(শিশু ও কিশোর উপযোগী ভৌতিক গল্প)...
*আমরা দিনের বেলা কাজ করি আর রাতে বিশ্রামের জন্য ঘুমাই। দিনের বেলায় আমরা সবকিছু যেমনভাবে দেখতে পাই রাতের অন্ধকারে তত নয়। কিন্তু ভূতের বেলায় আমাদের ঠিক উল্টো। তারা সারারাত ঘুরে-ফিরে খাবার সংগ্রহ করে এবং নানাবিধ কাজ করে। আর দিনের বেলায় ওরা চোখে তেমন দেখতে পায় না যেমনটা রাতে দেখতে পায়। ভূতেরা সাধারণতঃ ছোট নদী, খাল অথবা ডোবার পাশে বড় বড় গাছে থাকে। আর যেখানে সরিষা ক্ষেত থাকবে সেখানে তারা কোনদিন বাসা বাঁধে না। তাই নতুন ভূত-দম্পতি মদন ও তাগারী বিশাল বটগাছটায় বাসা বেঁধেছে। কারণ পাশেই ডোবা রয়েছে। ধারে-কাছে কোন ক্ষেত-খামার নেই। সরিষা ক্ষেতের তো প্রশ্নই আসে না।দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল। প্রচণ্ড রোদ। এতটুকু বাতাস নেই। গাছের পাতা নিশ্চল। গতরাতে নতুন ভূত দম্পতি পেট ভরে খেতে পায়নি। তাই তাড়াতাড়ি ক্ষুধা লেগে গিয়েছে। দিনের ঘুমটা তেমন হচ্ছে না। একটু পরপর বারবার ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। এখন সময় একদম ফুরাচ্ছে না। মদন ভূত ও তাগারী ভূত গাছের ডালে শুয়ে শুয়ে গল্প করছে। মদন ভূত তার স্ত্রী তাগারী ভূতকে খুব ভালোবাসে। তাগারী ভূতও মদন ভূতকে খুব ভালোবাসে। মোটকথা দু\'ভূতই দু\'ভূতকে খুব ভালোবাসে। কোন কিছু পেলে ওরা সমান ভাগ করে খায়। এখন আলোচনা চলছে আজ রাতে কোথায় কোথায় যাবে। সবকিছু ঠিক করছে দু\'জনে মিলে। হঠাৎ করে দু\'জন লোকের কথা ভূত-দম্পতির কানে ভেসে এল।নিচের দিকে তাকাল ভূত দম্পতি। দিনের বেলায় ওরা ভালো দেখতে পায় না। তবে আবছায়ায় বুঝতে পারে দু\'জন লোক বটতলায় বসে কিছু খাচ্ছে। লোকদুটি কী গল্প করে তা শোনার জন্য ভূত দম্পতি কান পেতে বসে রইলো।প্রথম লোক- এই গদা, কেমন লাগছে?দ্বিতীয় লোক- খুব ভালো লাগছে। আহা! জীবনে এমন স্বাদের মিষ্টি কখনও খাইনি।প্রথম লোক- আমি বলেছিলাম। অথচ আমার কথা তুই এতদিন বিশ্বাসই করিসনি। আরে যা রটে তা অবশ্যই কিছু বটে।দ্বিতীয় লোক- কিছু নয়। একেবারে সম্পূর্ণ সত্যি। অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল জামাইয়ের হাতের তৈরি মিষ্টি খাবো। আজ সেই ইচ্ছেটা পূরণ হলো। সত্যিই জামাইয়ের হাতের তৈরি মিষ্টির কোন তুলনা হয় না। মধুর চেয়েও মধুর। অপূর্ব স্বাদ এই মিষ্টির।প্রথম লোক- আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। এতদিন ধরে শুধু শোনে এসেছি; ভোলাচং নতুন বাজারের জামাইয়ের হাতের তৈরি মিষ্টি একবার যে খায় সে জীবনে কোনদিন ভুলতে পারে না।দ্বিতীয় লোক- আমারতো তাই মনে হচ্ছে। যতদিন বেঁচে থাকবো এই মিষ্টির কথা মনে থাকবে।