গল্প:‘অনন্যা’—নাদিয়া নওশাদনাম,পলি রাণী ঘোষ। তবে বর্তমানে তার নাম কোহিনূর বেগম পলি।কারণ সে এখন মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছে।বলছি আমাদের কুসুমপুরের এক ফুলের দোকান ‘ফুলকলি’ তে কর্মরত অত্যন্ত মিশুক প্রকৃতির পলির কথা।জন্মের ছয়মাস পর তার মা সুভাসিনী বাসি পরপারে পাড়ি জমান।২০০৫ সালে এস.এস.সি. পাশের পর পলি ভালোবেসে বিয়ে করে ‘আশালতা’ কুরিয়ার ব্যবসায়ী জুনায়েদ সিদ্দিকীকে।প্রেমের বিয়ে তাই পলির বাবা শ্রীমান পার্থসারথি বাসি আজও তাকে মেনে নিতে পারেননি।পলি এক পুত্র সন্তানের জননী।ছেলের নাম রুহান সিদ্দিকী।রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।এই ফুলের দোকানে পলি খুব বেশিদিন নয় বরং একমাস যাবৎ কাজ করছেন।এর আগে একটা পার্লারে নামাজ পড়তে যাওয়ার জন্য তার বেতনের টাকা কেটে নেয়া হয়! সবাই ভাবুন একবার!এর আগে পলি যখন তার পাড়ার একটা ফাস্টফুডের দোকানে অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে চাকরি করতো তখন আফরোজা নামের এক কর্মচারী পলির অনুপস্থিতিতে ঐ ফাস্টফুড দোকানের কাউন্টার থেকে পনের হাজার টাকা চুরি করে পালিয়ে যায়। আর সম্পূর্ণ দোষটা পড়ে পলির ওপর।তারপর পলি ‘আপন আলোয়’ নামে একটা বুটিক হাউজে সেল্সগার্লের চাকরি নিয়ে ভালোই কাজ করছিল। মাস গেলে মাইনেও খারাপ ছিল না। পাশাপাশি সুচ-সুতোয় বোনা নকশী করা ব্লাউজ তৈরি করে ঐ বুটিক হাউজে বিক্রির কাজ করে বাড়তি আয় উপার্জন করছিল। দোকানের আরেক কর্মচারী আবু তাহের পলি আপুর এই আয়োন্নতি সহ্য করতে পারছিল না। পলিকে জব্দ করার জন্য সে পলির হাতের তৈরি যে ক’টা ব্লাউজ ছিল সেগুলো বুটিক হাউজ থেকে চুরি করে একটু দূরের ময়লার ডিপোর কাছে আগুনে পুড়িয়ে পোড়া ছাই ময়লার ডিপোতে ফেলে দেয়। ‘আপন আলো’তে পুলিশ আসে,তদন্ত হয় কিন্ত দুষ্টু ধড়িবাজ আবু তাহের পুলিশকে মোটা টাকা খাইয়ে ব্যাপারটি ধামাচাপা দিয়ে দেয়। আর পলি মনে একরাশ বেদনাময় স্মৃতি নিয়ে ‘আপন আলো’ ছেড়ে দেয়।তাই আজ সে শেষমেষ ‘ফুলকলি’ দোকানটিতে অনেকটা সাচ্ছন্দে কাজ করছে।তবে এখানেও পলিকে কম ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়নি। অনেকদিন এমন হয়েছে নির্ধারিত সময়ে যথেষ্ট যত্ন ও সততার সাথে ফুল ডেলিভারী করলেও যথাযোগ্য পেমেন্ট পায়নি কাস্টমারদের কাছ থেকে।যেহেতু প্রতিদিন দিনের আলোতে ফুলের দোকানে কাজে-কর্মে ব্যস্ত থাকতে হয় তাই রাতের বেলা পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ করে ছেলের পছন্দের সুস্বাদু কখনও ডিমের ঝোল,মাছ ভুনা,ডাল চচ্চড়ি,গরুর,মুরগীর ঝাল গোশত ভুনা ইত্যাদি রান্না সেরে রাখতে হয় পলি কে।পরিশ্রম হয় বেজায়।দিনশেষে পলি কাজ থেকে বাড়ি ফিরে সাংসারিক দায়িত্ব পালন করে যথাযথভাবে। একমাত্র সন্তান ও স্বামীকে নিজের হাতের রান্না করা খাবার পরিবেশন করে পরম যত্নে। প্রতিদিন ভোরে নামাজ-কালাম সেরে সংসার গুছিয়ে বেরিয়ে যায় ‘ফুলকলি’র জন্য।দূরে থাকলেও বাবাকে ভীষণ ভালোবাসে পলি। একবার ফুপুর কাছ থেকে বাবার ঠান্ডাজনিত অসুস্থতার কথা জেনে গরম গরম চিকেন স্যুপ বানিয়ে ফুপাতো ভাইকে দিয়ে বাবার কাছে পাঠিয়েছে। নিজের হাতে স্যুপ বানিয়েছে বাবাকে জানতেও দেয়নি। দূর থেকে বাবার প্রতি টান পলি ঠিকই অনুভব করে।যদিও জীবনটা অনেক অদ্ভুত! তারপরও থেমে থাকেনি ধর্মান্তরিত কোহিনূর বেগম পলি। প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধে লড়ে যাওয়া সে এক অনন্যা।এখন ইচ্ছা,সৎ পথে কাজ করে এভাবেই নিজ পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর।সত্যিই খুব ভালো লাগলো পলির সাথে আলাপ হয়ে! আসলে ধনী-গরীব,মুসলিম-অমুসলিম সবার কাছ থেকে জীবনে শেখার আছে অনেক কিছু!
0 Comments