রাত তখন প্রায় দুইটা।ফিরছি শহর থেকে গ্রামের দিকে, রিকশা আর পাচ্ছিলাম না। ফোনের ব্যাটারি নিঃশেষ, আর রাস্তার আলোও মাঝেমাঝে কাঁপছে যেন ক্লান্ত হয়ে গেছে।বটতলার কাছে পা রাখতে না রাখতেই হঠাৎ দেখলাম—একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে।সাদা ধুতি, ধুসর পাগড়ি, চোখজোড়া কেমন যেন ঘোলাটে।সে শান্ত গলায় বলল,— “এই যে ভাইসাব, একটু পাশে হাঁটতে পারি? অনেকদিন কারো সাথে কথা হয় না।”আমি একটু অস্বস্তি বোধ করলাম, কিন্তু রাতের একাকীত্বে একটা সঙ্গী পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বললাম,— “চলুন, কোথায় যাবেন?-এই তো একটু সামনে।পাশাপাশি হাঁটছি।লোকটা এমন গল্প শুরু করল, যেন আমায় বহু আগেই চিনে।সে বলল—“এই রাস্তায় এক সময় এক কিশোর ছেলেকে খুন করা হয়েছিল। তার গলাটা নাকি এখনো বটগাছের ডালে ঝুলে থাকে... কেউ মাঝরাতে এই রাস্তা দিয়ে গেলে, সে পাশে এসে হাঁটে... গল্প বলে।”আমি জোরে হেসে বললাম,— “তাহলে তো আজ আমি বিপদে!”লোকটা আমার দিকে তাকাল না, শুধু বলল,— “সবাই ভাবে ওসব গল্প। অথচ আমি জানি... কারণ আমি নিজেই একবার এক ভ্রমণকারীকে...”সে থেমে গেল। আমি জিজ্ঞেস করলাম,— “আপনি কী করলেন?”সে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,— “আমি তাকে গল্প বলেছিলাম। যেমন এখন তোমায় বলছি।”তার গলার স্বর হঠাৎ ঘন হয়ে এল।হাওয়া থেমে গেছে, পাতাগুলোর শব্দও নেই।আমার পা কেমন যেন ভারী হয়ে গেছে।চারপাশে শুধু কুয়াশা, অথচ ঠাণ্ডা লাগছে না— শরীর গরম হয়ে আছে, ঘামে ভিজে যাচ্ছে জামা।গল্প চলছেই—সে বলছে এক বৃদ্ধের কথা যে নাকি নিজের ছায়ার সাথে লুকোচুরি খেলত, এক নারী ভূতের কথা যে প্রতিদিন রাতে গঙ্গাজল দিয়ে রাস্তা ধোয়, আর এক লোকের কথা— যে নাকি রাত বারোটার পর মানুষের রক্ত খুঁজে বেড়ায়।হঠাৎ সে থেমে বলল,— “এই জায়গাটা চিনেছেন? এখানেই একবার... একজন মানুষ হাঁটতে হাঁটতে মারা গিয়েছিল। সবাই ভাবে হার্ট অ্যাটাক... অথচ সত্যি হলো, সে শেষ মুহূর্তে বুঝতে পেরেছিল আমি কে।”আমি থমকে গেলাম।সে আমার দিকে ফিরল।প্রথমবারের মতো তার চোখে তাকালাম।কোনো চোখই নেই।কেবল দুইটি কুয়াশা ভরা গভীর গহ্বর।সে শান্ত গলায় বলল,— “ভয় পেয়ো না ভাইসাব, আমি কারও ক্ষতি করি না। শুধু মাঝেমধ্যে গল্প বলি... আমার একাকীত্ব ঘোচাতে।”তারপর সে আস্তে করে আমার কানে ফিসফিস করে বলল,— “তুমি জানো তো, আমি কিন্তু ভূত।”এরপর?একটুও মনে নেই।হুঁশ ফিরেছিল গ্রামের মোড়ের পাশে এক দোকানের বেঞ্চিতে।লোকজন বলল, আমাকে একা একা কথা বলতে বলতে হাঁটতে দেখা গেছে, আর বটতলার কাছে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েছি।তবে সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার হলো—আমার পকেটে রাখা মোবাইলের ভেতরে ভোরবেলা একটা ভয়েস রেকর্ড পাওয়া গেল! কেউ একজন বলছে… আজকে আমার একশটা গল্প বলা শেষ হল! সেই সাথে ভুত জীবনেরও সমাপ্তি.....। আর শেষে বলছে,
রাত তখন প্রায় দুইটা।ফিরছি শহর থেকে গ্রামের দিকে, রিকশা আর পাচ্ছিলাম না। ফোনের ব্যাটারি নিঃশেষ, আর রাস্তার আলোও মাঝেমাঝে কাঁপছে যেন ক্লান্ত হয়ে গেছে।বটতলার কাছে পা রাখতে না রাখতেই হঠাৎ দেখলাম—একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে।সাদা ধুতি, ধুসর পাগড়ি, চোখজোড়া কেমন যেন ঘোলাটে।সে শান্ত গলায় বলল,— “এই যে ভাইসাব, একটু পাশে হাঁটতে পারি? অনেকদিন কারো সাথে কথা হয় না।”
0 Comments