প্রথম লোক- এই গদা এবার উঠা যাক।– এই বলে লোক দুটো উঠে চলে গেল।লোকগুলোর সব কথাই ভূত দম্পতি কান পেতে শুনেছে। ওদের ইচ্ছে হচ্ছিল মিষ্টির হাঁড়িটা নিয়ে নিতে। কিন্তু ওরা নিতে পারেনি। কারণ মধ্যদুপুর ছাড়া ওদের খাওয়া নিষেধ। খাইলে সমাজচ্যূত হতে হয়। তাগারী ভূত বায়নার সুরে বলল- ওঁগো, চঁলনা আঁজ জাঁমাইয়ের দোঁকান হঁতে মিঁষ্টি এঁনে খাঁই। গাঁছের ফঁলমূল, মাঁছ, মাঁনুষের রঁক্ত এঁগুলো খেঁতে খেঁতে মুঁখে অঁরুচি ধঁরে গিঁয়েছে। মুঁখের রুঁচিটা এঁকটু পঁরিবর্তন কঁরা দঁরকার।মদন ভূত চিন্তিত হয়ে কী যেন ভাবল। তারপর বলল- তুঁমি কঁথাগুলো ঠিঁকই বঁলেছো। এঁকদম আঁমার মঁনের কঁথা বঁলেছো। কিঁন্তু মিঁষ্টি আঁনবো কীঁভাবে?তাগারী ভূত উত্তরে বলল- তাঁ অঁবশ্য ঠিঁকই বঁলেছো।ভূত দম্পতি ভাবতে লাগল। কিন্তু কোন বুদ্ধি খোঁজে পাচ্ছে না। অনেকক্ষণ সময় অতিবাহিত হয়ে গেল। মদন ভূত হঠাৎ নীরবতা ভেঙে বলল- এঁক কাঁজ কঁরলে কেঁমন হঁয়?তাগারী ভূত জানতে চাইল- কীঁ কাঁজ?মদন ভূত ধীরে ধীরে বুঝিয়ে বলল- সঁন্ধ্যার পঁর আঁমরা দু\'জন যুঁবক সেঁজে জাঁমাইয়ের দোঁকান থেঁকে মিঁষ্টি কিঁনে আঁনবো।তাগারী ভূত গালে দু\'হাত ঠেকিয়ে কী যেন চিন্তা করতে লাগল। মদন ভূত একদৃষ্টে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। তাগারী ভূত লজ্জা পেয়ে বলল- অঁমন কঁরে কীঁ দেঁখছো? ঠাট্টা করে মদন ভূত বলল- তুঁমি খুঁব সুঁন্দর। তাঁই তোঁমাকে মঁন ভঁরে দেঁখছি। তোঁমার অঁর্ধেক কঁপালের কাঁলি, গাঁলে থেঁকে থেঁকে কাঁলির ছোঁয়া আঁমাকে সঁত্যিই মুঁগ্ধ কঁরে।সত্যিই স্বামীর মন জয় করার জন্য তাগারী ভূত পাতিলের তলার কালি রোজ রোজ সারা গায়ে ভাল করে লাগায়। ঠোঁটেও কালি লাগাতে কখনও ভুল করে না। প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় সাজগোজ করে তাগারী ভূত। তারপর স্বামীর সাথে বের হয়।মদন ভূত নীরবতা ভেঙে বলল- কীঁ ভাঁবছো তুঁমি?লজ্জা পেয়ে তাগারী ভূত বলল- নাঁ, কিঁছুই নাঁ। এঁমনিতেই।মদন ভূত আবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলল- আঁমি যেঁ বুঁদ্ধিটা এঁটেছি ওঁটা কেঁমন হঁবে?অনেক ভেবে-চিন্তে তাগারী ভূত বলল- যঁদি কেঁউ বুঁঝে ফেঁলে তঁবে মিঁষ্টি আঁর কিঁনতে পাঁরবো না। তাঁছাড়া বাঁজারে গেঁলে নঁতুন মাঁনুষ দেঁখে সঁবাই তাঁকিয়ে থাঁকবে। উঁল্টো পাঁ দেঁখলেই বুঁঝে ফেঁলবে।