অণুগল্প:বন্ধুত্বকলমে:নাঈমা হক।নীলা ছোটবেলা হতেই মেধাবী এবং সরল প্রকৃতির হওয়ায় বন্ধু মহলে তার কদর একটু বেশি।অষ্টম শ্রেণিতে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত হলো তাকে পড়ালেখার জন্য শহরের স্কুলে নিয়ে যাওয়া হবে।বন্ধুমহলে সে খবর ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে এলো।নীলার ও বেশ মন খারাপ।এত বন্ধু,এত ভালোবাসা ফেলে তার শহরের স্কুলে ভর্তি হতে ইচ্ছা করছিল না।কিন্তু সে কী করবে? অসহায়ের মত পারিবারিক সিদ্ধান্তে শহরে চলে গেল।সেখানে নতুন স্কুল,নতুন পরিবেশ কেমন যেন মনে হতো।হঠাৎ করেই তার জীবনে এলো পূজা,যার ভালোবাসার ছোঁয়ায় সে খুব তাড়াতাড়ি নগর জীবনে খাপ খাইয়ে নিল।তার সাথে কড়া রোদে পোড়া,ঝুম বৃষ্টিতে ভেজা সবই চলতো।তাদের বাঁধভাঙ্গা বন্ধুত্ব ঈর্শনীয়।প্রতি নববর্ষ, ঈদ কিংবা পূজা পার্বণ কোনটাই বাদ যেতোনা তাদের বিচরণ ক্ষেত্র হতে।এভাবে স্কুল পেরিয়ে কলেজ,কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পালা।কিন্তু এবার ভাগ্য বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো।বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা একসাথে পড়তে পারলো না।দুজন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো।হঠাৎ করেই শুরু হলো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।পুজার পরিবারের সদস্যদের মনে হলো এদেশ তাঁদের জন্য নিরাপদ না।সময়ের পরিক্রমায় তাঁরা চলে গেলেন ভারতে। নীলা আর পূজার দীর্ঘদিন যোগাযোগ বন্ধ ছিল।নীলা সর্বত্র খুঁজে বেড়ায় পূজাকে।মেঘে মেঘে বেলা অনেক গড়িয়ে যায়।দুজনই মধ্য বয়সে উপনীত হয়।শরীরে নানা রোগ দানা বা়ঁধে।হঠাৎ করেই মারাত্মক এক সড়ক দূর্ঘটনায় পড়ে নীলা।প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।তার ও+ রক্ত কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছিল না।চরম অনিশ্চয়তার মাঝে হঠাৎ মধ্য বয়সী একজন তাকে রক্ত দিয়ে বাঁচালো।পরবর্তিতে নীলা আবিষ্কার করলো সে মহানুভব আর কেউ নয়,তারই বন্ধু পূজা।তারা দুজনই বুঝতে পারে ধর্ম কিংবা দেশ তাদের বন্ধুত্বের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে নি।তারা এখনো একই অন্তরাত্মা।তারা বুঝতে পারে সময় মানুষকে দূরে ঠেলে দিলেও বন্ধুত্ব কখনো দূরে থাকে না।বন্ধুত্বের জয় সর্বত্র।
0 Comments