ভালোবাসার গুচ্ছ কবিতা (সিরিজ- ২)
ভালোবাসার গুচ্ছ কবিতা (সিরিজ- ২)কবিতা- ১*মনের বীণায় সুর সাজালে* ♡হাতে হাত রেখে যখন বললে-\'পদচারণায় আজ শুকনো পাতার বুকে ঝড় তুলবো,বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ পেরিয়েপাখিডাকা কোলাহলে যাবো।\'-উচ্ছ্বাসের প্লাবনে তখন অনুক্ষণ সুখী ছিলাম,প্রতিটি মুহূর্ত কেটেছে আমারভালোলাগার সমুদ্রে অবগাহনে,তোমার কন্ঠের উষ্ণতায় আজ প্রাণ পেলাম।এ\' আমার মনের জলসায় সাজানোআজন্ম ভালোলাগার প্রতিচ্ছবি,কয়েক ফাগুনের চঞ্চলতায় নিড়ানো ফসল,ডালিম পাতার ফাঁকে ফাঁকেটুনটুনির নৃত্যে,লেজ উঁচিয়ে ভোরের উঠোনেদোয়েলের চষে বেড়ানোর ছন্দে,দুপুরের নির্জন পথেঘুঘু পাখির নিশ্চিত বিচরণে-এ\' ফসলের বীজ কুড়িয়েছি।এ\' আমার অপ্রকাশিত কবিতাআবৃত্তি করে তুমিএই মুহূর্তেমনের বীণায় সুর সাজালে। ♡কবিতা- ২*তোমার স্পর্শ পেলে* ♡বাম পাঁজরে স্পর্শ করোআহা! এত চঞ্চল হচ্ছো কেন?গভীরভাবে একটা নিঃশ্বাস ফেলো, তারপর-অতি সন্তর্পণে হৃদয়ের প্রতিধ্বনি শোন।শুনতে পাচ্ছো?শুনতে পাওনি এখনো?তাহলে আরেকটু কাছে এসোবুকে মাথা রাখো অতঃপর কান পাতো।যে সুর হৃদয়ে বাজছেসেটা তোমার দেয়া প্রথম স্পর্শের অনুভূতিশিহরণে শিহরণে রেখেছি এঁকেঝর্ণার শব্দ? ওটা তোমার হাসিতেই সৃষ্টি।তোমার দেয়া প্রতিটি মুহূর্তহৃদয়ের নীলে রোপন করেছি,স্মৃতির শিরা-উপশিরায় খোঁজে দেখোকেবল তোমার বসতি প্রিয়তমা তোমার বসতি।এইমাত্র যে নিঃশ্বাসটুকু ছেড়েছোওটাও আমি যতন করে রাখবো স্মৃতির গ্রন্থিতে,শতবর্ষ পরে যদি শুনতে চাওশুনতে পাবে; হৃদয়ের সরোবরে তোমার স্পর্শ পেলে। ♡কবিতা- ৩*তোমাকে কবিতা বলেই ডাকবো* ♡কবিতার কথা আছেকবিতার প্রাণ আছেকবিতার আছে কিছু নিজস্ব গল্পআজ থেকে তোমাকে কবিতা বলেই ডাকবো।কবিতার হৃদয় জুড়ে শুভ্র মেঘের বসবাসসোনালী রোদ্দুরের স্পর্শ থাকে প্রতিনিয়ত,তোমার হৃদয় সরোবরে দেবো ভালোবাসার নির্যাস-আর কবিতা বলেই তোমাকে ডাকবো।আজ থেকেউচ্ছ্বাসের সকল বিনম্র অনুভূতিপ্রোথিত করলাম তোমার নামেউষ্ণতায় কেবল হৃদয়ের উষ্ণতায় প্রাণ দিও তুমি।ভালোবাসার অংকুরপৃথিবীর সুখময় মুহূর্তের সাগরে অবগাহন করবে,কবিতার প্রাণ হবে আরো সজীবসজীব হবে ভালোবাসা প্রতিটি নিঃশ্বাসে।তুমি সোনালী রোদ্দুরের স্পর্শে ডাকবেহৃদয়ের সমুদ্র ছুঁয়ে তোমার কাছে আসবোভালোবাসা নেবে এবং উত্তাপ দেবেআমি তোমাকে কবিতা বলেই ডাকবো। ♡কবিতা- ৪*খুচরো সুখের সঞ্চয়* ♡প্রিয়তমা-যেদিন থেকে তুমিআমার খুব কাছের মানুষ হলেসেদিন থেকেই যাবতীয় খুচরো সুখ সঞ্চয় করছি।