ভুতের নাম: ওলালা

চাঁদপুরের কাছারি ঘাটের পাশে ছোট্ট এক গ্রাম—ডালিমপুর। গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে ঠিকই, কিন্তু কিছু পুরোনো বাড়ি এখনও আলো-আঁধারির রাজ্যে হারিয়ে থাকে। এমনই এক পুরোনো বাড়ি, লোকে বলে—ওখানে নাকি ভুত থাকে। তবে সে ভুত ভয়ানক নয়, বরং অদ্ভুত এক বোকা ভুত! তার নাম—ওলালা।ওলালার জন্ম হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে, এক সন্ন্যাসী যখন ভুল করে মৃত্যুর সময় তার আত্মা বাঁশবনের মাটিতে বেঁধে ফেলেন। সেখান থেকে কেটে গেছে অনেক যুগ, কিন্তু ওলালার বিদায় হয়নি।ওলালার ভিন্নতা এখানেই—সে রক্তচোষা বা মাথাকাটা নয়। বরং মানুষের বেশ ধরে সে মানুষের ফয়ফরমাস করে বেড়ায়। কে কবে বাজার যাবে, কার বাড়ির গরু হারিয়ে গেছে, কোন বুড়ো মানুষটা কাঁথা খুঁজে পাচ্ছে না—সব খোঁজখবর ওলালার নখদর্পণে।যখন কেউ জিজ্ঞেস করে, \"এই ছেলে, তুই কে রে?\"ওলালা তখন বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,— \"আমার নাম ওলালা!\"তারপর এমন একটা হেসে ওঠে, যেন সে নিজেই নিজের নাম শুনে হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে।একদিন গ্রামে এল এক নতুন স্কুল মাস্টার—মোবারক স্যার। একটু কড়া টাইপের মানুষ, ভূতের কথা শুনলেই বলেন, “ভু-তু সব গাঁজাখুরি। বিজ্ঞান মানে যুক্তি, ভূত মানেই অলীক।”কিন্তু ওলালা এতদিনে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে! মানুষের রূপ নিয়ে সে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে স্কুলে গিয়ে স্যারের টেবিল গোছায়, চক ঠিক করে, আর মাঝে মাঝে পেছন থেকে ফিসফিস করে বলে,— “স্যার, পেছনের রমজান নকল করছে…”স্যার ঘুরে তাকান, রমজান হা করে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু কে বলল? কেউ জানে না।তবে বিপত্তি বাঁধল একদিন।এক বুড়ো দাদু বাজারে গিয়ে পথ ভুলে ফেললেন। গ্রামের সবাই খুঁজে পাচ্ছে না। ঠিক সেই সময় ওলালা তার অদৃশ্য রূপে দাদুকে খুঁজে এনে বলল,— “নিয়ে যান, দাদুর হাঁটুর ব্যথা আছে, বেশি হাঁটবে না।”লোকজন জিজ্ঞেস করল, “তুই কে রে?”ওলালা আবার বুক ফুলিয়ে বলে,— “আমার নাম ওলালা!”মোবারক স্যার তখন বললেন, “এই ছেলেটাকে তো আমি কখনো রেজিস্টারে দেখিনি…”তখন এক বৃদ্ধ বলল, “আপনি কি জানেন, এই ছেলেটাই সেই ওলালা! ভুত ওলালা!”স্যার হেসে বললেন, “ভুত আবার মানুষকে সাহায্য করে নাকি?”তখন ওলালা একবার হাঁচি দিয়ে হাওয়া হয়ে গেল।এরপর থেকে মোবারক স্যার নিজের চেয়ার নিজেই গুছিয়ে রাখেন। চকটাও পকেটে নিয়ে বাড়ি ফেরেন।আর গ্রামে নতুন কোনো অতিথি এলে, তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, “আপনার নাম কী?”সে একটু থেমে বলে,— “আমার নাম তো মোবারক। কিন্তু আপনার পাশে যে দাঁড়িয়ে, সে মনে হয় বলবে—আমার নাম ওলালা!”