

গল্পনরপিশাচ আফছানা খানম অথৈবাবা-মায়ের একমাত্র আদরের ছেলে মনির লেখাপড়া শেষ করে ব্যবসার হাল ধরলেন।ব্যবসা বাণিজ্যে বেশ মনোযোগী হয়ে উঠলেন।বাবা- মা খুব খুশি ছেলে ব্যবসা বাণিজ্য মনোযোগ দিয়ে করছে।এবার তাকে বিয়ে করানো দরকার।ঘটক ডেকে পাত্রী দেখা শুরু....।আজ এখানে কাল ওখানে পাত্রী দেখে চলেছে।কিন্তু মনের মতো কাউকে পাচ্ছে না।যাক অনেক দেখাদেখির পর শারমিন আরা রীমা নামের এক অধ্যাপকের মেয়েকে তাদের পছন্দ হয়ে যায়।রীমা মাস্টার্স কমপ্লিট করে একটা বেসরকারী স্কুলে শিক্ষতা করছে।যাক দুপক্ষের পরামর্শক্রমে মহাধুমধামে বিয়ের কার্যক্রম শেষ হয়।রীমা বধুবেশে শ্বশুর বাড়িতে পদার্পণ করলো।বাসরঘরে বসেবসে স্বামীর আগমনের প্রহর গুনছে।কিন্তু সে কী রাত বারোটা,একটা, দুটা বেজে গেল,এখনো স্বামী আসছে না।ব্যাপার কী?বিভিন্ন রকম প্রশ্ন তার মাথায় উৎপেতে বসলো।জল্পনা কল্পনায় ব্যস্ত...।ব্যাপার কী?বাসর রাত শেষ হতে চলেছে এখনো স্বামীর দেখা নেই?যে রাতের জন্য এত বছর অপেক্ষা করেছি আজ সেই রাত গোল্লায় যাচ্ছে।তবে কি সে পরনারীতে আসক্ত?না না তা কী করে হয়।তাহলে সে বিয়ে করলো কেনো?ভাবনার অবসান হতে না হতে স্বামী মুনির নেশা করে মাতাল অবস্থায় মদের বোতল হাতে নিয়ে বাসর ঘরে প্রবেশ করলো।স্বামীর এ অবস্থা দেখে স্ত্রী অবাক বিস্ময়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল।কোনকিছু বলার আগে মনির বলল,\"ডোন্ট টাচ্ মি\" সে ধপাস করে শুয়ে পড়লো।রীমা বুঝতে পেরেছে স্বামীর অবস্থা ভালো না।কিছু বলতে গেলে হিতে বিপরীত হবে।তাছাড়া বাসর রাতে কেউ ঝগড়া করে?তাই বাড়াবাড়ি না করে সে ও শুয়ে পড়েছে।পরদিন ও একই অবস্থা সে নেশা করে মাতাল হয়ে শেষ রাতে বাসায় ফিরেছে।এভাবে কেটে গেল সপ্তাহখানেক।সত্য কখনো চাপা থাকে না।আপনা আপনি বেজে উঠে।রীমা একদিন আসল সত্য জানতে পারলো,মনিরের রিলেশন আছে।এক ডিভোর্সি চল্লিশ বছরের নারীর সাথে তার প্রেম ভালোবাসা চলছে।আর তা জানতে পেরে তার মা-বাবা তড়িঘড়ি করে ছেলেকে বিয়ে করান।তাদের ধারণা বিয়ের পর বউয়ের প্রেমে আসক্ত হয়ে সে তাকে ভুলে যাবে।কিন্তু না,সে আর ও বেশিবেশি তার সাথে মেলামেশা করছে।বউকে পাত্তাই দিচ্ছে না।একদিন রীমা স্বামীকে বলল,তোমার সাথে কিছু কথা আছে?বলো কী বলবে?আমার তাড়া আছে?তোমার নাকি রিলেশন আছে?হুম আছে।তাহলে আমাকে বিয়ে করলে কেনো?বিয়েটা আমার ইচ্ছাতে হয়নি।বাবা-মায়ের ইচ্ছাতে হয়েছে।তো কী হয়েছে?এখন মেনে নিলেতো পার?না আমি পারবো না।কেনো পারবে না?আমার কি নেই? যে তোমাকে সুখী করতে পারবো না?একজন পুরুষকে সুখী করার জন্য একজন নারীর যতগুলো বৈশিষ্ঠ্য থাকার কথা,,আমার মাঝে সব আছে রুপ,গুন,শিক্ষা, ভদ্রতা,নম্রতা সব সব...।তাছাড়া ঐ ডিভোর্সি চল্লিশ বছরের বুড়ির মাঝে কি দেখেছ,যা আমার মাঝে নেই?সেই কৈফিয়ত কী তোমাকে দিতে হবে?