দু\'ভূতই ভাবতে লাগল। কিন্তু আর কোন বুদ্ধি খোঁজে পাচ্ছে না। মদন ভূত হাঁটুর উপর আঙুল ঠুকতে ঠুকতে ভাবছে। তাগারী ভূত তার স্বামীকে একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখল। সত্যিই বড় ভাবনায় পড়ে গেছে স্বামীটি। ভাবছে যেহেতু একটা বুদ্ধি নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। তাছাড়া মদনভূত অন্যান্য ভূতের চেয়ে একটু বেশি বুদ্ধিমান। যার জন্যই তাগারী ভূত মদন ভূতের প্রেমে মজেছিল। হঠাৎ নীরবতা ভেঙে মদন ভূত চেঁচিয়ে ওঠল- আঁরেকটা বুঁদ্ধি পেঁয়েছি!তাগারী ভূত খুব কাছাকাছি হয়ে বলল- শুঁনি কীঁ রঁকম বুঁদ্ধি পেঁয়েছো।মদন ভূত তার নতুন বুদ্ধিটা তাগারী ভূতের কানে কানে বলল- বুদ্ধিটা দু\'জনেরই পছন্দ হয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। সময় কাটতে চাচ্ছে না। একেকটা মিনিট যেন একেকটা বছর মনে হচ্ছে। শেষ বিকেলের ঘুমটা প্রতিদিনই গাঢ় হয়। কিন্তু আজ মিষ্টির কথা শোনার পর চোখের পাতায় কিছুতেই ঘুম আসছে না। মদন ভূতের একটু একটু ঘুম আসছে। চোখের পাতা দুটো এক হতেই তাগারী ভূত নাড়া দিয়ে বলে- এঁখন আঁর ঘুঁমাচ্ছো কেঁন? উঁঠো সঁন্ধ্যা হঁলো প্রাঁয়। এঁকটু পঁরেই আঁমরা বেঁর হঁবো। তাঁড়াতাড়ি উঁঠে দাঁত মেঁজে তৈঁরি হঁও।দুষ্টুমি হাসি হেসে মদন ভূত বলল- কীঁ ব্যাঁপার! মিঁষ্টির কঁথা শোঁনার পঁর বুঁঝি চোঁখে ঘুঁম আঁসছে নাঁ!এই কথাতে তাগারী ভূত ভীষণ লজ্জা পেল। সত্যিই মিষ্টির কথা শোনার পর মনটা অধীর হয়ে আছে। সময় একদম এগোচ্ছে না। নিজেকে সামলে নিয়ে তাগারী ভূত বলল- এঁসো দাঁত মাঁজি।– এই বলে মদন ভূতকে টেনে তুলল। *রাত বারোটা। ভোলাচং নতুন বাজার একেবারে নীরব। সব দোকানদার ঘুমিয়ে পড়েছে অনেক আগেই। বাজারের ভেতরে বটগাছে মদন ভূত ও তাগারী ভূত বসে আছে। কারণ কয়েকজন ময়রাসহ জামাই এখনও মিষ্টি বানাচ্ছে। আগামিকাল আধ মণ মিষ্টি সাপ্লাই দিতে হবে। বিয়ে বাড়ির অর্ডার। রাত তিনটা নাগাদ মিষ্টি বানানো শেষ হল। সবকিছু গুছানো শেষ করে জামাই ঘুমাতে যাবে এমন সময় ভূত দম্পতি হাজির হল।মদন ভূত ডাক দিল- জাঁমাই দোঁকানে আঁছেন?বিছানায় শুয়ে থেকেই জামাই উত্তর দিল- কে?জাঁমাই, আঁমরা বিঁদেশী লোঁক।– জবাবে মদন ভূত বলল।জামাই বিছানায় শুয়ে থেকেই জবাব দিলো- এত রাতে কী কাজে এসেছেন?মদন ভূত বলল- কিঁছু মিঁষ্টি নিঁতে এঁসেছি।জামাই ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললেন- দয়া করে সকালে আসুন।এঁকটু কঁষ্ট কঁরে এঁখনই দেঁন জাঁমাই।– মদন ভূত অনুরোধ করে বলল।উত্তরে জামাই বললেন- বললামতো সকালে আসুন। মদন ভূত চালাকি করে বলল- আঁমাদের ভোঁরের লঞ্চে চঁলে যেঁতে হঁবে। এঁকটু কঁষ্ট কঁরে এঁখন দিঁলে ভাঁলো হঁয়।জামাই উত্তরে কিছু না বলে চুপচাপ শুয়ে রইলেন। কতক্ষণ সময় অতিবাহিত হয়ে গেল। কোন উত্তর না পেয়ে মদন ভূত আবার অনুরোধ করে বলল- অঁনেকদিন থেঁকেই আঁপনার হাঁতের তৈঁরি মিঁষ্টি খাঁওয়ার ইঁচ্ছে ছিঁল। এঁদিক দিঁয়ে যাঁচ্ছি যঁখন ভাঁবলাম আঁপনার হাঁতের তৈঁরি মিঁষ্টি নিঁয়ে যাঁই। খুঁব ইঁচ্ছে আঁপনার মিঁষ্টি খাঁবো।