

গল্পঈদ উপহারআফছানা খানম অথৈপাপিয়ার বিয়ে হয়েছ আট নয় মাস হবে।স্বামী ইরফান চাকুরীজীবি,স্বাস্থ্য সহকারী।স্বামীর সংসারে তেমন একটা ভালো নেই পাপিয়া।আজকাল আমাদের সমাজে একটা সিস্টেম চালু হয়েছে।অপরাধ ঢাকার জন্য যৌতুককে উপহার হিসেবে চালিয়ে নিচ্ছেন সমাজের এক শ্রেণির মানুষ।শুধু তাই নয় এটাকে জায়েজ বলেও ঘোষণা করছেন প্রতিনিয়ত। তাই কন্যাদায়গ্রস্ত পিতামাতা বাধ্য হচ্ছেন যৌতুক দিতে। আজ পাপিয়ার বাবা মা ও তা করতে বাধ্য হচ্ছেন। যৌতুক হিসাবে মেয়েকে দিয়েছেন অলঙ্কার, ঘর সাজানোর ফার্নিচার,জামাইকে যাতায়াতের জন্য একটা বাইক।এতোকিছু দেয়ার পর ও শ্বাশুড়ির মন ভরছে না। তিনি উঠতে বসতে খোটা দিচ্ছেন পাপিয়াকে।পাপিয়া মুখবুঝে সবকিছু সহ্য করছে।অন্যায় জেনেও কোন প্রতিবাদ করছে না।আমাদের সমাজে বিয়ের যৌতুক ছাড়া ও আর একটা সিস্টেম চালু হয়েছে।সেটাকে যৌতুক না বলে ঈদ উপহার হিসেবে চালিয়ে নিচ্ছেন সমাজের এক শ্রেণির মানুষ।শ্বশুর-শ্বাশুড়ির আবদার ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় ছেলের শ্বশুর বাড়ি থেকে উপহার আসতে হবে,এটাই নিয়ম।তানা হলে মান সম্মান থাকবে না।আর সেই নিয়ম অনুযায়ী পাপিয়ার শ্বাশুড়ি তাকে একটা লিস্ট ধরিয়ে দিলেন।এই লিস্টে যা কিছু লেখা আছে সব আনতে হবে, তা না হলে তার মান সম্মান থাকবে না।পাপিয়া নিরুপায় কোন প্রতিবাদ করতে পারছে না।যেমন করে হোক বাবার বাড়ি থেকে এসব আনতে হবে।তানা হলে শ্বাশুড়ি তাকে তাড়িয়ে দেবেন।ওইদিকে বাবার অবস্থাও ভালো না ধারদেনা করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।এখন এসব দেবে কোত্থেকে।তবুও উপায় নেই আনতে হবে।কি আর করা বাবাকে লিস্টটা ধরিয়ে দিলো পাপিয়া।বাবা লিস্ট পড়ে দেখতে পেলেন তাতে লেখাঈদ উপহারইফতারি ঈদের সেমাই চিনি যাবতীয় জিনিসত্রজামাইর জন্য সু্ট বুটশ্বশুরের জন্য পায়জামা পাঞ্জাবিশ্বাশুড়ির জন্য কাতান শাড়িননদের জন্য বেনারসি শাড়িননদের জামাইর জন্য সুট বুটএসব দেখার পর পাপিয়ার বাবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।কারণ এসব কিনতে অনেক টাকা লাগবে।কিন্তু উনার হাতেতো এক টাকা ও নেই।এখন উপায়..।যেমন করে হোক উপায় একটা বের করতে হবে।মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে ঈদ উপহার পাঠাতে হবে।তানা হলে মেয়ের সুখ শান্তি নষ্ট হবে। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি জামাইর কাছে তাকে ছোট হতে হবে।তাই ছুটে গেলে খালেদ বেপারির কাছে।তিনি কড়া সুদের ব্যবসা করেন।আর সুযোগ বুঝে গরীব মানুষের জায়গা সম্পদ কম দামে কিনে নেন।আজ পাপিয়ার বাবা মাসুদ মিয়া ছুটে গেলেন তার কাছে।অনুনয় বিনয় করে কড়াসুদে কিছু টাকা ধার চাইলেন।কিন্তু খালেদ বেপারি দিতে রাজী হলেন না।কারণ তার কাছে তিনি অনেক টাকা পাওনা আছেন।বিয়ের সময় ধার নেয়া টাকা সুদে আসলে অনেক বেড়ে গেছে।এগুলো না দিলে সে কোন টাকা দিবেন না ছাপ ছাপ জানিয়ে দিলেন।কিন্তু মাসুদ মিয়া ছাড়লেন না,তার হাতে পায়ে ধরলেন।এবার খালেদ বেপারি তাকে টাকা দিতে রাজী হলেন,তবে শর্ত একটা তার ভিটেমাটি তার কাছে বিক্রি করতে হবে।মাসুদ মিয়া রাজী হলেন ভিটেমাটি বিক্রি করে মেয়ের বাড়িতে উপহার পাঠালেন।কিন্তু শ্বাশুড়ির মন মতো হলো না।এইজন্য ও পাপিয়ার বাবাকে কিছুকটু কথা শুনতে হলো।আজকালকার শ্বাশুড়িগুলো কেমনজানি লোভী স্বভাবের হয়ে গেছে।যত পায় তত চায়।