হুম হবে।কারণ আমি তোমার বিবাহিতা স্ত্রী।আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মানি না।আমি খুকুকে ভালোবাসি।তাকে নিয়ে সুখী হতে চাই।তুমি একটা বোকা, তানা হলে ডিভোর্সি চল্লিশ বছরের বুড়িকে ভালোবাসতে না?হুম আমি বোকা,এসব নিয়ে আর কখনো মাথা ঘামাবে না।ঘামাবো না মানে,একশবার, ঘামাব ,হাজারবার ঘামাব।কারণ আমি তোমার স্ত্রী।স্বামীর ভালোমন্দ জানার অধিকার আমার আছে।আমি বর্তমান আর ওহ ভবিষ্যৎ। সেই দিক দিয়ে আমার অধিকার বেশি।এতো অধিকার ফলাতে এসো না।শেষে সব হারাবে।তবুও আমার স্বামীকে পরনারীতে আসক্ত হতে দেব না।প্লিজ আমি হাতজোড় করে বলছি।অতীতকে ভুলে যাও।বর্তমানকে নিয়ে ভাব।আমাকে তোমার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করো না।ফিরে এসো।আমার ভালোবাসায় তুমি অনেক সুখী হবে।আমি সারাজীবন তোমাকে ভালোবাসব।স্বামী খিলখিল করে হেসে উঠে বলে, \"এসব সস্তা ডায়ালগ কখনো আমার মন ভুলাতে পারবে না।আমি কখনো তোমাকে স্ত্রীর অধিকার দেব না।\"এভাবে তারা আর ও কিছু সময় কথাকাটাকাটি করলো।কিন্তু কোন লাভ হলো না।মুনির উত্তেজিত হয়ে অফিসে চলে গেলো।শ্বাশুড়ি আঁড়ালে দাঁড়িয়ে সব শুনালো। তারপর কাছাকাছি এসে বলল,বউ মা তুমি তোমার অধিকার থেকে এ পাও নড়বে না।যেমন করে হোক এই ভুলপথ থেকে তাকে সরিয়ে আনতে হবে।কেমন করে মা?সেতো বিয়ের পর থেকে আমার সাথে বাজে আচরণ করে চলেছে।কাছে ঘেষতে দিচ্ছে না।এভাবে কী জীবন চলে? মা আপনি বলুন?তবুও বউ মা, চেষ্টা করতে হবে।তোমাকে ভেঙে পড়লে চলবে না।শক্ত হতে হবে।ধৈর্য ধরতে হবে।আমি আর পারছি না মা।কোনভাবে তাকে বশে আনতে পারছি না।সে সারাক্ষণ ঐ বুড়িটাকে নিয়ে পড়ে থাকে।বাসায় ফিরে রাত শেষ করে।তাছাড়া আপনারা বা কেনো জেনেশুনে আমার জীবনটা নষ্ট করলেন?প্লিজ মা আমাদেরকে ক্ষমা কর।ভেবেছিলাম বিয়ের পর ভালো হয়ে যাবে।কিন্তু না,সে সারাক্ষণ ওর সাথে...।বউ আমার মন বলছে,একদিন সে তার ভুল বুঝতে পারবে।এবং তোমার কাছে ফিরে আসবে।মা তাই যেন হয়।মা তুমি আর একটু ধৈর্যধর।শ্বাশুড়ির কথায় রীমার মনে কিছুটা আশার আলো সৃষ্টি হলো।সে মনপ্রাণ উজাড় করে স্বামীকে ভালোবাসতে চেষ্টা করছে।কিন্তু পারছে না।কারণ স্বামী তাকে কোন পাত্তাই দিচ্ছে না।দিনেদিনে তাদের মাঝে ভালোবাসার পরিবর্তে তিক্ততা বেড়ে চলেছে।স্বামীর মনে রীমা কিছুতেই জায়গা করে নিতে পারছে না।সব চেষ্টা তার ব্যর্থ হতে চলেছে।তবুও সে হাল ছাড়েনি।শক্ত হাতে বৈঠা ধরতে চাইছে।মনিরের পরকীয়ার বিষয়টা ঘরে বাইরে সবাই জানে।একদিন অফিসের ম্যানেজার মনিরের সঙ্গে কথা বলতে গেলে দেখতে পায়।মুনির খুকু রোমাঞ্চ...।এই দৃশ্য দেখার পর ঘৃণায় তার শরীর রি রি করে উঠল।তিনি সহ্য করতে পারলেন না।বললেন,ছি: ছি: বসের এমন রুচি? ঘরে সুন্দরী বউ রেখে, একটা বুড়িকে নিয়ে...।