গল্প:\'শুভময়ী\'---- নাদিয়া নওশাদ রজত আর পারমিতারবিয়েটা পারিবারিকভাবে হলেওবিয়ের পর তারা দুজন দুজনকে প্রচন্ড ভালোবাসে,পরস্পরকে চোখে হারায়। কলকাতার যাদবপুর এলাকায় নিজেদের আদিবাড়িতে বাবা,মা,রজত ও পারমিতার বসবাস। একই শহরের বারুইপুরে পারমিতার বাবার বাড়ি।পরিবারে মা আর এক ছোট ভাই রয়েছে। রজত একটা স্থানীয় ব্যাংকে ম্যানেজার হিসেবে চাকরিরত। সংসারের যাবতীয় কাজ আর শশুর-শাশুড়ীর সেবা-শশ্রুষা,দেখাশোনা করে পারমিতার দিনাতিপাত হয়। বেশ সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটছিল তাদের। দেখতে দেখতে কয়েটি বছর কেটে গেলো। এরইমধ্যে পারমিতার কোল আলো করে পৃথিবীতে এলো তাদের কন্যা শুভময়ী। ডাক নাম মিষ্টু। দেখতে ভারি মিষ্টি। মায়াভরা দুটো চোখ, নরম তুলতুলে গাল। হাসলে গালে টোল পড়ে। মিষ্টু অর্থাৎ শুভময়ী এখন কৈশোরে পদার্পণ করেছে।রাশমণি মেমোরিয়াল স্কুলে ক্লাস সেভেনের ছাত্রী। একদিন হঠাৎই ব্যাংক থেকে বাড়ি ফেরার পথে রোড অ্যাসিস্ট্যান্টে রজতের মৃত্যু হয়।মুহূর্তের মধ্যেই পারমিতার রঙিন পৃথিবী ধূসর হয়ে যায়। সে নিঃসঙ্গ অনুভব করে। শুভময়ী হয়ে পড়ে পিতৃহীন। অনেক কষ্টে একটা স্কুলের চাকরি যোগাড় করে পারমিতা। দিন-রাত স্কুল, সংসার নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে। রজতের ইন্সুরেন্সের টাকা,পারমিতার মাইনে আর শশুরের একসময়ের কিছু জমানো টাকায় সংসার চলছে। রজতের মৃত্যুর পর তার মা অনেকটা বদলে গিয়েছে। পারমিতাকে তার এখন সহ্য হয় না। তার একটা ভুল ধারণা,রজতের মৃত্যুর জন্য কোনও না কোনও ভাবে পারমিতা দায়ী। পারমিতার বাবার বাড়ির কেউ অথবা স্কুলের সহকর্মীদের দেখা করতে এলে তিনি কটাক্ষ করে আর বলে,\"খুবতো নিজের লোকদের কাজু,কিশমিশ দেয়া বিস্কুট দিয়ে আপঅ্যায়ন করা হচ্ছে।\"এসব দেখে শুভময়ী খুব কষ্ট পায়।সে মায়ের একাকীত্ব অনুভব করে। মার জন্য কিছু করতে চায়। কিন্ত ছোট বলে সেও যে আজ অসহায়,অপারগ। পারমিতার স্কুলের সহকর্মী সুজয়। খুব ভালো মানুষ। পারমিতার ব্যাপারে সবকিছুই জানে। সে পারমিতাকে পছন্দ করে। পারমিতার সম্মতি পেলে তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তাকে আপন করে নিতে চায়। একসময় সে পারমিতার শশুরবাড়িতে দেখা করতে আসে তারপর পারমিতাকে বিয়ের সাধটা জানায়। সব শুনে পারমিতা বেশ অবাক হয়। শুভময়ী এ কথা জেনে বেশ খুশি হয়। পারমিতার শাশুড়ীমা যথারীতি কটুকথা শোনায়,আপত্তি জানায়। ছোট হলেও শুভময়ী মাকে বোঝায় যে বাবার মৃত্যুর পর তারও নিজের জীবন উপভোগ করার অধিকার আছে। তাই সে মন্দিরে দাঁড়িয়ে শাস্ত্রমতে মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে দেয়। বিয়ের পর পারমিতা শশুর-শাশুড়ীকে প্রণাম করতে গেলে শাশুড়ীমা তাকে যথেচ্ছ অপমান করে।শুভময়ীর ইচ্ছা ছিল মায়ের সাথে চলে যাওয়ার কিন্ত তার ঠাকুমা মিষ্টু তথা শুভময়ীকে নিজের কাছে রাখতে চায়। পারমিতা বুকে পাথর চেপে শুভময়ীকেঅনেক বুঝিয়ে বলে যে ঠাকুমার বয়স হয়েছে তাই মিষ্টুকে বলে ঠাকুমার কাছে থেকে তাঁর দেখভাল করতে। আজ শুভময়ী অষ্টাদশী। এতোগুলো বছরে মায়ের সাথে যদিও ঠিকঠাক দেখা করতে পারেনি কিন্ত লুকিয়ে মাঝে মাঝে মাকে দেখে আসা,টুকটাক ফোনালাপ চালিয়ে গিয়েছে। অবশেষে এখন আর কেউ আইনত পারমিতা ও শুভময়ীকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না। সুজয়ও শুভময়ীকে খুব স্নেহ করে। এবার খুব ধুমধাম করে সুজয়,পারমিতা শুভময়ীর জন্মদিন পালন করেছে।সত্যিই মায়ের জীবনের অভিনব আনন্দ ফিরিয়ে দিয়ে শুভময়ী সমাজে এক উজ্জ্বল ও বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে! *সমাপ্ত*
0 Comments