‘নীরার দিনকাল’✍️নাদিয়া নওশাদ আসমাউল হুসনা নীরা। সুগৃহিণী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে বিয়ে থা করে পুরোদমে সংসার করছে। বাসার কাছের একটা কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতাও করেছে। এরইমধ্যে স্বামী মারুফ আহমেদের সাথে বিবাহিত জীবনের দশ বছর অতিবাহিত করে চলেছে। মারুফ একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে সেলস ম্যানেজার হিসেবে চাকরিরত। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সে। মারুফ আর নীরার দাম্পত্য জীবনে সুখ ছিল তবে একটাই আফসোস! অনেক চেষ্টা করেও তাদের কোনও সন্তান হয়নি। মারুফ এ বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য না করলেও নীরা নিজের ও মারুফের একটা চাপা হতাশার আভা সবসময়ই অনুভব করে। নীরার ছোট বোন মাহিরা। পড়াশোনা শেষে এখন সে ও নিজের সংসার জীবন নিয়ে ব্যস্ত। মাহিরা ও রাকিব দম্পতির সংসারের মধ্যমণি তাদের সন্তান বাবাই। দেড় বছর বয়স তার। বাবাই সোনার সান্নিধ্য খুব শান্তি দেয় নীরাকে। মাঝেমাঝেই ওর সাথে একান্ত কিছু সময় কাটিয়ে নীরা ভুলে থাকে তার যাবতীয় বেদনা। কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে আত্মীয় পরিজনদের মাঝে গেলে সর্বদাই একটা প্রশ্নবিদ্ধ পরিস্থিতিতে পড়তে হয় নীরাকে। ছোটবেলা থেকেই নীরা একটু স্বাস্থ্যবতী।বিয়ের পর অনেক চেষ্টার পরেও সন্তানের মুখ দেখতে পায়নি সে। চিকিৎসকদের দেখানোর পর জানা গেলো নীরার পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা রয়েছে। এদিকে বয়স পয়ত্রিশ পেরিয়েছে। এখন আর মা হওয়া সম্ভব নয়। অবস্থা মোটামুটি স্বচ্ছল বলেই নীরা দুই-একটি দেশে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছে কিন্ত কোনও লাভ হয়নি। মারুফ এ বিষয় নিয়ে নীরাকে কিছু বলে না। সংসারের কাজ,বৃদ্ধ শশুর-শাশুড়ীর দেখভাল সব মিলিয়েই ব্যস্ততা গেলেও পড়ন্ত বিকেলে খুব মন কাঁদে নীরার। অবশেষে মারুফকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করিয়ে অনাথ আশ্রম ‘কিশলয় কুঞ্জ’ তে যায় দুজনে। বিভিন্ন বয়সী ছেলেমেয়েদের মিলনমেলা এই অনাথ আশ্রমটি। আশ্রমের পৃষ্ঠপোষক মনজুরুল আহসান বেশ হাসি-খুশি ও অমায়িক। তিনি নিজে ঘুরে ঘুরে মারুফ ও নীরাকে জায়গাটি দেখালেন। শেষমেষ অনিক নামে দুবছর বয়সী একটি ছোট্ট শিশুকে দত্তক নিলো মারুফ ও নীরা। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের কাজ সেরে অনিককে নিয়ে অত্যন্ত আনন্দের সাথে বাড়ি ফিরে এলো অনিকের বাবা ও মা। ছোট্ট এই সদস্যের আগমনে তাদের জীবন হয়ে উঠলো পরিপূর্ণ। অনিককে নিয়ে আনন্দ-উল্লাসে কেটে গেলো নীরার দিনকাল। *সমাপ্ত*
0 Comments