ছেলে বিয়ে করিয়ে মেয়ের বাবার কাছে একটার পর একটা আবদার করে চলেছে।যত দিচ্ছে শেষ হচ্ছে না।আর ও চায়,আর ও.. .।বউ কিছু বলেছে সেরেছে,চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্দার করে তবে শান্ত।শুধু তাই নয় তাড়িয়ে দেয়ার হুমকিও দেয় প্রতিনিয়ত।কিন্তু একবার ও ভেবে দেখেন না,তিনি একজন নারী,এবং এক সময় বউ ছিলেন।তাছাড়া তার বাবা, তাকে কতটুকু দিয়েছেন?এসব দিকগুলো যদি শ্বাশুড়িরা ভাবতেন তাহলে বোধহয়, আমাদের সমাজ এত অধঃপতনে যেতনা।ঘরে ঘরে বউ শ্বাশুড়ির যুদ্ধ চলতো না।যাক পাপিয়ার বাবা কোনমতে ধারদেনা করে ঈদুল ফিতরের উপহার পাঠিয়েছেন।কিন্তু এখানে শেষ নয় সামনে আসছে ঈদুল আযহা।এবার শ্বাশুড়ি ঘোষণা দিলেন বাজারের সবচেয়ে বড় গরুটা যেন বেহাই তার মেয়ের বাড়িতে উপহার হিসেবে পাঠাই।কিন্তু বড় গরু কিনতে অনেক টাকা লাগবে।এত্ত টাকা মাসুদ মিয়ার হাতে নেই।তিনি কোনমতে একটা খাসী ছাগল কিনে মেয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন।এতে শ্বাশুড়ির মন ভরলো না।তিনি এই নিয়ে অনেক বকাঝকা করলেন।বড় গরু না পাঠিয়ে কেনো ছাগল খাসী পাঠিয়ে তার মান সম্মান নষ্ট করলেন?পাপিয়া শ্বাশুড়িকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু তিনি কিছুতেই বুঝতে চাচ্ছেন না।তার বড় গরু চাই,চাই..।এই নিয়ে বউ শ্বাশুড়ির মাঝে আর কিছু সময় তর্কাতর্কি হয়।কোন সমাধান হয় না।তর্কাতর্কি চরম পর্যায়ে পৌছে যায়।পাপিয়ার স্বামী ইরফান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।মা ইনিয়ে বিনিয়ে তাকে অপমান করেছে বলে ছেলেকে ভুল বুঝায়। মায়ের অপমান সহ্য করতে না পেরে ইরফান বউয়ের গায়ে হাত তোলে।চরম পর্যায়ে লাঠি দিয়ে মারধর করে।একসময় পাপিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে।তবুও ইরফান শান্ত হয় না,আর ও মারে...।একসময় বুঝতে পারলো তার শ্বাশ প্রশ্বাস প্রবাহিত হচ্ছে না।মরে গেছে মনে হয়।তখনি তাকে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় দড়ি পেছিয়ে রটিয়ে দেয়,পাপিয়া সুইসাইড করেছে।কিন্তু সত্য চাপা রইল না।আপনা আপনি প্রকাশ হয়ে গেল।পুলিশ ধরে নিয়ে গেল জামাই শ্বশুর শ্বাশুড়ি সবাইকে।আজ আমাদের সমাজে প্রায় পরিবারে \"ঈদ উপহারের\" নামে মোটা এমাউন্টের যৌতুক দাবী করছে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতামাতার কাছে।যারা দিতে পারছে তাদের মেয়ের সংসার টিকছে।আর যারা দিতে পারছে না,তাদের মেয়ের সংসারে আগুন জ্বলছে।শুধু তাই নয় এই নিয়ে জঘন্য ঘটনা ঘটে চলেছে সমাজের আনাচে কানাচে।আসলে সত্য কথা হলো সামর্থ্যের বাইরে জোর করে কোনকিছু চাওয়াকে যৌতুক হিসেবে ঘোষণা করেছেন সরকার।এটা দেয়া নেয়া দুটোই দণ্ডনীয় অপরাধ।এছাড়া ইসলাম এটাকে সাপোর্ট করেনা।হারাম বলে ঘোষণা করেছেন।তাহলে আমরা সবাই কেনো এই হারাম খাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছি?তা কি একবার ও ভেবে দেখেছেন?দেখেননি।কারণ ওহ খাচ্ছে, আমি খেলে দোষ কোথায়?দোষ আছে অনেক জাগায়।কেয়ামতের দিন সবাইকে সত্যের মুখোমুখি হতে হবে।তখন আল্লাহপাকের কাছে জবাব দিতে হবে, ছেলেকে কেনো,গরু ছাগলের মতো বিক্রি করেছেন?তখন কি জবাব দেবেন?আজ থেকে ভাবতে শিখুন।\"ঈদ উপহারের\" নামে মোটা এমাউন্টের যৌতুক চাওয়া বন্ধ করুন।দেখবেন সংসারে সুখ শান্তি ফিরে এসেছে।বউ শ্বাশুড়ির যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেছে।ভালোবাসা উপছে পড়ছে। ঃসমাপ্তঃ
0 Comments