তাজপুর গ্রামের শেষপ্রান্তে একটা পুরোনো আমবাগান। বৃষ্টি, ঝড় বা রোদ—সব ঋতুতেই ওই বাগান অদ্ভুত নিরব থাকে। গ্রামের মানুষরা সন্ধ্যার পর কেউই সেখানে পা রাখে না। কারণ, সেখানে নাকি থাকে এক অদ্ভুত প্রজাতির ভুত—\"কেবলা ভুত\"।এই ভুত মানুষ খায় না, রক্ত চোষে না, তবে যাকে দেখে তাকে এমন ভয় পাইয়ে দেয় যে লোকটা পরে নিজের নামটাও ভুলে যায়। কেবলা ভুতের আরেকটা সমস্যা, সে খুবই বোকা। মানুষের দেখা পেলে নিজেই ভয় পেয়ে যায় আর উল্টাপাল্টা কান্ড করে বসে।এক রাতে গ্রামের নতুন স্কুলশিক্ষক মতিন স্যার কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে শহর থেকে ফিরছিলেন। সোজা রাস্তা ধরে না গিয়ে তিনি shortcut ধরলেন—আমবাগানের ভেতর দিয়ে।চাঁদের আলোয় বাগানটা শান্ত লাগছিল, কিন্তু কিছুদূর যেতেই গাছের ফাঁক দিয়ে একটা সাদা ঝাপসা ছায়া ঝট করে নড়ে উঠল।—\"কে ওখানে?\" স্যার ডাক দিলেন।কোনো উত্তর নেই।হঠাৎই একটা ঝোপ নড়ে উঠল, আর সেখান থেকে একটা ফর্সা, পাতলা, চুল এলোমেলো ছায়ামূর্তি বের হয়ে এল। দুই চোখ কোটরের মতো, পা নেই, কিন্তু ভেসে ভেসে চলছে। কেবলা ভুত!স্যার হকচকিয়ে গেলেন। কিন্তু চমক তখনও বাকি।ভুতটা হঠাৎ চিৎকার দিয়ে বলে উঠল,—\"ও মাগো! মানুষ!!\"আর নিজেই হাওয়ার মতো করে পালাতে গেল—কিন্তু একটা আমগাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে কাৎ!স্যার তো এবার রীতিমত অপ্রস্তুত।—\"ভুতই যদি ভয় পায়, তাহলে আমার ভয় পাওয়ার কি দরকার?\"তিনি গিয়ে দেখে ভুতটা নিচে পড়ে চিত, বলছে,—\"ভাই রে, আমাকে মারিস না, আমি কেবলা ভুত। মানুষের দেখা পেলেই আমার গলা শুকিয়ে যায়!\"মতিন স্যার বিস্মিত! কৌতূহলে প্রশ্ন করলেন,—\"তুই তাহলে ভয় দেখাস কেন?\"—\"ভয় দেখাই না, আমি তো শুধু আম খেতে বের হই, মানুষ দেখলেই গলার স্বর বের হয় না—তখন পিশ পিশ করে হাওয়া হইয়া যাই।\"পরদিন তাজপুরে হুলুস্থুল।মতিন স্যার খবর ছড়ালেন—কেবলা ভুত নাকি ভয় পায় মানুষকে!লোকজন বাগানে ঢুকে পড়ল। কেউ কাঁঠাল নিয়ে, কেউ বাঁশ হাতে, কেউ আবার সেলফি তুলতে!কিন্তু কেবলা ভুত তো ভীরু, গাছে লুকায়, ঝোপে ঢুকে পড়ে, একবার তো নিজের কাপড় রেখে পালিয়ে গিয়েছিল!গ্রামের ছেলেরা মিলে এক রাতে কেবলা ভুত ধরার ফাঁদ পাতল। চিপস, ঠাণ্ডা পানি আর এক বোতল মুরগির মাংস রাখল ঝোপে। রাত ১২টার পর কেবলা এল, মুখে বলল,—\"মানুষ না থাকলে তো একটু খাই!\"ঠিক তখনই ঝোপ থেকে ছেলেরা বেরিয়ে এল,—\"ধরছি ধরছি কেবলা!\"কেবলা ভুত চিৎকার দিয়ে বলল,—\"বাঁচাও! আমি ভুত না, আমি ভুল করে মরে গেছি!\"এই বলে সে হাওয়ার মতো মিলিয়ে গেল, আর তারপর থেকে সে আমবাগানে আর কেউ তাকে দেখেনি।কেবলা ভুত আজও মানুষের ভয়ে জঙ্গলে পালিয়ে বেড়ায়।যে ভুত নিজেই ভয় পায়, সে আবার কেমন ভুত?তবুও বলছি,সন্ধ্যার পর তাজপুরের আমবাগানে কেউ যেয়ো না...কারণ ভিতুরাও একদিন সাহসী হয়ে উঠে।তাই কেবলা ভুতও হঠাৎ সাহসী হয়ে উঠতে পারে!
তাজপুর গ্রামের শেষপ্রান্তে একটা পুরোনো আমবাগান। বৃষ্টি, ঝড় বা রোদ—সব ঋতুতেই ওই বাগান অদ্ভুত নিরব থাকে। গ্রামের মানুষরা সন্ধ্যার পর কেউই সেখানে পা রাখে না। কারণ, সেখানে নাকি থাকে এক অদ্ভুত প্রজাতির ভুত—\"কেবলা ভুত\"।এই ভুত মানুষ খায় না, রক্ত চোষে না, তবে যাকে দেখে তাকে এমন ভয় পাইয়ে দেয় যে লোকটা পরে নিজের নামটাও ভুলে যায়। কেবলা ভুতের আরেকটা সমস্যা, সে খুবই বোকা। মানুষের দেখা পেলে নিজেই ভয় পেয়ে যায় আর উল্টাপাল্টা কান্ড করে বসে।
0 Comments