বদ বন্ধু

কালু আমার ছোটবেলার বন্ধু। একসাথে স্কুলে গিয়েছি, একসাথে খেয়েছি, খেলেছি, আবার কেলেঙ্কারিও কম করিনি। কিন্তু কালু ছিল এক আজব চরিত্র। বন্ধু হলেও সে আমার পেছনে লেগেই থাকত, যেন আমায় বকাঝকার আয়োজন করাই তার একমাত্র নেশা।একদিন তো দেখি, স্কুলে যাওয়ার পথে হেডস্যার আমায় থামিয়ে বললেন, “তোর বালিশের নিচে সিগারেট কেন?” আমি থ! আমি তো ছুঁয়েও দেখিনি সিগারেট, আর বালিশের নিচে কে রাখল? একটু পরে বুঝলাম, কালুর কীর্তি।আবার একদিন হাবলুর খাতা, কাবিলের কলম, রতনের জ্যামিতি বক্স সব আমার ব্যাগে! পেছনে দাঁড়িয়ে কালু ফিকফিক করে হাসে, আর আমি স্যারদের ধমকে দিশেহারা!এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে আমাদের বন্ধুত্বের সেই মজার দিনগুলো শেষ হয়। হঠাৎ করেই কালু প্রচণ্ড জ্বরে মারা গেল। গ্রামে হইচই পড়ে গেল। আমি ভিতরে ভিতরে কেমন যেন ফাঁকা হয়ে গেলাম—ওর শত্রুতা ছিল, তবে তারচেয়েও গভীর ছিল এক অদ্ভুত বন্ধুত্ব।তারপর কয়েক বছর কেটে গেছে। কিন্তু কিছুদিন ধরে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে শুরু করল।প্রথমে আমার প্রিয় সাদা শার্টটা হারিয়ে গেল। ভাবলাম কোথাও রেখে ভুলে গেছি। পরদিন দেখি ঘড়িটা উধাও। তার পরের দিন প্যান্ট, তারপর জুতা! আমি মার সাথে বেজায় রেগে গেলাম—\"তুমি কি সবকিছু সরিয়ে ফেলো নাকি?\" মা কেবল মাথা নাড়লেন—\"আমরা তো কিছুই নেইনি, খুঁজে দেখো।\"চুরি হলে দরজা-জানালা ভাঙা থাকবে—তা তো নয়। কেউ ঢুকেছে তাও নয়। একটা ভয় আর অস্বস্তি আমাকে ঘিরে ধরল।একদিন সন্ধ্যায় আমি আমাদের বাড়ির পাশের বাঁশবাগান দিয়ে হাঁটছি। এমন সময় হঠাৎ দেখি, দূরে একটা ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখি—সে পরেছে আমার সাদা শার্ট, আমার নীল প্যান্ট, আমার ঘড়ি আর পায়ে আমার জুতা!আমি রাগে গর্জে উঠলাম——\"কেরে তুই? আমার জামা-কাপড় চুরি করে পড়িস কেন রে?\"সে ধীরে ধীরে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। চাঁদের আলোয় তার মুখটা স্পষ্ট হল—কালু!সে ফিকফিক করে হাসে, সেই পুরনো হাসি। বলে,—\"কি রে রাগ করিস কেন? তোর জামা পড়তে পারি না? তুই তো আমার বন্ধু!\"আমার গা কাঁটা দিয়ে উঠল। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,—\"তুই তো... তুই তো মরেছিস!\"কালু এবার হালকা হেসে বলল,—\"হ, মরছি। কিন্তু বদ স্বভাব তো আর মরেনি। এখনো তোকে বোকা বানাতে ভালোই লাগে!\"সে বলে হাসতে হাসতে বাঁশঝাড়ের মধ্যে মিলিয়ে গেল।সেই রাতের পর থেকে আর কিছু হারাইনি। তবে মাঝেমাঝে, আয়নায় তাকিয়ে দেখি, আমার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে হাসছে—পরনে আমার জামা-কাপড়। আর আমি কেবল মুখ নিচু করে বলি,\"কালু, প্লিজ, এবার ছাড়…!\"