অচেনা অতিথি

রূপা নতুন শহরে একটা চাকরি পেয়েছে। কোম্পানি থেকে থাকার জন্য একটা ভাড়া ফ্ল্যাট দিয়েছে—ছিমছাম, তিনতলা বাড়ির এক কোনায় নিরিবিলি ছোট্ট একটা রুম। আশেপাশে কেউ তেমন নেই, মালিক বলে দিয়েছেন, একদম শান্ত পরিবেশ।প্রথম দুদিন ভালোই কাটল। তৃতীয় দিন ঘুম থেকে উঠে রূপা হঠাৎই কেঁপে উঠল। চোখ খুলেই সে দেখল—তার শরীরে এক টুকরো সুতোও নেই। সে বিছানায়, একা। জানালা-দরজা সব বন্ধ, বাইরের তালাও ঠিকঠাক লাগানো।আরও অবাক করার ব্যাপার, ঘরের কোথাও তার জামাকাপড় নেই! যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। সে বোকার মতো বসে রইল। মাথা ঘুরতে লাগল—স্বপ্ন দেখছে? বাস্তব?ঠিক তখনই হঠাৎ ঘরটা নিমিষেই রাতের মত অন্ধকার হয়ে গেল। চারপাশে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। একটা ঠাণ্ডা হাওয়া শরীর ছুঁয়ে চলে গেল।মাত্র কয়েক সেকেন্ড পর আবার আলো। সব আগের মতো। আর আশ্চর্য—তার শরীরে এখন সব কাপড় ঠিকঠাক! যেন কিছুই হয়নি।রূপা সেটা কাউকে বলতে পারল না। ভাবল—হয়ত বেশি টেনশন নিচ্ছে।কিন্তু পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই সে আরেকটি রহস্যময় দৃশ্যের মুখোমুখি হল। খাটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে একজন সুদর্শন যুবক। ছিপছিপে গড়ন, পরনে ধূসর শার্ট, চোখ দুটো বন্ধ—মনে হচ্ছে ঘুমের মধ্যেই দাঁড়িয়ে আছে।রূপা চিৎকার করতে যাবে, তখনি আবার সেই অন্ধকার।দশ সেকেন্ডের মাথায় আলো ফিরে এলো। রুম একেবারে ফাঁকা।এভাবে আরও কিছুদিন চলতে থাকল। কখনও ঘরের আয়নায় অচেনা প্রতিচ্ছবি, কখনও গলার কাছে হিমেল নিঃশ্বাস, কখনও বা রান্নাঘর থেকে বেহালার সুর।একদিন রাতে রূপা ঘুমাতে যাওয়ার আগে দরজার নিচ দিয়ে একটা ছোট্ট খাম দেখতে পেল। খুলে দেখল তাতে শুধু একটা লাইন লেখা:“তুমি এসেছো আমার জায়গায়, তাই আমিই ফিরে এসেছি।”পরদিন রূপা বাড়ির মালিককে জিজ্ঞেস করল এই ঘর নিয়ে কিছু অদ্ভুত ইতিহাস আছে কিনা। মালিক প্রথমে চুপ করে থাকলেন, তারপর বললেন—“এই ঘরে আগে একটা ছেলে থাকত, শান্ত স্বভাবের। হঠাৎ একদিন সে আত্মহত্যা করে। কেউ বলে প্রেমে ধোঁকা খেয়েছিল, কেউ বলে মানসিক সমস্যা ছিল। ওর মৃতদেহ খাটের পাশেই পাওয়া যায়, একদম যেখানটায় তুমি বলছিলে যুবকটাকে দেখেছো।”রূপার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল।পরদিনই সে ফ্ল্যাট ছেড়ে দিল।তবে যাওয়ার সময় দরজায় আরেকটি চিরকুট রেখে গেল—\"তোমার জায়গা আমি নিয়ে ফেলেছিলাম, এবার ফিরিয়ে দিলাম। শান্তিতে থেকো...\"