বলাতো যায় না-গগনের অনন্ত বুক থেকেশুভ্র মেঘ কখন উধাও হয়ে যায়,পাখিদের ধর্মঘট শুরু হতেইবা কতক্ষণপ্রেক্ষাপট সৃষ্টির কোন সীমাবদ্ধ ঋতু নেই।প্রিয়তমা-ইচ্ছে হয়হাজারটা চুমু খাই,তবু বাসনার বুকে আঘাত হেনেখুচরো সুখের সঞ্চয় বাক্স খুলেযা হয় কিছু রেখে দিই।সবইতো তোমার-আমারনিতান্ত একান্ত যদিও নয়তুমি এবং আমিইতো বিশ্বজগৎ,তুমি কি পারবে নাখুচরো সুখের সঞ্চয় বাক্সেতীব্রতার চরমসীমা লঙ্ঘন করে কিছু রাখতে? ♡কবিতা- ৫*প্রিয়তমা, তোমাকে দেখার পর* ♡প্রিয়তমা, তোমাকে দেখার পর-আমার মনের আকাশ রঙিন হয়ে গেছে,মন বাগানে খেলা করে বসন্তের এলো হাওয়া,পৃথিবীর সকল ফুল খুবই আপন আমার কাছে,মনে হয় সকল গান দোয়েল পাখির গাওয়া।প্রিয়তমা, তোমাকে দেখার পর-পূর্ণিমার রাত চাঁদের আলোয় ছাওয়া,সকাল-দুপুর-বিকেল কিংবা অন্য সকল বেলাতোমার মনের গহীন বনে চুপি চুপি যাওয়া,তুমি প্রিয়া মেঘ ডেকো না হবে শুধু মনকে নিয়ে খেলা।প্রিয়তমা, তোমাকে দেখার পর-মনের উঠোন অগোছালো শিউলি ফুলের মেলা,হৃদয় বাগান সেজেছে আজ লক্ষ গোলাপ এসে,পাখির ডানা ফিরছে ঘরে এখন গোধূলী বেলা,মনের আকাশ ওঠছে হেসে মেঘের কোলে ভেসে।প্রিয়তমা, তোমাকে দেখার পর-আমার সময় আমার কাছে তোমায় শুধু দেখা,রঙধনুর সাত রঙে তাই আমার স্বপ্ন বোনা,তুমি আছো আমার পাশে নইকো আমি একা,সকল সময় হচ্ছে আমার ভ্রমর-গান শোনা,ক্ষণে ক্ষণে প্রজাপতি দিচ্ছে আমায় দেখা।প্রিয়তমা, তোমাকে দেখার পর-বেঁধেছি আমার ঘর মনের ভেতরভ্রমর গানের সুরে,রাতের আকাশ তারায় ঢাকা তারার ভেতরতুমি থেকো আমার মনে এমনি করেআমি না-হয় ভেবেই যাবো পুরো জীবনভর! ♡কবিতা- ৬*স্পর্শ করেনি শুধু তোমাকে* ♡আলতো করে কান পাতোঠিক আমার বুকের মধ্যিখানেহ্যাঁ, ঠিক এইখানে-যেখানে বসত করে আমার মনপাখিডাকে তোমায় দিবানিশিতোমার নামে ঘুম কাতুরে।শুনতে পাচ্ছো?এইতো এখনই শতনামে তোমায় ডেকেছেমন ব্যাকুল করা ডাক,শুনতে পাচ্ছো?ডাকে এই ডাক প্রতিদিনইভোর সকালের ঘুম ভাঙানো সুরতবু হয় না কখনও প্রভাত।হে প্রিয়তমাএই বুকের মধ্যেমনপাখির ডাকে-সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়বিকেল আবার গভীর রাতে,এই ডাক ছুঁয়েছে আকাশপদ্মবিলে ফোটে থাকা পদ্মদলঝিঁঝিঁ পোকার ডাকশান্ত দুপুরের ঘুঘু পাখির মনস্পর্শ করেনি শুধু তোমাকে। ♡কবিতা- ৭*আমি চলে যাবো* ♡আমি চলে যাবোদূর গগনে নীল ছায়ার অতলে-জানি খুঁজবে তুমিচোখের জল চোখের কোণে ফেলে।