গল্পসাদ্দাদের বেহেশত বানানোর কাহিনীআফছানা খানম অথৈসাদ্দাদ রাজা হওয়ার পর তার কাছে হুদ (আ:) এসে বেহেশতের কথা বললেন।তখন সাদ্দাদ বলল, \" তোমার প্রতিপালকের বেহেশতের কোন দরকার নেই।এরকম একটি বেহেশত আমি নিজেই বানিয়ে নেব।\"সাদ্দাদ তার ভাগ্নে জোহাক বাগীর কাছে দ্রুত পাঠাল।জোহাক তখন পাশের এক সম্রাজ্যের রাজা।দ্রুত মারফত সাদ্দাদ বলল, \"ভাগ্নে তোমার রাজ্যে যত সোনারুপা আর মুল্যবান জহরত আছে সব সংগ্রহ করে আমার দরবারে পাঠিয়ে দেবে।যত মেশক আম্বর জাফরানি আছে সেগুলোও।আশ পাশের রাজাদের ও সাদ্দাদ একই নির্দেশ দিলেন।আর নিজের সকল প্রজাদের ক্ষেত্রে ও একই নির্দেশ ছিল।কারো কাছে সোনা রুপা জহরত পাওয়া গেলে নিয়ে আসা হবে।নিয়মিত তল্লাশি চলত।একে একে সোনারুপা জহরতে ভরে যেতে লাগল সাদ্দাদের দরবার।বেহেশতের স্থান বাছাইয়ের জন্য অনেক লোক নিয়োগ করা হলো।অবশেষে ইয়ামেনের একটি স্থানকে পছন্দ করা হলো।আয়তন ছিল একশ চল্লিশ ক্রোশ।দেশ বিদেশ থেকে আশা তিন হাজার সুদক্ষ কারিগর কাজ শুরু করল।একে একে সকল প্রজার কাছ থেকে সোনারুপা ছিনিয়ে আনা হলো।এক দরিদ্র পিতার নাবালিকা মেয়ের চার আনার একটি সোনার হার ছিল।এক তালাশকারীর চোখে তা পড়ে যায়।সে ছিনিয়ে নেয় সেটি।দুঃখী মেয়েটি ধুলায় গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে থাকে।সে দৃশ্য দেখে বৃদ্ধা দুহাত তুলে ফরিয়াদ করে, \"হে আমার প্রতিপালক তুমি সবই আবগত।দু:খীনির প্রতি জালিম সাদ্দাদের অত্যাচারের দৃশ্য তোমার অদেখা নয়।তুমি সাদ্দাদকে ধ্বংস করে তোমার দূর্বল বান্দাকে রক্ষা কর।\"ওদিকে বেহেশত বানানোর কাজ চলছে পুরোদমে।চল্লিশগজ নিচ থেকে মর্মর পাথর দিয়ে বেহেশতের প্রাসাদের ভিত্তি স্থাপন করা হলো।আর তার উপর সোনারুপা নির্মিত ইট দিয়ে প্রাচীর বানানো হলো।বর্নিত আছে কৃত্রিম গাছ ও সাদ্দাদ বানায়।যার শাখা প্রশাখাগুলো ছিল ইয়াকুত পাথরের, সাথে মেশকের ঘ্রাণ।স্থানে স্থানে ঝর্নাধারা ছিল,তাতে ছিল দুধ মধ আর মধু।আর চেয়ার টেবিল ছিল লক্ষাধিক,সবই সোনার তৈরী।মোটকথা এলাহীকাণ্ড মনোহরী একদৃশ্য।নির্মাণ কাজ শেষ হলে বেহেশতের ফটক দিয়ে ঢুকার জন্য হাজার হাজার সেনা নিয়ে অগ্রসর হলো সাদ্দাদ।তিন হাজার গজ দূরে এসে তার বাহিনী অবস্থান নিলো।এমন সময় এক হরিণের দিকে তার নজর পড়লো।দেখে মনে হচ্ছিল,হরিণের পাগুলো রুপার,সিং সোনার,চোখ ইয়াকুত পাথরের।সাদ্দাদের শিকারের নেশা ছিল।বাহিনীকে থামতে বলে নিজেই রওয়ানা দিলো হরণটিকে ধরার জন্য।কিন্তু হরিণের দেখা আর মেলেনি।এক বিকট অশ্বারোহী তার পথরোধ করে দাঁড়াল।।যেইনা সাদ্দাদ তার বাহিনীর কাছ থেকে সরে এলো।অশ্বারোহী বলল, \" এই সুরম্য প্রাসাদ কি তোমাকে নিরাপদ রাখতে পারবে।\"সাদ্দাদ জিজ্ঞেস করলো, \"তুমি কে?\"\"আমি মালাকুল মউত,মৃত্যুর ফেরেশতা। \"\"এখানে কী চাও?\"\"এখনো বোঝনি।আমি তোমার জান কবজ করতে এসেছি।\"সাদ্দাদ নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইল।তার স্বপ্নপূরণ না করে চলে যেতে হবে?আমাকে অন্তত একবার আমার পরম সাধের বেহেশত দেখতে দাও?\"আযরাঈল (আ:) বললেন,\"আল্লাহর অনুমতি ছাড়া এক মূহূর্ত বাড়তি সময় তোমাকে দিতে পারবনা।আমার উপর নির্দেশ, এখুনি তোমার জান কবজ করা।\"\"তাহলে ঘোড়া থেকে নামি\"?\"না ঘোড়ায় থাকা অবস্থাতেই তোমার জান কবজ করতে হবে আমার।\"সাদ্দাদ এক পা মাটিতে রাখতে গেলে।কিন্তু সেটি মাটি স্পর্শ করার আগেই আযরাঈল (আ:) তার দেহপিঞ্জর থেকে আত্মা বের করে নিলেন।আর জিবরাঈল (আ:) প্রকণ্ড এক শব্দ করলেন।মূহূর্তে মারা গেল উপস্থিত সেনাবাহিনী। আর অসংখ্য ফেরেশতা এসে ধ্বংস করে দিয়ে গেল দুনিয়ার বেহেশত।পড়ে রইল ধ্বংস স্তুপ। ঃসমাপ্তঃ
0 Comments