
মেঘ বাড়িপূর্ববাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম—ডুমুরিয়া। এই গ্রামে একটি পুরনো, পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে, যেটিকে সকলে ডাকে \"মেঘ বাড়ি\" নামে। কেন এই নাম? শোনা যায়, বর্ষার দিনে আকাশে মেঘ করলে, এই বাড়ির চারপাশে কুয়াশার মতো এক ধোঁয়া ছায়া জমে ওঠে। এবং সেই সময়েই শুরু হয় অদ্ভুত সব কান্ড।লোকমুখে প্রচলিত, প্রায় একশো বছর আগে, এই বাড়িতে বাস করতেন জমিদার হরপ্রসাদ রায় ও তার কন্যা মেঘলা। মেয়ে ছিল অপূর্ব সুন্দরী, তবে তার চোখে ছিল একধরনের অদ্ভুত বিষণ্নতা। মেঘলা মাঝে মাঝে গ্রামের গভীর পুকুরে গিয়ে নিজের সঙ্গে কথা বলত। অনেকে বলত, সে নাকি কারও ডাক শোনে—একটা নিশির ডাক!এক বর্ষার রাতে, মেঘলা হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়। পরদিন তার মৃতদেহ পাওয়া যায় বাড়ির পিছনের বনজ ঝোপের পাশে, চোখদু’টো খোলা, ঠোঁটে হালকা হাসি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ছিল—তার শরীরে এক ফোঁটা পানিও ছিল না, অথচ তখনও ঝড়ের রাত চলছিল।এরপর থেকেই, মেঘ বাড়ি হয়ে ওঠে এক ভয়ের নাম। গ্রামের বয়স্করা বলেন, বর্ষার দিনে মেঘ জমলে বাড়ির ছাদে কেউ একজন হেঁটে বেড়ায়, জানালার পর্দা সরে যায়, আর কেউ কেউ মেঘলার গলার মতো এক কোমল গানের আওয়াজও শুনতে পায়।একবার শহর থেকে কয়েকজন গবেষক এসেছিলেন ভূতুড়ে গল্প যাচাই করতে। তারা এক রাতে মেঘ বাড়িতে থেকেছিলেন। পরদিন সকালে একজনকে পাওয়া যায় বাড়ির বারান্দায়, পাথরের মূর্তির মতো নিথর—চোখ ফাঁকা, আর ঠোঁটে মেঘলার সেই একই রহস্যময় হাসি।গ্রামের মানুষ আজও বলে, \"মেঘলা মরেনি, সে কেবল মেঘ হয়ে ফিরে আসে...\"
0 Comments