( যালিম ও মজলুম ) বাসে করে সম্ভবত বাড়ি ফিরছি! হঠাৎ চোখে পড়লো একটা অদ্ভুত বিষয়। কাকের উদ্দেশ্যে তাড়া করছে ক্ষুধার্ত এক কুকুর। এই দৃশ্য হয়তো কোনদিন ভুলবো না, আমি ! উড়ন্ত কাকের ঠোঁটে এক টুকরো খাবারের লক্ষ্যে, তাকে তাড়া করে যাচ্ছে ক্ষুধার্ত কুকুর। আহা! জীবনের ব্যাকরণ, কত অবুঝ সমীকরণ। আহা! মানবতাও কখনো কখনো যেনো শামিল হয় সেই কাক আর কুকুরের মতো ভূমিকায়। কবি হয়তো এজন্যই বলেছিলেন - পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেনো ঝলসানো রুটি! যুলুম করে যে, জানি, যালিম নাকি সে! যুলুম করে যে, জানি, যালিম নাকি সে! গুনগুনিয়ে লাইনগুলো আওড়াচ্ছি! ভাবছি যালিম বলতে জুলুমকারী! তাহলে, আমরা প্রায় সবাই যালিম। কেউ নিজের সাথে, কেউ অন্যের সাথে কেউবা স্রষ্টার সাথে। যালিম ও যুলুম যেন একটা চক্রাবর্তন। মাথায় কিভাবে জানি ক্রমে ক্রমে এসব বিষয় চলে আসতেছে ভাবনায়। ভাবনার গভীরে যেতেই মনে পড়ছে জীবনের কতো স্মৃতি কতো মহূর্ত, কত বেদনা বিরহ রূপ রস। যালিম ও জুলুমের ভিত্তিতে যেনো গড়ে উঠেছে আমাদের চারপাশ। যেখানে সময়ের ব্যবধানে যালিম হয়ে যায় মজলুম,আবার মজলুম হয়ে উঠে যালিম! আজকের মজলুম যেনো আগামীর যালিম। জীবন-মরণ কারো কারো কাটে যুলুমের বেড়াজালে।যালিমের কারাগারে মরে পচে গলে শেষ হতে হয়! আহা! জীবনের কতো নির্মমতম দিক৷ সেই যালিম কখনো মানুষ, সমাজ-সভ্যতা কিংবা ভিন্ন কিছুও হয় বটে। তাহলে প্রশ্ন জাগে মনে, তবে কি উপায়? -এভাবেই কি কেটে যাবে সময়, যালিমের বন্দিদশায়। -আমাদের কি হবে না মুক্তির কোন উপায়? বাস চলছে, ভাবনাগুলো থেকে থেকে উঁকি দিচ্ছে মনে। চলন্ত বাস হঠাৎ থেমে যায়। কখনো যাত্রী উঠায়, কখনো যাত্রী নামিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে হকাররা পত্রিকা কিংবা বাদামজাতীয় খাবার নিয়ে উঠে যায় বাসে৷ একটা পত্রিকা কিনে হাতে নেই সময় কাটাতে৷ একটু অন্যমনস্ক হবার চেষ্টা। কিন্তু পত্রিকার পাতায় চোখ বুলাতে মনটা আরো বিষাদে ভরে যায়! খবরের পাতায় চোখ বুলাতেই চোখে পড়ে নৈতিক-সামাজিক অবক্ষয়ের ভয়াবহ যতো চিত্র! যেমনঃ ডাস্টবিনে পাওয়া যাচ্ছে শিশুভ্রূণ, বেড়েছে গর্ভপাতের হার। ভ্রূণের সেই শিশুর কিবা দোষ ছিলো যেখানে একটা সমাজ-সভ্যতা, মানুষের মুখোশের অমানুষগুলো মিলে তার সাথে করেছে এই যুলুম৷ আনমনে পত্রিকার পাতা উল্টাতে গিয়ে চোখে পড়ে বৈবাহিক কলহ, সম্পত্তির জেরে আত্মীয়ের মাঝে খুনোখুনি আবার কোথাও কোথাও বাবার মারা যাবার পরে সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে বাবার দাফন হতে না দেবার মতো লোমহর্ষক কতো খবর। ব্যক্তি-পরিবার,সমাজ কিংবা আরো ঊর্ধ্বে-নীচে চারদিকে যেনো যুলুমের হাট। এসব অপকর্মে যেনো অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমরা, কারো তেমন কোন বিকার নেই! যেনো আমাদের জন্ম-মৃত্যু হয়েছে যুলুমের কারাগারে নিষ্পেষিত হতে! চারদিকে যুলুমের আগ্রাসনে শুধু যেনো মজলুমের বুকভাঙা আর্তনাদ, গগণবিদারী হাহাকারআর আমাদের মতো কথিত সুশীলদের ব্যর্থ কিছু হায়ফোয়! মন খারাপের সময় কাটাতে পত্রিকার পাতায় ডুব দিয়েছিলাম। কিন্তু মনটা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেছে, তাই এখন সেখান থেকে চোখ সরিয়ে সবুজ প্রকৃতির দিকে চোখ মেলে তাকাচ্ছি৷ সবুজ শ্যামল ফসলের মাঠ, দোল খেয়ে যাচ্ছে সোনালী ফসল হু হু করে বয়ে চলা বাতাসে ৷ চোখ দুটো ভারী হয়ে আসছে নোনাজলে, হয়তো ভাবনার মায়ায় কিংবা নিঠুর বাস্তবে !টুপ টুপ করে পড়া নোনাজলে ভিজে যাচ্ছে পত্রিকার পাতা! ওদিকে, ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে পত্রিকার প্রতিবাদী লেখনীটাও। আর কতো! বলো, আর কতো?নষ্টে-নষ্টে হবে ভ্রষ্ট সদা সত্য, সদা সত্যে’ই হোক আজি সব স্পষ্ট। রচনা - ২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ঈসায়ী।
0 Comments