এতগুলো কথা শুনে জামাইয়ের মনটা গলে গেল। মনে মনে ভাবলেন, বিদেশী লোক। হয়ত কারো কাছে শুনেছে। অনেক আশা নিয়ে এতরাতে এসেছে। ফিরিয়ে দিলে বেচারা ভীষণ কষ্ট পাবেন। এই ভেবে বিছানা ছেড়ে উঠে এলেন জামাই। দরজা খুলে দেখেন দু\'জন যুবক বয়সী ছেলে। প্যান্ট-শার্ট পরিহিত। দেখতে বেশ ভদ্রই মনে হচ্ছে। মনটা একটু নরম হলো। তারপর চোখ কচলাতে কচলাতে জামাই বললেন- আপনাদের কতটুকু মিষ্টি লাগবে?মদন ভূত বলল- দঁশ কেঁজি দিঁলেই চঁলবে।জামাই হাত জোড় করে বললেন- ক্ষমা করবেন। এত মিষ্টি দেয়া যাবে না। কারণ বিয়ে বাড়ির অর্ডার দেয়া মিষ্টি। বড় জোর পাঁচ কেজি দিতে পারবো।এতক্ষণে ছদ্মেবেশী তাগারী ভূত মুখ খুলল- দঁশ কেঁজি দিঁলে ভাঁলো হঁয়। কাঁরণ বাঁড়িতে অঁনেক লোঁকজন। পাঁচ কেঁজি মিঁষ্টিতে কিঁছুই হঁবে নাঁ।জামাই খানিকক্ষণ কী যেন ভাবলেন। তারপর বললেন- আমার একটু অসুবিধা হবে। তবু আপনাদের দিচ্ছি। কিন্তু মিষ্টি নিবেন কীসে করে।মদন ভূত বলল- আঁমরাতো সঁঙ্গে কঁরে কিঁছুই নিঁয়ে আঁসিনি।জবাবে জামাই বললেন- কিন্তু আমার এখানে কোন অতিরিক্ত পাত্র নেই।এঁক কাঁজ কঁরুন, আঁপনার এঁখান থেঁকে এঁকটা বঁড় পাঁতিল দেঁন। দাঁম দিঁয়ে দেঁব।– মদন ভূত বেশ বুদ্ধি খাটিয়ে বলল।কথাটা শুনে জামাই কিছুই বললেন না। কী যেন ভাবতে লাগলেন। তারপর ঘরের ভেতর থেকে ঘুরে এসে বললেন- হ্যাঁ, দেয়া যাবে। আপনারা দোকানের ভেতরে আসুন। আমি এক্ষুণি মিষ্টি মেপে দিচ্ছি।ভূত দম্পতি এক সঙ্গে বলল- ঠিঁক আঁছে, ধঁন্যবাদ। বাঁইরে দাঁড়াতে আঁমাদের কোঁন অঁসুবিধা হঁবে নাঁ। আঁপনি মিঁষ্টি মেঁপে নিঁয়ে আঁসুন। আঁমরা এঁখানেই দাঁড়াচ্ছি।কিছু না বলে জামাই দোকানের ভেতর ঘরে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর একটা পাতিলসহ হাজির হলেন। এসেই বললেন- এই নিন দশ কেজিই দিলাম।– এই বলে পাতিলটা এগিয়ে দিলেন। মদন ভূত পাতিলটা হাতে নিল। টাকা না দিয়েই ভূত দম্পতি মিষ্টির পাতিল নিয়ে রাস্তার দিকে হাঁটা শুরু করল।মিষ্টির দাম দিয়ে গেলেন না!- এই বলে জামাই ভূতদের পেছন পেছন ছুটলেন। জামাই এখনও টের পাননি যে, ওরা দু\'জন মানুষ নয়। ওরা ভূত। আসলে সারাদিনের ক্লান্তি শেষে চোখ জুড়ে শুধু ঘুম। নইলে ভূতদের নাকালো কন্ঠটা অন্ততঃ বুঝতে পারতো।