এখনই যখননেইকো কোন সময় তোমারআমার দিকে তাকাবার,বৃথা ক্রন্দনপথের ধারে ঝরে পড়া গোলাপেরকিইবা বলো থাকে আর।আমি চলে যাবোশীতের আকাশে বড্ড অসময়েঅনিচ্ছেয় উড়া দুঃখী মেঘের কাছে,আমি ফিরবো না আর এখানেএই তোমার আঙিনায়তুমি নেই প্রিয়া, তুমি নেই, আমার সবই মিছে।আমি চলে যাবোসমুদ্রের নীল জলে আর ভুবন চিলেডানায় ডানায় দুঃখ ওড়াবো আরতোমার নামে পালক ছড়াবো,ঠিকানাহীন ঠিকানায়ভুবন চিলের ডানায়দুঃখহীন দুঃখের সাগরেঢেউয়ের বুকে পালক ভিজাবো।আমি ফিরতে জানিভিড়তে জানিআবার উড়তেও জানি,আর ফিরব নাআসবো নাতাকিয়ে থাকুক তোমার নয়নখানি।চলমান...আমি চলে যাবোদুঃখের নহর বুনে আকাশ ছোঁবআকাশের কোন তারাটি তোমার নামেসেটা আমি হাতে নেব,তোমার ডাকে কোন তারাটি নিভে-জ্বলেআমার নামে চুপটি থাকেসবকিছুরই হিসাব নেবতোমার আকাশ তোমায় দিয়ে চলে যাবো। ♡কবিতা- ৮*তোমার ডাকে* ♡তোমার ডাকে পাখি আমিদোয়েল সুরে গাই,তোমার ডাকে কৃষ্ণ আমিবাঁশি হাতে তাই।তোমার ডাকে মজনু আমিপ্রেমে পাগল বুদ,তোমার ডাকে নিত্য আমিবৃষ্টি কিংবা রোদ।তোমার ডাকে এইতো আছিতোমার কাছাকাছি,তোমার ডাকে আবার হচ্ছিপ্রেমে মাখামাখি! ♡কবিতা- ৯*ফেরিওয়ালা* ♡এই আছে? আছেনি?পুরান বই, খাতা, কাপড়-চোপড় ভাঙ্গা হাড়ি-পাতিল, লোহা-লক্কড়,আছেনি!পুরান মোবাইল, নষ্ট ল্যাপটপএই আছেনি? আছেনি?পুরান ভাঙ্গা-চোরা সব,ফেরিওয়ালা সবই নেয় হেঁকে ডেকে আমায় কেউ ডাকেনিছিল বুকের ভেতর পুরান কলরব!আমায় কেউ ডাকেনি কখনওনামটি আমার পড়েই রইলোডাকবিহীন বদ্ধ বাক্সে,এখনো চেয়ে আছিনামটি ধরে ডাকবে সেএখনো চেয়ে আছি কাছে এসে থাকবে সে!ডাকুক অথবা নাইবা ডাকুকদ্বারে দ্বারে ফেরিওয়ালা আসুকআমি ভিড়বো না আর যেচে,গোলাপের কুহু ডাকে অথবাহবো না কখনও নষ্ট জিনিসর\'বো আমি চিরজীবন যৌবনের কবি হেলাল হাফিজ! ♡কবিতা- ১০*ঠিক কবিতার মতো* ♡আমি চলে গেলেওআকাশের তারা সব ঝিকিমিকি করবেফুটবে ফুল সকাল বিকাল সন্ধ্যা রাতেপাখিরা ফিরবে নীড়েপৃথিবীর সকল কোলাহল জাগবে প্রতি ভোরেতুমিও বাঁচতে শিখবে নতুন করেশুধু আমার চোখে কেউ ভাববে নাএইতো জীবনআমি যাবো অথবা সে অথবা তুমি যাবে।আহা জীবন!কত সহজএকেবারে ফুল ফোটার মতো -বীজ, অঙ্কুর, চারা, গাছ, কলি, ফুল অথবা বীজরঙ, সৌন্দর্য, মৌমাছি অথচ ঝরবে তো! ♡♡♡
0 Comments