প্রিয় মা জননী, বাদামী খামে মোড়ানো চিঠি তুমি ইতিপূর্বে পাও নি, তা আমার জানা।মহীয়সী নারীদের গল্পকথা শুনে ছোট থেকে বড় হওয়া।তুমি সবসময়ই বলতে বেগম রোকেয়ার মতো হও কিংবা মাদার তেরেসা।কখনো কেন বলো নি,তোমার মতো হতে?কারণ টা আমি বলি-তুমি নিজেই জানো না,কতটা মহীয়সী তুমি।একটা ভাঙা ঘরকে প্রাণ দিয়ে, তুমি যে প্রাসাদ বানিয়ে তুলেছো সেটা তোমার অজানা।সমাজ বা পরিবার কখনোই তোমায় বুঝতে দেয় নি যে তুমিই প্রাসাদের কারিগরি।ছোট ছোট প্রাণগুলোকে আকঁড়ে ধরে যে তুমি সমস্ত অপূর্নতা ভুলে গেছো, সমাজ কদর করে নি সেসবের।কাঁপা কাঁপা হাতে,জ্বর নিয়ে যে রান্না চড়াও, সমাজ বলে দিয়েছে এটা তোমার কর্তব্য।তোমার দূর্বল কাঁধে যখন মাথা রাখি,আপনা-আপনি তুমি দশভুজা হয়ে উঠো।সমাজ কখনো বুঝতে দেয় নি,তোমারও কারো কাঁধের প্রয়োজন।এই যে, তুমি মুখ লুকিয়ে কাঁদো,সবাই ধরেই নেয় মায়েদের এভাবেই কাঁদতে হয়।তুমি কেন মেনে নিলে বলো তো-মায়েদেরই ত্যাগের প্রতিমূর্তি হওয়াটা?ত্যাগ করাটা শুধু তোমারই কাজ ভেবে,বেরঙের জীবন টেনে নিচ্ছো। তুমি কি জানো,লড়াই টা যে রক্তে মেশা তোমার?জানো কি,তুমি একটা সংসারের মধ্যমণি?তোমার কোনো ধারণা আছে কি,কতটা মহীয়সী তুমি?আমার এখন আর কোনো মহীয়সী নারীর প্রয়োজন হয় না।তোমার মধ্যেই সব খুঁজে পেয়েছি। ত্যাগ,মনোবল, ভালোবাসা, আর লড়াই।তুমিই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ নারী,প্রয়োজন নেই বেগম রোকেয়ার মতো হওয়ার । তোমার মতো হতেই যে আমার আমরণ চেষ্টা করতে হবে। কত জ্বালা তোমার!আদর-যত্নে বড় করার পরেও শান্তি নেই।প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয় প্রতিনিয়ত, প্রশ্ন তোলা হয় তোমার ত্যাগ নিয়ে। তোমার মমত্ব নিয়েও সংশয় তৈরি হয়,তোমারই অংশদের মধ্যে।আমরা কখনো বুঝিই না,নাড়ীছেঁড়া ধন তোমার! কি করে কম-বেশি মমত্বের প্রশ্ন আসতে পারে?কি অদ্ভুত সমাজ! সারাজীবন তোমাকেই ত্যাগ করতে হবে, এই নিয়ম চালু করে দিয়েছে।জুবুথুবু শরীর আর ক্লান্ত মন নিয়েও তোমায় শুনতে হয়,\"কি করেছো\" আমাদের জন্য? প্রতিনিয়ত তুলনার সম্মুখীন হতে হয়।কেউ কখনো বুঝতে চায় না,তোমার ভিতরের মমত্বের কথা,না দেখানো হাহাকার আর কষ্টের কথা। রঙিন স্বপ্ন চোখে নিয়ে জীবন পারি দেওয়ার স্বপ্ন তোমার স্বপ্নই রয়ে যায়। নিজের অপূর্নতা পূরণের জন্য তুমি বেছে নাও,তোমার সন্তানদের। এত নিখুঁত ভাবে স্রষ্টা তোমায় তৈরি করলো কি করে!তুমি তোমার মতো করে শ্রেষ্ঠ। বরং,আমরা আমাদের মতো করে নিকৃষ্ঠ।তুমি করে যাও,আমরা নিয়ে যায়।তুমি সহ্য করো,আমরা যন্ত্রণা দিয়ে যায়। তোমার অভিযোগ জানানোর আগেই,আমরা অভিযোগ নিয়ে হাজির হই। কখনো শোনার চেষ্টা করি নি,তোমার কথা,তোমার চাওয়া,তোমার ইচ্ছা! \"মা দিবস\" এলেই আমাদের মতো সন্তানদের যত আবেগ উথলে পরে। একেকজন কবি হয়ে, তোমাকে নিয়ে লিখতে বসে।শুধু ওই লিখার সময়টুকুনই তোমার জন্য বরাদ্দ রাখি আমরা। কতটা অধম তাই না বলো?তারপরেও,তুমি আমাদের উত্তম ভেবে বুকে টেনে নাও।তোমার শিক্ষা, যত্ন,শাসন সবকিছুর জন্য চিরকৃতজ্ঞ। \"মা দিবসে \" একটাই চাওয়া মায়ের \'সন্তান\' হয়ে উঠার আগে, মায়ের \'অবলম্বন\' হয়ে উঠতে চাই।তোমায় সম্মান করি না বলেই হয়তো, সমাজে মায়ের স্বরূপ নারী সমাজ এতটা অবহেলিত।ভালো থেকো বলবো না। এবার সময় বলার,ভালো রাখবো,আগলে রাখবো, তুমি শুধু আমাদের আকঁড়ে ধরো।স্রষ্টা তোমায় শকুন\'সমান আয়ু দিন। ইতি,মহীয়সী নারীর সৌভাগ্যেবতী কন্যা
0 Comments