পেত্নীর ঠাট্টা

হাবলু প্রেমে ছ্যাঁকা খাইছে।ছ্যাঁকার কষ্ট হাবলুর যত না বুকের ভেতর, তার চেয়ে বেশি বাইরেই। কারণ, গ্রামের সবাই এখন তাকে দেখে ফিসফিস করে—“এই যে হাবলু... প্রেমে পড়ে মাথা গেছে!”তাজপুর গ্রামের এই হাবলু দেখতে মোটামুটি, তবে বুদ্ধিতে গড়পড়তা পিঁপড়ারও নিচে। যারে বলে হাবলেটিক!তিন মাস ঘুরাঘুরি, হাঁসফাঁস, প্রেমিক সাজা—সব মিলিয়ে রূপা নামের মেয়েটা যখন বিয়ের কার্ড হাতে দিয়ে বলে,“ভাইয়ের মতো ভালবাসতাম তোকে,”তখন হাবলুর বুকে বাজ পড়ে !রাতে হাবলুর মনোস্থির—সে আর বাঁচবে না।মরবে!তাও আবার এমন গ্ল্যামার মরন, যেটা মনে রাখবে সবাই—“হাবলু প্রেমের জন্য মরছে, আহারে!”তাই বেছে নিল সেই বাড়ির পাশে বড় তেতুল গাছটা।সে গাছ নাকি অলরেডি ‘হান্টেড’, কয়েক দিন আগেও নাকি একটা সুন্দরী মেয়ে ওখানেই ঝুলেছিলো।রাত তখন একটার কাছাকাছি। কুয়াশা কাঁথা পেতে চারপাশ মুড়ে ফেলছে, চাঁদের আলো ম্লান।গলায় লুঙ্গি কেটে বানানো দড়ি হাতে,কান্না আর মুখে বিদায় বাণী—“রূপা, তুই একটা... তুই একটা— থাক, তোর মঙ্গল হোক! আমি চললাম। হয়তো আগের জন্মে তুই আমার ছিলি, এই জন্মে থাকলি না। দেখা হবে পরের জন্মে।”এই বলেই লাফ দিতে যাবে হাবলু, এমন সময় পাশের ডাল থেকে মেয়েলি এক গলা—“কে রে তুই কাপুষ! মরতে আসছিস নাকি নাটক করতে?”হাবলু থমকে দাঁড়ায়। চোখ কপালে।“কে কইলো?”আরেকটা গলা এবার একটু হেঁচকি ধরা কণ্ঠে—“প্রেমে ছ্যাঁকা খাইছিস তো? বাহ বাহ! তুইই তো আমাদের রাতের মজার খোরাক হবি রে হাবলু !”এবার একসাথে তিনটা গলা হেসে ওঠে,“হাহাহাহা... সাবধানে ঝুলিস! আগের জন তো ঝাকি খেয়ে নিচে পইড়া কোমড় ভেঙ্গে ছিল!”হাবলু ফাস দেওয়ার কথা ভুলে গেছে, এখন সে গাছ থেকে নামার রাস্তা খুঁজে!অন্ধকারে আবছা তিনটা ছায়া দেখা যায়। হাঁটু-লম্বা চুল, গাল চ্যাপ্টা, চোখে হালকা সবুজ ঝিলিক, আর মুখভর্তি দাঁত বের করা হাঁসি।“আমরা তেতুল পেত্নী। রোমান্টিক পেত্নী। প্রেমে ছ্যাঁকা খাওয়া যারা, তাদের আমরা স্পেশালি পছন্দ করি।”একটা বলে।আরেকটা যোগ করে—“তুই মরলি, ঠিক আছে। কিন্তু তার আগে তাস খেলবি তো? অনেকদিন হইল তাসের সঙ্গী পাই না।”তৃতীয়টা বলে—“এই যে! দড়ি বাদ দে, প্রেমপত্র দে তো দেখি—ছন্দে আছে কিনা!”হাবলুর মুখ শুকনা পাটাকই, কণ্ঠে কাঁপুনি।“আমি বুঝি নাই... মানে, দুঃখিত, ভুল হইছে। আমি আসলে একটু হাওয়া খাইতে আইছিলাম।”তিন পেত্নী একসাথে বলে ওঠে—“তোর মতন কার্টুনরে দেখলেই মন ভালো হইয়া যায়! হাবলু, তুই মরিস না রে ভাই। বাঁচ, আর কষ্ট পাইলেই আবার আসিস—আমরা আছি তো!”হাবলু দড়ি গুটিয়ে হাতে প্যাঁচিয়ে দৌড় দেয় বাড়ির দিকে।পরদিন সকাল হইতেই সে চায়ের দোকানে ঘোষণা দেয়—“আমি প্রেম ছাড়ছি, ব্যবসা ধরছি। এখন থেইকা আমি কেবল পেঁয়াজ-রসুনের হাটে প্রেম খুঁজব!”গ্রামের লোক হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায়।আর তেতুল গাছের তিন পেত্নী গলায় হাত দিয়ে বলে—“আহারে হাবলু! সে ছিল আমাদের একমাত্র লাইভ কমেডি!”