ভাবতে ঘেন্না হচ্ছে।না আর থেমে থাকা যাবে না।ম্যাডামকে এক্ষণি খবর দিতে হবে।তিনি আর দেরী করলেন না।ফোন করে রীমাকে সকল সত্য বলে দিলেন।রীমা আর সহ্য করতে পারলো না।দ্রুতগতিতে অফিসকক্ষে প্রবেশ করলো।এসে এ কি দেখল,মুনির খুকু দুজন একসঙ্গে...।রীমাকে দেখে তারা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে গেল।মুনির কড়াচোখ রাঙিয়ে বলল,তুমি এখানে?হুম আমি এখানে।আমি আসাতে বুঝি অসুবিধা হয়েছে?হুম হয়েছে।তোমাকে এখানে কে আসতে বলেছে?যেই বলুক বলেছে।তাতে তোমার কী?লজ্জা করে না।একজন বুড়িকে নিয়ে অফিসে রোমাঞ্চ...।আর তোমাকে বলছি, ঐমহিলা লজ্জা করে না।ছেলের বয়সী একটা লোকের সঙ্গে রঙ্গলীলা করতে।তোমার জন্য আজ আমার সংসার ভাঙতে বসেছে।তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি ভবিষ্যতে আর কখনো আমার স্বামীর সাথে মিশবে না।মিশলে কী করবে?সেটা সময়মতো বুঝতে পারবে।তাছাড়া আমি ওর বিবাহিতা স্ত্রী।তুমি কে? যে, যখন তখন ওর সাথে মিশছ?আমি ওর গার্লফ্রেন্ড।আর আমি ওর বউ।কার অধিকার বেশি?আমার না তোমার?তাই বলছি ভালোই ভালোই বিদায় হও।তানা হলে দারোয়ান ডেকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেব।না আমি বের হব না।দেখি তুই কি করতে পারিস?এই বেয়াদব মহিলা এক্ষণি বের হও বলছি।আমার রাগ চরমে উঠে যাচ্ছে কিন্তু..।আমাকে মারবে নাকি?প্রয়োজন হলে তাই করব।তবুও আমার স্বামীর সাথে তোকে মিশতে দেব না।দুজনের রাগের মাত্রা বেড়ে যায়।একে অপরকে মারতে যাই।মনিরের রাগ চরমে উঠে যাই।সে দুজনকে দুদিকে সরিয়ে দেয়।তারপর বউয়ের গালে কষে চড় মারে।দুজনের মাঝে খুব কথাকাটাকাটি হয়।অবস্থা বেগতিক দেখে ম্যানেজার বাসায় ফোন করে।মনিরের মা এসে ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে রীমাকে বাসায় নিয়ে যায়।এর দুদিন পর মনির খুব ভালো মানুষ সাজে। রীমার কাছে আত্মসমর্পন করে।নিজের ভুল স্বীকার করে মাফ চাই।রীমাকে সারাজীবন ভালোবাসার ওয়াদা করে।শুধু তাই নয় তাকে খুব ভালোবাসে।স্ত্রী স্বামীর ছলনা বুঝতে পারেনি।সে ভেবেছিল সত্যি স্বামী তাকে ভালোবাসে।তাই সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে তার হাতে হাত রেখে বেঁচে থাকার শফথ করে।ভালোভাবে কেটে চলেছে তাদের দিনগুলো।একদিন মনির আদরের সহিত বলল,জান চলো আমরা কদিনের জন্য বেড়াতে যাব।তা কোথায় যাবে?চলো ঢাকার বাইরে থেকে ঘুরে আসি।রীমা অমত করলো না।স্বামীর প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেলো।দুজন বেড়ানোর প্রস্তুতি নিলো।সময়মতো তারা রওয়ানা করলো।মনির নিজের গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করলো।অনেক পথ যাওয়ার পর ঢাকার একটা নির্জন স্থানে গিয়ে সে গাড়ি ব্রেক করলো।এখানে কোন জনমানবের চিহ্ন নেই।এখানে মানুষ তেমন একটা যাতায়াত করে না।