পিচ্ছি চাচা

আমার নাম জনসন এভারেট । আমি জেরক্স এভারেট ও ম্যারিন এভারেট এর একমাত্র ছেলে। বাসার সবাই আমাকে অনেক ভালোবাসে। তবে আমাকে সবচেয়ে ভালবাসে আমার আংকেল নীলসন। সে সম্পর্কে আমার বাবার ছোট ভাই। সম্পর্কে আমার ছোট চাচা। তোমরা শুনলে হয়তো অবাক হবে তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রচলিত চাচা - ভাতিজা এর মত নয়। কারণ সে আমার চেয়ে দশ বছরের ছোট। আমার বয়স যেখানে ১৫ বছর সেখানে আমার চাচার বয়স মাত্র পাঁচ বছর। বয়সের এই উল্টো ব্যবধান একদিকে আমাদের সম্পর্ককে যেমন অন্যান্য করেছে তেমনি ভালবাসায় পূর্ণ করেছে। যখন আমার চাচা আমার দাদি রায়া এর গর্ভে ছিলো তখন আমার বাবা সন্দেহের বসে আমার দাদিকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। কারণটা সন্দেহ হয়েছিল তার মায়ের গর্ভে হয়তো তার বাবার নয়, অন্য কারো সন্তান আছে। এই সন্দেহের অবশ্য কারণ রয়েছে। আমার দাদা জর্ডান দীর্ঘদিন ধরে বিদেশ থাকে। যখন আমার দাদি গর্ভবতী হয়েছিল তখন আমার দাদা বিদেশে ছিল। তাই আমার বাবা সন্দেহ করেছিল এবং আমার দাদিকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। অনেক ঘটনা এবং টুইস্টের পর অবশেষে আমার বাবা বুঝতে পারে নীলসন তার বাবার ছেলে এবং তার নিজের ছোট ভাই। বাবা দাদিকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসে এবং অবশেষে আমরা আবার একসাথে থাকতে শুরু করি। নীলসন চাচা অনেক মজার একটি ছেলে। সে বয়সে আমার থেকে ছোট হলে কি হবে , তার কথা বলার ধরন ও আমাদের নিয়ে চিন্তা ভাবনা একদম বড় মানুষদের মত। আমি ও আমার বোনেরা প্রায়ই তাকে \" পিচ্ছি চাচা \" বলে ডাকি। প্রথম প্রথম সে এসবে খুব বিরক্ত হতো। সে আমাদের বলতো : \" তোমরা দয়া করে আমাকে পিচ্ছি চাচা বলে ডেকো না। আমার বন্ধুরা আমাকে এই নামে অনেক খেপায়। \" কিন্তু এখন সে আর বিরক্ত হয় না। বরং সে অনেক খুশি হয় যখন আমরা কেউ তাকে চাচা বলে ডাকি। শুধু তাই না সে মাঝে মাঝে তার বন্ধুদের সামনে গর্ব করে বলে : \" আমি জনসন এর পিচ্ছি চাচা \" । শুরুর দিকে তার বন্ধুরা এসব নিয়ে মজা করত। তবে একটি ঘটনার পর থেকে নীলসন তার পুরো স্কুলে \" little uncle \" নামে পরিচিত হয়ে গেছে। Little uncle তার পরিচয় এর একটি টাইটেল হয়ে গেছে। স্কুলের শিক্ষকরা প্রায়ই বলে \" আমাদের নীলসন হচ্ছে পৃথিবীর সেরা আঙ্কেল। \" তোমাদের নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে , কী সেই ঘটনা যেই ঘটনার কারণে নীলসন little uncle নামে পরিচিত হয়েছে। আমি ছোট্ট করে তোমাদের সেই ঘটনাটা বলছি। ঘটনা সূত্রপাত হয়েছিল নীলসন এর স্কুল থেকে ফেরার পর। সে এসেই আমাকে বলেছিল \" তুমি আজ থেকে আমাকে আর চাচা বলে ডাকবে না। স্কুলের সবাই আমাকে নিয়ে মজা করে। আজ থেকে তুমি আমাকে শুধু নাম ধরে ডাকবে। \" তার কথায় আমি কিছুটা কষ্ট পেয়েছিলাম কিন্তু তার কথা আমি মেনেও নিয়েছিলাম। এভাবে বেশ কয়েকদিন কেটে যায়। আমি নীলসন এর সাথে বেশি একটা কথা বলি না। সেও আমার সাথে বেশি একটা কথা বলে না। আমাদের মধ্যে এক প্রকার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। কিন্তু সেই দিন সবকিছু বদলে যায় যেদিন নীলসন জানতে পারে আমাকে কয়েকটি সিনিয়র ছেলে প্রতিদিন বিরক্ত করে স্কুল থেকে ফেরার পথে। নীলসন ঠিক করে ওই দুষ্টু ছেলেগুলোকে শাস্তি দিবে যাতে করে তারা আমাকে আর বিরক্ত না করে। আমি তাকে এই কাজ করতে নিষেধ করি কারণ এটি তার জন্য অনেক বিপদজনক ছিল। কিন্তু সে শোনে না। সে ও আমি একই স্কুলে পড়ি। সে আমার আগে বাড়ি ফেরে। কিন্তু আজ সে ছুটির পরও আমার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ছুটির পর আমরা একসাথে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেই। পথের মধ্যে সেই দুষ্টু ছেলেগুলো আমাদের রাস্তা আটকে দেয় এবং আমাকে আবার বিরক্ত করা শুরু করে। কিন্তু এইবার আমার ছোট চাচা তাদের সামনে যায় এবং হুংকার দিয়ে বলে : \" খবরদার ! যদি আমার ভাতিজা কে বিরক্ত করেছিস তো। আর তোদের আমি ছাড়বো না।