মদন ভূত হাঁটতে হাঁটতে বলল- আঁপনি আঁমাদের সাঁথে আঁসুন। মেঁইন রাঁস্তায় আঁমাদের বাঁবা দাঁড়িয়ে আঁছেন। উঁনিই আঁপনাকে টাঁকা দিঁবেন। আঁমার কাঁছে কোঁন টাঁকা নেঁই। জামাই ভূত দম্পতির পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করলেন। ব্রীজটা পেরিয়ে এলেন মেইন রাস্তায়। রাস্তা একেবারে ফাঁকা। কোন লোকজন নেই। রাস্তা পেরিয়ে চাতালের দিকে পা বাড়াতেই জামাই বললেন- কী ব্যাপার! আপনারা ঐদিকে কোথায় যাচ্ছেন।মদন ভূতের সরল জবাব- আঁমদের সাঁথেই আঁসুন। জামাই এবার বেশ বিরক্ত হয়েই বললেন- কিন্তু ওদিকে কেন?কোন উত্তর নেই। জামাই আর কোন কথা বাড়ালেন না। তাদের পেছন পেছন হাঁটছেন। চাতালের মধ্যে যে বড় বটগাছটা ওরা সোজা সেদিকে হাঁটছে। ভূত দম্পতির পিছু পিছু জামাই হাঁটছেন। হঠাৎ কেমন বিশ্রী একটা গন্ধ জামাইয়ের নাকে এসে লাগলো। কী ব্যাপার! প্যান্ট-শার্ট পরা অথচ শরীর থেকে এমন বিশ্রী গন্ধ আসছে কেন? হাতের আঙুলে নাক চেপে ধরলেন জামাই। আরও কয়েক কদম এগোতেই জামাইয়ের চোখ-জোড়া প্রায় কপালে ওঠে এলো- একি! ওদের পা জোড়া যে উল্টা। নিশ্চয়ই ভূত।জামাই থমকে দাঁড়ালেন। সারা শরীরের লোমকূপগুলো সজাগ হয়ে ওঠল। ভয়ে বুকটা ধুকপুক করতে লাগলো। ভূত দম্পতি কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে ফিরে তাকালো। তারপর মদন ভূত বলল- কীঁ ব্যাঁপার জাঁমাই আঁসছেন নাঁ কেঁন?জামাই কোন কথা বলতে পারছেন না। ভাবতে লাগলেন পেছন ফিরে দৌঁড় দিবেন কিনা। কিন্তু ভয় পাওয়া সত্ত্বেও মনটাকে শক্ত করলেন।ভূত দম্পতি হাঁটতে হাঁটতে বটগাছের ওখানে গিয়ে থামল। এতক্ষণ খেয়াল করেননি। এখন চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দুটো দাঁত মুখ থেকে চার আঙুল বেরিয়ে আছে।জামাইকে কয়েকবার ডাকল। জামাই কোন সাড়া-শব্দ করলেন না।মদন ভূত এবার জোরে ডাক দিলো- কীঁ হঁলো জাঁমাই, আঁসছেন নাঁ কেঁন? জামাই ভয়েতে রীতিমতো কাঁপতে লাগলেন। স্পষ্টই বুঝতে পারছেন পায়ে হাঁটার মতো কোন শক্তি নেই। গায়ের লোমসব খাড়া হয়ে আছে। সে ঘেমে-নেয়ে একাকার। কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন।কোন উত্তর না পেয়ে মদন ভূত বলল- ঠিঁক আঁছে, আঁপনি সঁকালে এঁসে পাঁতিল নিঁয়ে যাঁবেন। পাঁতিলের ভেঁতর টাঁকা রেঁখে দেঁব।– এই বলে এক কদমে লম্বা পা ফেলে ভূত দম্পতি গাছের মগডালে উঠে গেল।এই দৃশ্য দেখে জামাই নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না। ধপাস করে চাতালের মাঝে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। যখন চোখ মেলে তাকালেন তখন চোখ জোড়া গিয়ে সবে উদীয়মান সূর্যে আটকে গেল। পাশেই খালি পাতিলটা পড়ে আছে। শরীরটা টেনে খুব কষ্টে উঠে বসলেন। দেখলেন কথামত পাতিলের ভেতর টাকা রাখা আছে। গুনে দেখলেন সব ঠিকঠাক। আশ্চর্য হয়ে মনে মনে ভাবলেন- ভূতগুলো মন্দ ভূত নয়। ***
0 Comments