দিন দুপুরে মানুষ মেরে ফেললেও কেউ বলতে পারবে না।এমন নির্জন জায়গা।যাক মনির রীমাকে নিয়ে ব্রিজের নিচে গেল।রীমার কেনজানি সন্দেহ হলো।সে জানতে চাইল,জান তুমি আমাকে এখানে নিয়ে এলে কেনো?মনির ঢাগর চোখ করে বলল,তোকে মারতে এনেছি।কালনাগিনী তোর জন্য আমার জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।বলতে না বলতে সে তাকে চেপে ধরে ধারলো চুরি তার বুকের উপর তাক করলো।রীমা কেঁদে কেঁদে বলে,ওগো আমাকে প্রাণে মেরো না।আমার প্রাণ ভিক্ষা দাও।আমি জীবিত থাকা অবস্থায় কখনো স্ত্রীর অধিকার নিয়ে তোমার সামনে আসব না।কালনাগিনী তোকে আমি বিশ্বাস করিনা।তুই বেঁচে থাকলে আবার স্ত্রীর অধিকার চাইবে।তুই আমার পথের কাঁটা। তোকে মেরে না ফেলা পর্যন্ত আমার শান্তি নেই।প্লিজ আমাকে মেরো না।আমার প্রাণ ভিক্ষা দাও।আমি তোমার জীবন থেকে সরে যাব সারাজীবনের জন্য।আর কখনো আসবো না।আমি বিশ্বাস করি না।তোকে মারলে তবে আমার শান্তি।খুকুকে বিয়ে করতে পারব।প্লিজ আমাকে মেরো না।আমি আল্লাহর নামে কসম কেটে বলছি বেঁচে থাকা অবধি তোমার সামনে আসব না।আমার জীবন থেকে তোমাকে মুক্তি দিলাম।এমন কি এসব ব্যাপার আমি কাউকে বলব না।এর বিনিময়ে তুমি আমার প্রাণ ভিক্ষা দাও।এভাবে সে মনিরের কাছে কাকুতি মিনতি করে কেঁদে কেঁদে অনেকবার প্রাণ ভিক্ষা চাইল।কিন্তু মনিরের দিল কিছুতেই নরম হলো না।সে তাকে কিছুতেই রেহাই দিলোনা।রীমা মরনপন যুদ্ধ করলো বাঁচার জন্য।কিন্তু পারলো না।অনেক ধস্তাধস্তির পর ছুরিকাঘাততে রক্তাক্ত্ব করে সে তাকে মেরে ফেলল।।তারপর হোটেলে অবস্থান করলো।রক্তাত্ব জামা পাল্টিয়ে নতুন জামা পরে নিলো।কিন্তু কিছুতেই সে স্বাভাবিক হতে পারছে না।বারবার রীমার চেহারটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠে।সে কেমনজানি হয়ে যায়।তার ভিতরে পরিবর্তন দেখা দেয়।সে তার ভুল বুঝতে পারে। অনুশোচনায় কাতর হয়ে পড়ে।তারপর পুলিশের কাছে সব সত্য প্রকাশ করে।পুলিশ লাশ নিয়ে এসে পোস্ট মর্টের জন্য মর্গে পাঠাই।এদিকে রীমার বাবা বাদী হয়ে মনিরে বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয় চল্লিশ বছরের বুড়ির জন্য নরপিশাচ মনির নিজের স্ত্রীকে খুন করে কৌশলে।বেশ কয়েকদিন ধরে আলোচনা সমালোচনা চলে।অনেকে অনেক মত পোষণ করে,কেউ বলে ফাঁসি হোক,কেউ বলে মুক্তি হোক।আদালত কারো কথা আমলে নিলো না।নিজ গতিতে চলছে আদালতের কার্যক্রম। দীর্ঘ কয়েক বছর মামলা চলার পর এক সময় মনিরের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়।মনিরকে বাঁচানোর জন্য তার মা-বাবা অনেক চেষ্টা করে।কিন্তু পারেনা।কারণ রীমার বাবা- মায়ের এককথা এই নরপিশাচের মৃত্যুদণ্ড চাই।অবশেষে \"নরপিশাচ\" মনিরের ফাঁসি কার্যকর হলো। ঃসমাপ্তঃবি:দ্র: গল্পটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা।
0 Comments