‘ছন্দময় জীবন’✍️নাদিয়া নওশাদ একটা বিদেশী বড় কোম্পানিরভাইস প্রেসিডেন্ট রাশেদ। অনেক বড় দায়িত্ব। রাশেদ ও তার পরিবার খুলনার স্হানীয়। তবে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রাইম লোকেশনে রাশেদের বাবা ইকরাম সাহেব চার কামরার রেডিমেড একটা ফ্ল্যাট কিনেছেন। মাঝে মাঝেই খুলনার কয়রা এলাকায় নিজেদের পৈতৃক বাড়ি দেখেশুনে আসেন তিনি।মূলত ছেলেদের পড়াশোনা,চাকরি বাকরির জন্য ঢাকায় এসে থাকা। স্ত্রী ফাতিমা শারীরিকভাবে একটু অসুস্থ। ডায়বেটিস,হাই প্রেশার,শ্বাসকষ্ট নানাবিধ রোগে আক্রান্ত তিনি। রাশেদের ছোট ভাই রাজীব ঢাকা ইউনিভার্সিটির লোক-প্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। পাঁচ বছর কেটে গেলো রাশেদ এই বিদেশী কোম্পানিতে চাকরিরত। মাইনে বেশ ভালোই পায়। এছাড়াও বাবা একরাম সাহেব অংকের শিক্ষক ছিলেন খুলনার মহসিন হাই স্কুলে। উনার পেনশন থেকেও বেশ খানিকটা টাকা সংসারে আসে।তাই ফাতিমার ইচ্ছে এবার একজন সুন্দরী ঘরকন্যার সাথে রাশেদের বিয়ের আয়োজন করার। যথারীতি সোশ্যাল ম্যারেজ মিডিয়ার মাধ্যমে বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে রাইসার ও তার পরিবারের সাথে আলাপ পরিচয় সেরে এক শ্রাবণসন্ধ্যায় বেশ ধুমধাম করেই ছেলের বিয়ে সম্পন্ন করেন। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ,লম্বা কালো চুল,ছিপছিপে গড়নের রাইসার মুখমন্ডলে এক অদ্ভুত আকর্ষণ রয়েছে। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে রান্না-বান্না টাও বেশ আয়ত্ত করেছে রাইসা। বিয়ের দু-তিনদিন পর শশুরবাড়ির সবাইকে নিজ হাতে সুস্বাদু মাটন বিরিয়ানী রেধে খাইয়ে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিয়ের পর রাশেদ ও রাইসা মধুচন্দ্রিমায় কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন বেড়াতে যায়,খুব সুন্দর,আনন্দঘন মুহূর্ত উপভোগ করে। ফেরার সময় পরিবারের সবার জন্য টুকটাক উপহার আনে।সবাই উপহার পেয়ে খুব খুশি হয়। এরইমধ্যে বেশ খানিকটা সময় কেটে যায়। রাজীব পড়াশোনা শেষ করে একটা স্কলারশিপ পেয়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে চলে যায়। অসুখে-বিসুখে জীবনের শেষ কটাদিন ভুগে ফাতিমা সবাইকে কাঁদিয়ে পাড়ি দেন ‘না ফেরার দেশ\'এ। স্ত্রী বিয়োগে ইকরাম সাহেব এখন অনেকটাই একা ও চুপচাপ হয়ে গিয়েছেন। এতোকিছুর মধ্যেও একটা সুখবর হলো রাইসার কোল জুড়ে পৃথিবীতে এলো রাশেদ ও রাইসার কন্যা তুলতুল। বয়স তিন বছর। টুসটুসে গাল,ফর্সা,আদুরে দুটো চোখ–সব মিলিয়ে ভারি মিষ্টি তুলতুল বুড়ি। তবে নিজ শরীরে তুলতুলের আগমনে রাইসার জীবন একটু জটিল হয়ে যায়। রাইসার গর্ভাশয়ে আট ইঞ্চি পুরু টিউমার ধরা পড়ে। তাই ডেলিভারীর পর সেই টিউমারটি অপারেশন করে ফেলে দেয়া হয়। আর আজ রাইসা সব ধকল সামলে বেশ সুস্থ। অস্ট্রেলিয়ায় সেটেল্ড বাঙালি মেয়ে সম্পা কে বিয়ে করে রাজীব আর এদিকে রাশেদ,তুলতুল আর ইকরাম সাহেবকে নিয়ে সুন্দরভাবে সংসার সামলে যাচ্ছে। মাঝে জীবনের ছন্দপতন উতরে একটা ছন্দময় জীবন খুঁজে পেলো তারা। সমাপ্ত
vloi