তারাগঞ্জ বাজারে আকালু চাচার একটা ছোটখাটো মুদি দোকান। দোকানের নাম \"আকালুর মুদি দোকান\", কিন্তু এই নাম যতটা নিরীহ, তার খাতার হিসাব ততটাই ভয়ংকর! সারা বছর আকালু চাচা মানুষের মুখ চেয়ে খাতা ভরেন—নগদ নাই? সমস্যা নাই! “লিখে রাখি খাতায়”—এই বাক্যটাই তাঁর ব্যবসার মূলমন্ত্র।বছরের শেষে, যখন খাতার পৃষ্ঠা শেষ হতে চায় আর আকালুর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে, তখনই আসে “হালখাতা”। হালখাতা মানেই আকালুর ঘরে টেনশন, পকেটে টান, মুখে হাসি আর দোকানে বাতাসা-চনা-সন্দেশের বৃষ্টি।একদিন ঘোষণা ঝুলে:“৩০ তারিখ হালখাতা! মিষ্টি থাকবে, মাফ নাই! যার বাকি আছে, সে আইসেন টাকা লইয়া। খালি পেট, খালি হাত — দোকানের সামনে দাঁড়াইবেন না।”সেদিন বিকেল থেকেই মুদি দোকানের সামনে জমে উঠে মেলা। পিঁপড়ার মতো মানুষ আসছে, কিন্তু টাকা কই? কারো পকেট ফাঁকা, কারো অজুহাতের ঝুলি ভর্তি।তাজপুরের মতিন ভাই আগে আসলেন,— “আকালু ভাই, চনার একটা ঠোঙা দেন তো!”আকালু খাতা উল্টাতে উল্টাতে বলল,— “আপনার নামের নিচে তিনশো আশি টাকা… কই টাকা?”— “বেতন পাই নাই, এইটা অগ্রিম মিষ্টি খাই!”— “বেতন পাইলেই মিষ্টিও পামু!”স্ত্রীবাড়ির রুনু বেগম এলেন পুরো দলবল নিয়ে।— “চাচা, মিষ্টি দেন।”— “আপনি তো সারা বছর বাচ্চার পটি সাবান, দুধ, বোরোলিন সব বাকিতে নিছেন!”— “তো কি হইছে? আজ তো উৎসব! ওসব মনে রাখলে চলে?”মোহনপুরের লালু আবার দোকানে দাঁড়িয়ে শুধু সন্দেশ চেয়ে চেয়ে দেখে। আকালু জিজ্ঞেস করল,— “খামু না?”— “চাচা, খাইলে খাতা আরো বাড়ব না?”— “তয় খাইলেন না কেন?”— “আপনেরে ভয় পায়!”সন্ধ্যার পর দেখা গেল, চনা শেষ, বাতাসা শেষ, সন্দেশ শেষ। আর টাকা? ওটা খাতায়ই রইল, পকেটে এল না।আকালু মুখে হাসি টেনে বললেন,— “এই দোকান মুদি, তবু পুঁজি নাই! হালখাতা করি, লাভ হয় ‘হাহা’ খাতায়, মুনাফা হয় হায় হায়-এ!”শেষমেষ আকালুর দোকানের সামনে একটা নতুন সাইনবোর্ড ঝোলে:“আগে টাকা, পরে মাল — হালখাতায় কান্না বন্ধ!”
বছরের শেষে, যখন খাতার পৃষ্ঠা শেষ হতে চায় আর আকালুর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে, তখনই আসে “হালখাতা”। হালখাতা মানেই আকালুর ঘরে টেনশন, পকেটে টান, মুখে হাসি আর দোকানে বাতাসা-চনা-সন্দেশের বৃষ্টি।
0 Comments