\" একেবারে সিনেমার ডায়লগ। চাচার ডায়ালগ শুনে ছেলেগুলো হাসতে থাকে। একজন বলতে থাকে \" তুই জনসন এর চাচা, আমাদের অনেক হাসি পাচ্ছে। চাচা কিভাবে তার ভাতিজার থেকে ছোট হয়। \" তারপর ছেলেটা কিছুক্ষণ থেমে আবার বলে \" তুই একটা পাঁচ বছরের বাচ্চা ছেলে। তুই আমাদের থামাবি। সাহস থাকলে থামিয়ে দেখা। \" ছেলেটার কথা শুনে চাচা অনেক রেগে যায়। তার পকেটে মরিচের গুড়া ছিল। সে সেগুলো ছেলেগুলো চোখে মারে। এতে ছেলেগুলো যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠে এবং আরো বেশি রেগে যায়। তারা তিনজন দৌড়ে আসে আমাদের মারার জন্য কিন্তু তার আগেই চাচা তাদের সামনে কলার খোসা ফেলে দেয়। এতে তিনজন একসাথে পড়ে যায়। ছেলেগুলো নেতা অনেক বেশি রেগে যায় এবং চাচার দিকে এসিড ছুড়ে মারে। কিন্তু চাচা বাটুল দিয়ে পাথর মেরে এসিডের বোতলকে অন্যদিকে নিয়ে যায়। এরপর চাচা পকেট থেকে কার মোবাইল যেন বের করে এবং পুলিশকে খবর দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে পুলিশ এসে পড়ে এবং ছেলেগুলোকে ধরে নিয়ে যায়। এই ঘটনা যখন আমার বাবা জানতে পারে তখন তিনি আমাদের উপর অনেক রেগে যায়। তবে তিনি খুশিও হয় যে নীলসন একজন সত্যিকারের চাচার মতো আমার জীবন বাঁচিয়েছে। এই ঘটনা পুরো স্কুলে ভাইরাল হয়ে যায়। নীলসন রাতারাতি একজন সেলিব্রেটিতে পরিণত হয়। তার বন্ধুরা এসে তার ইন্টারভিউ নিতে থাকে এবং তাকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করতে থাকে। চাচা বেশ গর্বের সাথেই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দেয় । একদিন আমি নিজের বিছানায় বসে ছিলাম। হঠাৎ নীলসন আমার কাছে আসে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি \" কি হয়েছে নীলসন ? \" নীলসন আমার মুখে হাত রেখে বলল : \" নীলসন না, বল নীলসন চাচ্চু। আমি চাই তুমি সব সময় আমাকে নীলসন চাচ্চু বলে ডাক। \" নীলসন চাচার এই কথা শুনে আমি যেন নিজের কানে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি যেন হারানো খুশি ফিরে পেয়েছিলাম। আমি সাথে সাথে তাকে জড়িয়ে ধরি। সেও আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমার চোখে খুশির জল চলে এসেছিল। আমার চাচার চোখও খুশির জলে ভিজে গিয়েছিল। অবশেষে আমাদের সম্পর্ক আবার আগের মত হয়ে গেছে। আমি আমার পিচ্ছি চাচাকে ফিরে পেয়েছি। হঠাৎ চাচা বলে উঠলো \" জন, তুমি আমার কোলে মাথা দিয়ে শোও। আমি তোমাকে গল্প শোনাতে চাই। \" আমি ঠিক তাই করলাম। আমি চাচার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লাম। চাচা আমার কপালে আলতো করে চুমু দিল এবং আমার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। এরপর সে নিজের মতো করে আমাকে গল্প শোনাতে লাগল। আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন স্বর্গে আছি। এমন একটি স্বর্গ যেখানে পারিবারিক সম্পর্ক প্রচলিত সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা যায় না। যেখানে সম্পর্ক শুধু ভালোবাসা ও বিশ্বাস দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়। আমি মনে মনে শুধু একটি কথা ভাবি- আমাদের সম্পর্ক পৃথিবীর সবচেয়ে অনন্য সম্পর্ক। চাচা - ভাতিজার এরকম সম্পর্ক পৃথিবীর আর কোথাও নেই আমি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি। সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি প্রার্থনা করি কেন আমাদের এই সম্পর্ক আজীবন টিকে থাকে। \" নীলসন, তুই আমার ছোট্ট চাচা ও আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। তোর মত আমাকে কেউ ভালবাসে না। বাবা মায়ের পর যদি কাউকে আমি সবচেয়ে ভালবেসে থাকি তবে সেটা তুই - আমার ছোট চাচা। জনসন এভারেট ।

পিচ্ছি চাচা

• Abida Borna
• 28/11/2025
• 10 views
• 0 Comments

তোমরা শুনলে হয়তো অবাক হবে তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রচলিত চাচা - ভাতিজা এর মত নয়। কারণ সে আমার চেয়ে দশ বছরের ছোট। আমার বয়স যেখানে ১৫ বছর সেখানে আমার চাচার বয়স মাত্র পাঁচ বছর। বয়সের এই উল্টো ব্যবধান একদিকে আমাদের সম্পর্ককে যেমন অন্যান্য করেছে তেমনি ভালবাসায় পূর্ণ করেছে।

See More Read Full Story