অভয়

হঠাৎ করে লাইট জ্বলে উঠলো।লাইটের আলো এসে চোখে পড়া মাত্র ঘুম ভেঙে গেল।বিরক্তি নিয়ে চোখ না খুলেই বললাম,— কে?একটি ভরাট, মধুর কণ্ঠস্বর ভেসে এল,— আমি।বিছানায় হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠে বসলাম।ঘরে আমার ছাড়া আর কেউ থাকার কথা নয়।অন্ধকারের ভিতর থেকে যেন আলো ভেদ করে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।চোখ ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠতেই দেখি — এক মেয়ে।এমন সুন্দর মেয়ে আমি জীবনে দেখি নাই।তার মুখে এমন এক হাসি, যেন চাঁদের আলোয় গলে যাওয়া মোমবাতি।কিন্তু তার হাসিতে শব্দ নেই, ঠোঁট শুধু নড়ে যাচ্ছে নিঃশব্দে।ভয় মিশ্রিত বিস্ময়ে চেয়ে রইলাম।সে ধীরে ধীরে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।চোখে তার এক অদ্ভুত গভীর দৃষ্টি।আমি বলতে চাইলাম, “কে আপনি?”, কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হলো না।সে যেন আমার ভয় বুঝতে পেরে মৃদু স্বরে বলল,— ভয় পাবেন না, আমি আপনার ক্ষতি করব না।আজ থেকে আমরা বন্ধু।আর বন্ধু কখনো বন্ধুর ক্ষতি করে না।বলেই হঠাৎ সে হেসে উঠল।এবার তার হাসিতে শব্দ হলো—কিন্তু সেটা মানুষের হাসি নয়,সে যেন হাজারটা মরা ঘুঘুর একসাথে কান্নার মতো শোনাল।রুমের বাতাস কেঁপে উঠল।টিউবলাইট টিমটিম করে নিভে গেল আবার জ্বলে উঠল।আমি প্রাণপণে উঠে দরজার দিকে যেতে চাইলাম—কিন্তু হাত-পা অবশ হয়ে গেছে, নড়াতে পারছি না।সে কাছে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।তার হাতের ছোঁয়ায় শরীরের সমস্ত রক্ত যেন জমে গেল।একটা ঠান্ডা বরফের স্রোত আমার মেরুদণ্ড বেয়ে নেমে এলো।— ভয় পাবেন না, আজ আমি শুধু এসেছি জানাতে,আমার একটা উপকার আপনার কাছ থেকে চাই...তবে আজ নয়।আজ আমার সময় শেষ।বলতে বলতে সে দরজার দিকে হাঁটতে শুরু করল।তার পদক্ষেপে কোনো শব্দ নেই।তবু মনে হচ্ছে যেন মাটির নিচে কাঁপন ছড়িয়ে পড়ছে।আমি চুপচাপ তাকিয়ে রইলাম।অদ্ভুত এক আকর্ষণ কাজ করছিল মনের মধ্যে।চাইছিলাম, সে যদি আরেকবার ফিরে তাকাত!ঠিক তখনই সে থেমে গেল।ধীরে ধীরে ফিরে আমার দিকে তাকাল,ঠোঁটে সেই পাগল করা হাসি।— যাবার আগে একটা কথা বলি,আমি কিন্তু মানুষ নই।বলেই দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেল।কিছুক্ষণ পর শরীরের অবশ ভাব কেটে গেল।আমি বিছানা থেকে উঠে দরজার দিকে গেলাম—দরজাটা তো বন্ধই ছিল!হঠাৎ বুকের ভেতর কেমন একটা ভারি চাপ অনুভব করলাম।বালিশের পাশে থাকা মোবাইলটা তুলে নিলাম,বাড়ির মালিককে ফোন দিলাম।“হ্যালো ভাই, ঘরে একটা—”এর বেশি বলার আগেই ফোনের ওপাশ থেকে সেই একই মধুর কণ্ঠস্বর ভেসে এল,— বলেছি না, কাউকে বলবেন না!তারপর লাইন কেটে গেল।আমি কাঁপতে কাঁপতে মোবাইলটা নামালাম।দেখি স্ক্রিনে “কল হিস্ট্রি”—শেষ কলটা এসেছে রাত ২টা ০৭ মিনিটে।নাম লেখা — “আমি”।আমি তো কখনো এমন নাম সেভ করিনি!এরপর থেকে আমি ঘুমাতে পারি না।প্রতিদিন ঠিক ২টা ০৭ মিনিটে আমার ফোনে সেই নম্বর থেকে কল আসে।উত্তর দিলে শুধু নিঃশব্দে শোনা যায়—একটা মেয়ের হাসি...আর জানালার বাইরের বাতাসে ভেসে আসে কণ্ঠ,“আমাদের বন্ধুত্ব শেষ হয়নি এখনো…”