। আমিই যাবো।চৌকির কোণায় বসে ছেলে-মেয়ে পড়ছিল বা আঁকিবুঁকি করছিল। কিন্তু কান-জোড়া ছিল মা-বাবার কথাবার্তায় ডুবে। বাবার ডাকে কৃষ্ণ এগিয়ে আসে। নির্বাক তাকিয়ে থাকে।কাছে আয় বাবা।– এই বলে অশোক কৃষ্ণকে টেনে নিয়ে কোলের উপর বসায়। পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে একটু লজ্জাবোধ করছে বাবার কোলে বসে। তারপর মহাকালের গহ্বর থেকে বেরিয়ে এসে অশোক ছেলেকে পোড়া মনে আদর করতে করতে বলে- বাবা, আমরা আগামীকাল থেকে কাজে বের হবো।কৃষ্ণ মাথা নেড়ে বাবার কষ্ট লাঘবে সাড়া দেয়।তারপর মনের অজান্তেই ডুবে যায় সাহায্য চেয়ে বেড়ানোর মাঠে। কী কী বলতে হবে, কোথায় কোথায় যেতে হবে, কীভাবে বলতে হবে কথাগুলো, সুরটা কেমন হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।জমিলা বিবি উঁকি দিয়ে বলল- কবিতা\'দি তোমরা ঘরে বসে বসে কী করছো? কিছু বলার আগেই ঘরে ঢুকে পাশে বসে। তারপর বেশ শান্ত কন্ঠেই বলে- শোন, আমরা প্রতিদিনই যাচ্ছি সাহায্য আনতে। ভালই টাকা পাই, আল্লাহর অশেষ কৃপায় দিন চলে যাচ্ছে। লজ্জা করো না ভাই। বেরিয়ে পড়। সবাই এখন খুব ভালো ব্যবহার করছে। দশ...বিশ...পঞ্চাশ এমনকি একশ\' টাকাও দিচ্ছে। এই যে আমি মাত্র ফিরলাম। কী আর করবো বলো! ঘরে বসে থাকলে কেউ খাবার দিয়ে যাবে না। কবিতার চিবুকে ভালোবাসার হাত রেখে জমিলা বলে- তোমার ঘরে খাবার আছে?আছে ভাবী, কাল দুপুর পর্যন্ত চলবে।লজ্জা না-করে বেরিয়ে পড়ো ভাই। বাঁচতে তো হবে। দরকার হলে এখন আমার কাছ থেকে নিতে পারো। এখন আপাতত লাগবে না। লাগলে চেয়ে নেবো ভাবী।ঠিক আছে দিদি।– এই বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে জমিলা বিবি উঠে চলে যায়। অশোক বসে বসে কৃষ্ণের সাথে বেশ কিছুক্ষণ রিহার্সাল করলো। যেন সম্রাট অশোক আর অবতার কৃষ্ণের কথোপকথন- সংসার জগতে বেঁচে থাকার কৌশল মন্ত্রের খোঁজে মশগুল। এখন খুব নিম্নস্বরে কথাবার্তা চলছে। মনস্থির হলো আগামিকাল সকালে বাপ-ব্যাটা মাগনে হবে।মহামায়া দেবী হঠাৎ ডুকরে কেঁদে ওঠলেন। ঘনঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন আর কাঁদছেন। অশোক দৌঁড়ে মা\'র কাছে গেল। কী হয়েছে মা ? কোন জবাব নেই। মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। তারপর অনেক কষ্টে উচ্চারণ করলেন- এই দিনটি দেখানোর জন্য ভগবান আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন ? হায় ভগবান!মা কষ্ট নিয়ো না। আমার স্ত্রী-সন্তান এবং তোমাকে বাঁচিয়ে রাখা আমার কর্তব্য। কষ্ট নিয়ো না মা। সব ঠিকঠাক হলে আমি আবার কাজে ফিরব। অনেকক্ষণ ডুকরে ডুকরে অবশেষে মহামায় দেবী শান্ত হলেন অশোকের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে। কিন্তু অশোক আটকে আছে ত্রিভূজ টানাপোড়েনে ; ভাই-বোন সবাই ভারত চলে গেছে, নিত্য টানাপোড়েন সংসারে বসবাস এবার নতুন যুক্ত করোনার তীব্র ছোবল।সকাল সকাল বাপ-ব্যাটা স্নান-খাওয়া শেষে প্রস্তুত। এবার বের হবে সাহায্য তোলার আশায়। ছেলেকে হাতে ধরে ঘরের বাইরে পা বাড়াল। মনে মনে ঠিক করে রেখেছে একটু দূর এলাকায় যাবে। যা\'তে পরিচিত কেউ সামনে না-পড়ে। কিন্তু একি ! পা জোড়া এত অসার লাগছে কেন। মনের আকাশে সবকিছু কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আসছে। দাঁড়িয়ে থাকাটাই মনে হচ্ছে ভীষণ কষ্টের। স্নিগ্ধ বাতাসের ছোঁয়া মনে হচ্ছে জ্বলন্ত উনুনের তপ্ত ছায়াপাত। এই এখনই বোধহয় অঝোরধারায় চোখের কোণ বেয়ে জলপ্রপাত শুরু হবে। রিক্শার হ্যান্ডেলে হাত রাখতে তো কোনদিন কখনও বিচলিত হয় নি মন। বরং প্রতিদিন মনে হয়েছে যুদ্ধ শেষে জয়ী সৈনিকের বেশে ফিরে আসা। কিন্ত এখন এমন হচ্ছে কেন ?কৃষ্ণ বাবার হাত ধরে টান দিয়ে বলে- কী হলো বাবা, চলো ?সম্বিৎফিরে পেয়ে অশোক বিদ্রোহী বেশে পা বাড়ায়। আর মনে মনে সাহসী উচ্চারণ- আমি তো আর পাপ করছি না। জনপ্রতিনিধিরা যদি বেহায়ার মতো এই দুর্দিনেও জনগণের পাওনা-ত্রাণ চুরি করতে পারে। আমি কেন সাহায্য পেতে হাত পাততে পারবো না!এগিয়ে চলে অশোক আর কৃষ্ণ শত-কোটি টানাপোড়েনের বেড়াজাল ছিঁড়ে, বেঁচে থাকার আশায়। আর এগিয়ে চলে বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের পাতায়।শেষ
সম্বিৎফিরে পেয়ে অশোক বিদ্রোহী বেশে পা বাড়ায়। আর মনে মনে সাহসী উচ্চারণ- আমি তো আর পাপ করছি না। জনপ্রতিনিধিরা যদি বেহায়ার মতো এই দুর্দিনেও জনগণের পাওনা-ত্রাণ চুরি করতে পারে। আমি কেন সাহায্য পেতে হাত পাততে পারবো না!এগিয়ে চলে অশোক আর কৃষ্ণ শত-কোটি টানাপোড়েনের বেড়াজাল ছিঁড়ে, বেঁচে থাকার আশায়। আর এগিয়ে চলে বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের পাতায়।
0 Comments