‘বিগত প্রণয়’✍️নাদিয়া নওশাদ বাইশ বছর বয়সী হাল্কা ছিপছিপে গড়নের রিয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনার পাশাপাশি শখের বশে বই লেখে। প্রায়শই প্রতি বছর‘একুশে বইমেলা’ তে ওর একটা না একটা বই প্রকাশিত হয়। তরুণ কথাসাহিত্যিক হিসেবে এরইমধ্যে খানিক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এরকমই এক বিকেলে বইমেলা প্রাঙ্গণে সাংবাদিক অভি আহমেদের সাথে রিয়ার দেখা। অভি ‘নতুন আলো’ পত্রিকার সাংবাদিক। বই বিকি-কিনি,বয়োজ্যেষ্ঠ গুণীজনদের সমাগম,পাঠক প্রতিক্রিয়া,নিত্য-নতুন খবরের সন্ধানে অভি পৌঁছে গেলো বইমেলায়। রিয়ার সাথে আলাপচারিতা,এরপর ভালো লাগা,উভয়ের দূরালাপনী নম্বর বিনিময় সব মিলিয়েই চমৎকার সময় কেটে গেলো। এক ছুটির দিনে রিয়া তার বাড়িতে অভি কে নিমন্ত্রণ করে। অভিনন্দন বাবা আশফাক সাহেব একজন ব্যবসায়ী ও মা সিতারা গৃহিণী।কথায় কথায় অভি আশফাক সাহেব কে তার আর রিয়ার মন আদান-প্রদানের বিষয় খুলে জানায় আর রিয়া কে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ভালো ছেলে অভি। আর একমাত্র মেয়ে বলে আশফাক সাহেব ও সিতারা আপত্তি করলেন না। এক শ্রাবণ সন্ধ্যায় বেশ ধুমধাম করে অভি ও রিয়ার বিয়ের সানাই বেজে উঠলো। সংসারে মা রিহানা ও বোন জয়া ছাড়া আপনজন বলতে আর কেউ নেই অভির। বিয়ের পর রিয়া অভির পরিবারের সদস্যদের সাথে মোহাম্মদপুরের নিজ বাসায় বসবাস শুরু করলো। এতকিছুর মধ্যেও রিয়া পড়াশোনাটা ঠিকঠাক চালিয়ে যাচ্ছে। প্রথম কিছুদিন অভিদের বাড়িতে রিয়ার ভালোই দিন কাটলো। ধীরে ধীরে অভির প্রমোশন হলো আর কাজের ব্যস্ততায় অভি ডুবে গেলো। সারাদিন শাশুড়ীমার সাথে সাংসারিক টুকটাক কাজ,পড়াশোনা,লেখালেখি করে রিয়াওবেশ হাঁপিয়ে উঠেছে। এরইমধ্যে নিজ শরীরে ছোট্ট একটি প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করলো রিয়া। অভি,রিহানা,জয়া,রিয়ার বাবা-মা সবাই খুব খুশি। তবে এই খুশি খুব বেশিদিন স্থায়ী হলো না। দিন দশেকের মধ্যে বাড়ির দোতলার সিঁড়ি থেকে আকস্মিক পা ফসকে গর্ভপাত হয়ে গেলো রিয়ার। মুহূর্তের মধ্যেই সব আনন্দ ধুলিস্মাত হয়ে গেলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভি আর রিয়ার মাঝে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হলো।পাশাপাশি রিয়া চরম মানসিক হতাশাগ্রস্ত হয়ে গেলো। সিদ্ধান্ত নিলো অভির কাছ থেকে চিরতরে সরে আসার। তবে অভি কিছুটা বোঝাতে চেয়েও শেষ পর্যন্ত পারলো না। রিয়া চলে এলো তার নিজ বাড়িতে,বাবা-মায়ের কাছে। মাঝে কেটে গেলো প্রায় সাত-আট বছর। আজ রিয়া কথাসাহিত্যিক হিসেবে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্ত এখনও বড্ড একাকীত্বে ভোগে। অতীতে অভির সাথে কাটানো সোনালি মুহূর্তগুলো তাকে যেন মাঝেমধ্যেই অতীতপানে হাতছানি দিয়ে ডাকে। তার জীবনের বিগত প্রণয় কে চাইলেও ভুলে যেতে পারেনা। সেদিন নারায়ণগঞ্জে একটা ক্ষুদ্র আয়োজনের বইমেলায় হঠাৎই রিয়ার সাথে অভির দেখা হয়। তবে অভি জীবনে আরেক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে। রিয়ার তাকে ছেড়ে আসার বছর দুয়েক পর মায়ের পছন্দের পাত্রী তানিয়ার সাথে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় অভি। এই সংসারে দেড় বছরের এক কন্যাসন্তান আছে তাদের। অভির নতুন জীবন আজ কেনো যেন একটু হলেও রিয়ার মনের কোণে বিরাট ধাক্কা দিয়েছে। সহজে মন থেকে মেনে নিতে পারে না রিয়া। তবুও এই বিগত প্রণয় নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবে বলেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। বই লেখা নিয়ে এগিয়ে যাবে আগামীর পথে। *সমাপ্ত*
0 Comments