গল্পফুলওয়ালীআফছানা খানম অথৈমুনিয়া সকাল থেকে ফুল নিয়ে বসে আছে।একটা ফুল ও বিক্রি হয়নি।তাই তার মন খারাপ।ঘরে অসুস্থ মা,ফুল বিক্রি করে মায়ের জন্য ঔষধ পথ্য কিনে।কিন্ত আজ একটা ফুল ও বিক্রি হয়নি।মায়ের জন্য ঔষধ পথ্য কিনবে কি দিয়ে?ভাবনাগুলো তার মাথায় দোল খাচ্ছে।যেমন করে হোক ফুল বিক্রি করতে হবে।বসে থাকলে চলবে না।সে সবার কাছাকাছি গিয়ে করুন স্বরে বলছে, ভাইয়েরা বইনেরা ফুল নিবেন,ফুল।আমার কাছে তাজা ফুল আছে।ফুল নিবেন ফুল..।কেউ ফুল কিনছে না।সে দেখল এক জোড়া কপোত কপোতি গা ঘেঁষে বসে আছে।দেখে মনে হয় প্রেমিক প্রেমিকা।সে কাছাকাছি গিয়া বলল,আপু একটা ফুল নিবেন?না নেব না।নেন না আপু একটা ফুল।আজ সকাল থেইক্যা একটা ফুল ও বিক্রি হয় নাই।বললাম না আমি ফুল নেব না।তবুও বিরক্ত করছ কেনো?আপু একটা ফুল দশ টাকা।নেন না একটা ফুল।ওরা নাছোড় বান্দা ফুলতো নিলোই না।বরং মুনিয়াকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো।কি করা মুনিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।চোখের পানি টলমল করছে।মনে হয় ঝরে পড়বে।বহুকষ্টে নিজেকেসামলে নিয়েছে।। দু:খগুলো মনের মধ্যে দোল খাচ্ছে।কাউকে বলতে পারছে না।এক পা দুপা করে সামনে এগিয়ে চলল।কিছুদূর যাবার পর দেখল কয়েকজন ছেলে মেয়ে ফুসকা খাচ্ছে।সে তাদের কাছে গিয়ে আবার বলল,আপুরা ভাইয়েরা ফুল নিবেন,ফুল..?একটা ফুল নেন না ভাইয়া?না নেব না।যাও এখান থেকে।তারা ও কোন ফুল কিনল না।তাকে তাড়িয়ে দিলো।এভাবে সে সবার দুয়ারে ধর্না ধরলো।কেউ তার ফুল কিনল না।আস্তে আস্তে পার্কের লোকজন খালী হতে লাগল।সে মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।ভাবছে বাসায় ফিরে যাবে।এমন সময় একটা মেয়ে তার কাছিকাছি এসে সালাম দিয়ে বলল,ফুলওয়ালী আপু কেমন আছ?সে সালামের জবাব দিয়ে বলল,আপু ভালো নেই?কেনো আপু কী হয়েছে?আজ একটা ফুল ও বিক্রি হয়নি।এজন্য মন খারাপ?জ্বি আপু।আচ্ছা তোমার সবফুল আমি কিনব।সত্যি বলছেন আপু?হুম আপু সত্যি।কত টাকা দিতে হবে বল?আপু দুশ টাকা দিলে হবে।আচ্ছা দেব।তোমার নাম কী আপু।আমার নাম মুনিয়া।এই বয়সে ফুল বিক্রি কর কেনো?আমার মায়ের অসুখ তাই ফুল বিক্রি করি।তোমার বাবা নেই?জ্বি না আপু।বাবার কি হয়েছে?বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।তোমাদের সংসার চলে কিভাবে?আমার মা বাসায় কাম করত।এখন অসুখ তাই আমি ফুল বিক্রি করি।এই টাকায় তোমাদের সংসার চলে?না চলে না, কষ্ট হয়।অনেক সময় না খাইয়া থাকতে হয়।মুনিয়ার বাবা পাঁচ বছর ধরে নিরুদ্দেশ।কোন খোঁজ খবর নেই।আছে না মরে গেছে কেউ বলতে পারছে না।এভাবে আর কতদিন,মুনিয়ার মা বাধ্য হয়ে শহরে চলে আসেন।তারপর বাসায় কাজ নেন।বস্তিতে একটার ঘর ভাড়া করে থাকেন।সারাদিন কাজ শেষে মা মেয়ে এক সঙ্গে বাসায় ঘুমায়।এভাবে চলছিল তাদের জীবন।কিন্তু আজ তিন চার মাস ধরে মুনিয়ার মা জমিলা অসুস্থ।জ্বর মাথা ব্যথা শরীর দূর্বল লাগছে,হাটাচলা করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।টাকার জন্য ভালো ডাক্তার দেখাতে পারছে না।সরকারী হাসপাতালে পাঁচ টাকার টিকেট দিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ খাচ্ছে।এই ঔষধে কী রোগ সারবে?না কখনোই না।রোগ আর ও বেড়ে চলেছে।এদিকে কয়েক মাসের বাসা ভাড়া বাকী।জমিদার ভাড়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছে।এ মাসে ভাড়া না দিলে বাসা থেকে বের করে দিবে বলে জরুরী সংকেত জানিয়ে দিয়েছে।পাঁছ ছয় বছরের মুনিয়া নিরুপায় হয়ে হয়ে বাগান থেকে ফুল কুড়িয়ে এনে বিক্রি করে মায়ের ঔষধ পথ্য খাবার কেনার টাকা যোগাড় করছে।এতটুকুন মেয়ের মুখে এমন করুণ কাহিনী শুনে রেবেকার আফসোস হলো।সে মুনিয়ার হাতে দুটো পাঁচশত টাকার নোট গুছে দিয়ে বলল,যাও আপু বাসায় ফিরে যাও।মুনিয়ে ভাবছে এই টাকা দিয়ে মাকে বড় ডাক্তার দেখাবে।তাই খুশি হয়ে বাসায় ফিরে আসল।কিন্তু সে কী!তাদের ঘরের সামনে অনেক লোক জড়ো হয়ে আছে।মুনিয়াকে দেখে সবাই তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।কেউ কিছু বলছে না।মুনিয়ার মাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছে।মুনিয়া করুণ কণ্ঠে বলল,আপনারা সবাই দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?কেউ কিছু বলছে না।সবার চোখ থেকে জল পড়ছে।খালা কাঁদছেন কেনো?মায়ের কী হয়েছে?মাকে ঢেকে রেখেছেন কেনো?খালা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলছে,,মারে তোর মা আর নেই, মারা গেছে।কথাটা শুনা মাত্রই মুনিয়া মা মা বলে চিৎকার করে কেঁদে উঠে মাকে জড়িয়ে ধরলো।সে অজরধারায় কাঁদছে।তার কান্নার যেন শেষ হচ্ছে না।কয়েকজন মিলে তাকে সরিয়ে নিয়ে গেল।তারপর সবাই মিলে জমিলার কাপন দাফনের কাজ শেষ করলো। ঃ সমাপ্তঃ
0 Comments