জীবন অনিহা—নামেই যেন এক জটিল সমীকরণ। ‘জীবন’ শব্দে যে আশাবাদের আলো, আর ‘অনিহা’য় যে বিতৃষ্ণার ছায়া, এই দুইয়ের দ্বন্দ্ব নিয়েই চলেছে মেয়েটির পথচলা। সে কখনোই কারো কাছে নিজের মনের কথা বলেনি। চুপচাপ থাকাটাই যেন তার ভাষা হয়ে উঠেছিল।নরসিংদীর এক ছোট্ট গ্রাম, ধূলিয়াপাড়া। এখানেই বেড়ে ওঠা জীবন অনিহার। মা-বাবা বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই সে নিজের মতো গুটিয়ে গিয়েছিল। স্কুলে গেলেও কারো সাথে মিশত না, খেলত না, হেসে উঠত না। সে শুধু ছবি আঁকত। এক অদ্ভুত অভ্যাস ছিল—সে সবসময় বৃত্ত আঁকত। প্রতিটি বৃত্তের একপাশে থাকত রঙিন আলো, আর অন্য পাশে থাকত ঘন কালো অন্ধকার।একদিন স্কুলের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় তার আঁকা ছবিটা সবাইকে চমকে দেয়। বিষয় ছিল “আশা ও হতাশা”। জীবন অনিহা একটা বৃত্ত এঁকেছিল, যার অর্ধেক অংশে ছিল সূর্যের আলোয় ভেসে যাওয়া মাঠ, বাচ্চারা দৌড়াচ্ছে, পাখিরা উড়ছে। আর বৃত্তের আরেক অর্ধেক অংশে ছিল কালো, একেবারে অন্ধকার—একটা ছায়ামূর্তি সেখানে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। কেউ বুঝতে পারেনি, এটা আসলে জীবন নিজের গল্প বলছে।শিক্ষিকা শিখা আপা তাকে ডেকে বললেন,—“তুমি এইরকম ছবি কেন আঁকো, জীবন?”জীবন চোখ নামিয়ে বলল,—“কারণ আমার জীবনও এমন। অর্ধেক আলো, অর্ধেক কালো।”শিখা আপা সেই প্রথম বুঝলেন, মেয়েটার মধ্যে কত না বলা কথা জমে আছে। তিনি ধীরে ধীরে জীবনকে কথা বলতে শেখালেন, বিশ্বাস করতে শেখালেন। কয়েক বছর পর জীবন অনিহা একটি বই প্রকাশ করে—“বৃত্তের অর্ধেক আলো, অর্ধেক কালো”। বইটিতে তার নিজের আঁকা ছবির পাশে ছিল ছোট ছোট কথামালা—মন খারাপের, নিরবতার, আবার আশা জাগানিয়ার।এক সাক্ষাৎকারে কেউ তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল,—“আপনার নাম জীবন অনিহা, অথচ আপনার গল্পে তো জীবনই সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট। এটা কেন?”জীবন হেসে বলেছিল,—“কারণ আমি জানি, যতই অনিচ্ছা থাকুক, জীবন থেমে থাকে না। শুধু বৃত্তটা সম্পূর্ণ করার সাহসটা চাই। অর্ধেক কালো থাকলেও, অর্ধেক আলো তো আছে!”
জীবন অনিহা—নামেই যেন এক জটিল সমীকরণ। ‘জীবন’ শব্দে যে আশাবাদের আলো, আর ‘অনিহা’য় যে বিতৃষ্ণার ছায়া, এই দুইয়ের দ্বন্দ্ব নিয়েই চলেছে মেয়েটির পথচলা। সে কখনোই কারো কাছে নিজের মনের কথা বলেনি। চুপচাপ থাকাটাই যেন তার ভাষা হয়ে উঠেছিল।
0 Comments