রহস্যময় একরাত

আদনান একজন নামকরা উকিল। ব্যস্ত শহরের জীবন পেছনে ফেলে এইবার সে এসেছেন কলেজজীবনের বন্ধু শরিফের ছেলের বিয়েতে। শরিফ এখন বড় ব্যবসায়ী, হিজলডাঙ্গা গ্রামে তার বিশাল বাড়ি, গ্রাম থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে ছোট একটি রেলস্টেশন। শরিফের কথা ছিল আদনানকে নিতে আসবে, কিন্তু হয়ত ভুলে গেছে। আদনান চিনে জায়গাটা, বহুবার এসেছে—তাই হাঁটতেই শুরু করলো।রাত প্রায় দশটা। মাইল দুই যাওয়ার পর রাস্তার পাশের এক পুরনো দীঘির পাশে এসে দাঁড়াল আদনান। চারপাশে সুনসান নিস্তব্ধতা, কেবল চাঁদের আলোয় দীঘির জল চিকচিক করছে। হঠাৎ তার চোখ গেল দীঘির ওপারে—এক বিশাল চারতলা প্রাসাদ! যেন রাজবাড়ি। আজ পর্যন্ত সে এ পথ দিয়ে বহুবার এসেছে, কিন্তু এমন বাড়ি কোনোদিন চোখে পড়েনি।চমকে উঠে আরও অবাক হল যখন দেখল, দ্বিতীয় তলার একটি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে এক রমনী ও এক ভদ্রলোক চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ঝগড়া করছে। রুমে আলোর ঝলকানি, চাঁদের আলোয় সব স্পষ্ট। ঝগড়া চরমে উঠল, হঠাৎ সেই পুরুষ লোকটি ছুরি দিয়ে মহিলার গলা কেটে ফেলল! তারপর ঠান্ডা মাথায় কাটা মাথাটি দীঘির জলে ছুঁড়ে ফেলল। \"প্ল্যাশ্!\"—একটা শব্দ হল, দীঘির জলে ঢেউ উঠল।আদনান পিছিয়ে গেল। চোখ কচলাল। আরেকবার তাকিয়ে দেখে—দীঘির ওপারে কিছুই নেই! না রাজবাড়ি, না আলো, না জানালা। শুধু দীঘি, আর নিস্তব্ধতা।ভয়ে তার বুক কাঁপতে লাগল। ঠিক তখনই কে যেন তার কাঁধে হাত রাখল। চমকে ফিরে তাকিয়ে দেখল হাসু দাঁড়িয়ে, হারিকেন হাতে। হাসু, শরিফের পুরনো কাজের লোক।—“বাবু, আপনি এখানে দাঁড়িয়েছেন কেন? আমি না আসলে ত বিপদে পড়তেন! এ দীঘি ভালো নয়।”হাসুর কথা শুনে আরও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল আদনানের শরীরে। তারা হাঁটতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে হাসুর বাড়ির সামনে এলে সে বলল, “বাবু, হারিকেনটা রেখে আসি, একটু দাঁড়ান।” এরপর সে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল।আদনান অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। হাসু আর ফিরল না। চারপাশ অন্ধকার, শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ।ঠিক তখনই এক মোটরসাইকেল এসে সামনে থামল। শরিফ নেমে এসে বলল, “সরি বন্ধু, আনতে দেরি হয়ে গেল। তুই ত দেখি হেঁটেই চলে এসেছিস। তোর একা আসা ঠিক হয়নি।”আদনান জবাব দিল, “আমি একা আসিনি, হাসু আমাকে এনেছে। হারিকেন রাখতে ঘরে গেছে।”শরিফ থমকে গেল। “কি বলিস! হাসু তো গত পরশু মারা গেছে। ওর কবর ওখানেই হয়েছে—দেখ না!”মোটরসাইকেলের হেডলাইট ঘুরিয়ে শরিফ দীঘির ধারে আলো ফেলল।আদনান তাকিয়ে দেখল—দাঁড়িয়ে ছিল যেখানে, তার ঠিক পাশেই, টাটকা একটি কবর।